চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা সরকারি বহুমুখি মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খানকে মারধর করা আওয়ামীলীগ নেত্রী সামশাদ রানু ওরফে রাঙ্গা ভাবিকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে আলমডাঙ্গা পৌরসভার এরশাদপুর গ্রাম থেকে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সামশাদ রানু ওরফে রাঙ্গা ভাবী আলমডাঙ্গার এরশাদপুর গ্রামের জাহিদুল হায়দারের স্ত্রী। তিনি আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ কৃষক লীগ আলমডাঙ্গা পৌর শাখার একজন দাপুটে নেত্রী । চুয়াডাঙ্গা জেলা ও জেলার বাইরে ‘রাঙ্গা ভাবী’ নামেই তিনি বেশ পরিচিত।
বুধবার বিকেলে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান বাদি হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটক করে সামশাদ রানুকে। রাতে লিখিত অভিযোগের পেক্ষিতে মামলা দায়ের করেন। এরপরই সামশাদ রানুকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। ভুক্তোভোগী প্রধান শিক্ষক রবিউর ইসলাম খান বলেন, বুধবার সকালে বিদ্যালয়ের মধ্যেই সবার সামনে সামশাদ রানুর আমাকে লাঞ্চিত করেছেন। মারধর করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘৭ জুন বিদ্যালয়ের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধ বার্ষিকী পরিক্ষা নেয়া হচ্ছিল। একই দিন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সামষ্টিক মূল্যায়ন পরিক্ষার দিন ছিল। অর্ধ বার্ষিকী পরিক্ষার জন্য সামষ্টিক মূল্যায়ন পরিক্ষা নিতে দেরি হচ্ছিল। সেই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। এর মধ্যে সামশাদ রানুর ছেলে সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অর্ক ছিল। তার গায়ে রোদ লাগার কারণে আমি বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে আমাকে কলার চেপে ধরে টানতে টানতে বিদ্যালয়ের অফিস রুমে নিয়ে যান। আমাকে কিলঘুষি মারতে থাকে। তার পায়ের জুতা খুলেও মারধর করতে যায়। অন্যান্য শিক্ষকরা এগিয়ে আসলে জুতা দিয়ে মারতে পারেনি। আকস্মিক মারধরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমি বয়স্ক মানুষ। এমনিতেই শারিরীক দুর্বলতায় ভুগছি। পরিক্ষার শেষে আমি বাড়ি চলে আসি। বিষয়টি মোবাইলে ইউএনও স্যারকে জানায়। এরপর থানায় মামলা দায়ের করি।’
প্রত্যক্ষদর্শী বিদ্যলয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়ার হোসেন বলেন, ‘মহিলা নেত্রী সামশাদ রানু সকাল ৯টার পর বিদ্যালয়ে এসেছেন। ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে থাকা নিয়ে প্রধান শিক্ষককে জামার কলার চেপে ধরে ধাক্কা দিতে দিতে বিদ্যালয়ের অফিস রুমে আমাদের সামনে নিয়ে আসলেন। জুতা খুলে মারতে উদ্যোগ হলে আমরা ঠেকায়।’
অভিযুক্ত সামশাদ রানু বলেন, বিদ্যালয়ের কক্ষ না খোলায় আমার ছেলে সহ প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী সকাল ৯টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থান করছিল। তীব্র তাপদহে শিক্ষার্থীরা হাসফাস অবস্থা। সোয়া ১০টার পর প্রধান শিক্ষকের বিদ্যালয়ে আসলে আমি তার নিকট গিয়ে কক্ষের তালা খোলার কথা বলি। তিনি জানান, এই দায়িত্ব আমার না, সহকারি প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস ও কর্মচারি সিদ্দীকের। তিনি আমাকে উলটো বলেন, সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্যরা আপনাকে আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। আমি তার জবাবে বললাম আমি এখানে কোন নেত্রী হিসেবে না, আমি অবিভাবক হিসেবে এসেছি। এরপরই আমি তার জামার কলার চেপে ধরে টেনে নিয়ে "তালা খোল" বলে কক্ষের তালা খুলাইছি। তখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষক নেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখার সাধারণ স¤পাদক ইয়াকুব আলী বলেন, ‘এটা অত্যন্ত নেক্কারজনক ঘটনা। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সামশাদ রানু রাঙ্গা ভাবী’র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে সামশাদ রানুকে আটক করা হয়। রাতে মামলা দায়ের হলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।
যাযাদি/ এস