দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন থামছেই না। প্রায় প্রতিদিনই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পালস্নাও ভারী হচ্ছে। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ঢালাও দরপতন হয়েছে। ফলে কমেছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে এই বাজারটিতেও মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
এর আগে সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবস দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের লেনদেন খরা দেখা দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবার টানা দুই কার্যদিবস ৩০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয় ডিএসইতে। তবে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার বীমা ও বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর কল্যাণে লেনদেন কিছুটা বাড়বে। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকা কিছুটা বড় হয়। তবে পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি মূল্যসূচক।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। তবে অল্প সময়ের মধ্যে দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। এতে মূল্যসূচকও পজিটিভ হয়। লেনদেনের প্রথম আধঘণ্টা সূচকের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে।
কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে আবার পতন প্রবণতা দেখা দেয়। লেনদেনের সময় যত গড়াতে থাকে দাম কমার তালিকাও তত বড় হতে থাকে। লেনদেনের শেষদিকে পতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ফলে ঢালাও দরপতনের পাশাপাশি মূল্যসূচকের মোটামুটি বড় পতন দিয়েই শেষ হয় দিনের লেনদেন।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৫০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯১টির এবং ৫৮টির দাম অপরিবর্তীত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় প্রায় ছয়গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১২৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৮৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৪২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩০৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৭২ লাখ টাকার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ড্রাগন সোয়েটার।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, ওরিয়ন ইনফিউশন, সায়হাম কটন, ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশন এবং লাভেলো আইসক্রিম।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৯টির এবং ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে চার কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ছয় কোটি ৯৭ লাখ টাকা।