জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ময়মনসিংহ কার্যালয়ের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিজ জেলায় চাকুরীর প্রভাব কাটিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি সহ নানা অনিয়ম-দূর্নীতি করে যাচ্ছেন।
আব্দুল আউয়াল ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশ্রবপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ইং তারিখে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে নিজ জেলায় যোগদান করেন।
নিজ জেলায় যোগদানের পর থেকেই আব্দুল আউয়াল ব্যাপক দাপট দেখিয়ে আসছেন। বিভিন্ন উপজেলা অফিস থেকে পিওন ও অফিস সহকারীকে নিজ ক্ষমতা বলে বদলী করে এনে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। চাকুরী হারানোর ভয়ে নির্যাতন সহ্য করেও মুখ খুলতে পারে না এসকল পিওন ও কর্মচারীরা। এছাড়াও তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে ভাতিজার মাধ্যমে ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনা করারও অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায় মাসুদ মিয়া নামে এক পিওন নেত্রকোনার দূর্গাপুর উপজেলায় পদায়ন থাকলেও তাকে ডেপুটেশন দিয়ে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু মাসুদকে কখনো অফিসে পাওয়া যায়না।
সেখানে কর্মরত আমিনুল ইসলাম নামে এক নৈশ্য প্রহরী বলেন, 'মাসুদ অফিসে তেমন আসে না। সে স্যারের (তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল) বাসায় থাকে, সেখানেই কাজ করে। মাসুদকে খোঁজতে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল আউয়ালের সরকারি বাসবভনে গেলে সেখানে তাকে গৃহকর্মীর দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
অফিস সহকারী মাসুদের ডেপুটেশনের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দূর্গাপুর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফ উজ্জামান। তিনি জানান, মাসুদ মিয়া একটি প্রজেক্টের আওতায় চাকুরী করতেন। পরে রাজস্বের আওতায় আসে। মাসুদের পদায়ন দূর্গাপুরে থাকলেও প্রায় দেড় বছর আগে তাকে ডেপুটেশন দিয়ে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। দূর্গাপুর অফিসে আরও একজন পিওন আছে। তিনি আফিসের দায়িত্ব পালন করছেন।
চাঁন মিয়া নামে আরেক পিওন ধোবাউড়া উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। প্রায় এক বছর আগে তাকে বদলি করে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে নিয়ে আসেন আব্দুল আউয়াল। এখানে অফিসের কাজের পাশাপাশি তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল আউয়ালের ব্যক্তিগত কাজও করে থাকেন।
এ বিষয়ে অফিস পিওন চাঁন মিয়া বলেন, আমার বাড়ি ধোবাউড়া উপজেলায়। আগে পরিবারের সাথে বাড়িতে থেকে উপজেলায় অফিস করতাম। এক বছর আগে স্যার (তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল) বদলি করে এই অফিসে নিয়ে এসেছেন। এখন এখানে কাজ করি।
এদিকে আব্দুল আউয়ালের ভাতিজা পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার বাগিয়ে নিয়ে হুমায়ুন কবীর নামে এক ব্যক্তি ঠিকাদারি করছেন। তিনি নিজ নামের পাশাপাশি নূর ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলা সহ বিভিন্ন উপজেলায় কাজ করছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় এসকল টেন্ডারের কাজ আব্দুল আউয়াল তার ভাতিজার নাম ব্যবহার করে নিজেই করে থাকেন।
এ বিষয়ে হুমায়ুন কবিরের সাথে কথা বললে, প্রথমে তিনি বলেন আব্দুল আউয়াল নামে কাউকে চিনেনই না। পরে অবশ্য স্বীকার করেন তিনি তার এলাকার। সেই হিসেবে পরিচিত। হুমায়ুন কবির দাবি করেন তিনি ঠিকাদারি করেন না। নুর ট্রেডার্সের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কার্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত মেকানিকদের বদলির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় সহ নানা অভিযোগ তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে। নিজ জেলায় চাকুরী করার কারনে তিনি ব্যাপক প্রভাব খাটান সর্বক্ষেত্রে। সকল নির্যাতন সহ্য করেও মুখ খুলতে পারছেন না কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী এই নির্যাতন থেকে বাঁচতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
এ সকল অভিযোগের বিষয়ে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল আউয়ালের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই ধরনের কোন কাজ তিনি করেন না। এগুলো সব মিথ্যা অভিযোগ। তবে তিনি এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ বলেন, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেনি। তারপরও বিষয়গুলো নিয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব।
যাযাদি/এসএস