শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বিচারক এজলাসে লিখলেন হাত জোর করে দাড়াবেন না স্বাভাবিক থাকুন

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
  ২০ আগস্ট ২০২৩, ১৮:৫৭
বিচারক এজলাসে লিখলেন হাত জোর করে দাড়াবেন না স্বাভাবিক থাকুন

বিচারক তার এজলাসে বিবাদীদের উদ্দেশ্যে লিখছেন 'হাত জোড় করে দাড়াবেন না স্বাভাবিক থাকুন' একই সাথে তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে লিখছেন 'অনুগ্রহ করে মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন না।' বিচারকের এই মহতি লিখায় বিচার প্রার্থী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা আইনজীবিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। মুন্সীগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরান গত ১৬ই আগষ্ট বুধবার এ কথাগুলো লিখে তার সেরেস্তায় লাগিয়ে দেন। ১৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার যা মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্য ও আদালতে আসা বিচারপ্রাথী মানুষের দৃষ্টি গোচর হলে এ কথাগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার এই লিখা বিভিন্ন মানুষ ছড়িয়ে দিলে ওই বিচারককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্যালুট জানানো ও বাহবা দেওয়া হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি শহীদ-ই-হাসান তার ফেসবুকে পেইজে লিখেন, “আজ মুন্সীগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব ইফতি হাসান ইমরান -এর আদালতে দুটি লেখা চোখে পড়ল। তাঁর এজলাসের সামনে লিখা-"অনুগ্রহ করে মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন না।" আর "বিবাদী বা আসামির ডকে লিখা "হাতজোড় করে দাঁড়াবেন না। স্বাভাবিক থাকুন।" তাঁর এ উন্নত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ আমাকে বিমুগ্ধ করেছে। আড়াই শত বছরের বৃটিশ উপনিবেশিক সামন্তবাদী প্রথা তিনি তাঁর আদালতে ভেঙ্গে দিলেন।”

এই পোস্টের ৭৯টি কমেন্টে বিচারকের এই যুগান্তকারী কাজকে প্রায় সকলেই সেলুট জানিয়েছেন। মুন্সীগঞ্জ আইনজীবি সমিতির সদস্যরাও বিচারকের এই লিখাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবি অ্যাডভোকেট কাজী নজরুল ইসলাম অসীম বলেন, বিচারকের এমন মহতি লিখাটি আমার ভালো লেগেছে আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।

মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো.জাকারিয়া মোল্লা বলেন, বিচারক যে কথাগুলো আদালতে লিখেছেন কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিচারকের এই মহতি কথাগুলোতে আমি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, আমার দৃষ্টিকোন থেকে মনে হয়েছে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মহোদয় যেই উক্তিটি এখানে লিখেছেন সেটা একটা বিচার প্রাথীর জন্য ইতিবাচক। তাছাড়া বিচার প্রার্থীরা সাধারনত আদালতে প্রঙ্গনে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে সেই প্রেক্ষিতে আদালতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে সে এই লিখাটি যখন দেখবে তখন তার দৃষ্টিকোন থেকে বিচারকদের প্রতি আদালতের প্রতি সন্মান আরো বৃদ্ধি পাবে। ইহাতে জনগন বিচারকদের কাছ থেকে আশনরুপ সেবা পাবার আশা করবে। তদ্রুপ আমরা যারা বিজ্ঞ আদালতকে সহয়তা করে থাকি আমাদের কাছেও এ শব্দগুলো ইতিবাচক মনে হবে। জনসাধারণের জন্য একটি ভালো লক্ষন বলে আমি মনে করি।

এ ব্যপারে ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ সুমন ভূইয়া বলেন, স্যার ব্যাক্তিগতভাবে প্রছন্দ করেন না, কেউ হাতজোড় করে দাঁড়ালে তিনি হাত নামিয়ে দেন। তিনি বলেন, একজন বিচার প্রার্থী আমার কাছে আসছে বিচারের জন্য সে মাথানত করে রাখবে কেন। আমিতো আল্লাহ পাক বা খোদা না আদালতের কাছে সে বিচার চাইতে আসছে। তিনি আরো বলেন, এই বিষয়গুলো স্যারের ভালো লাগে না। এজন্য স্যার তার এই বক্তব্য লিখে দিয়েছে আমি এবং স্যার মিলে সেরেস্তায় লাগিয়ে দিয়েছি।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে