ফরিদপুর-৪ আসন। সারাদেশের মধ্যে একটি আলোচনা ও সমালোচনা মুখী নির্বাচনী আসন হিসাবে ধরা হয়েছিল। ফরিদপুর জেলার ৪টি সংসদীয় আসন থাকলেও এটি ছিলো নির্বাচনের কেন্দ্র বিন্দু হিসাবে। কারন হিসাবে এখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বতন্ত্র এমপি মজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তার বিপরীতে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার আওয়ামীলীগের কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের ঈগল প্রতীকের সাথে আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে। সংসদীয় আসনের এ নির্বাচনে নিক্সন চৌধুরীর কাছে কাজী জাফর উল্ল্যাহ পরাজিত হন। পর পর তিন বার পরাজিত হয়ে ও নিক্সন চৌধুরী তিন বার বিজয় লাভ করে উভয়েই হ্যাট্রিক করে। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক-১২৪০৬৬ ও ঈগল প্রতীক ১৪৮০৩৫ ভোট পায়। নৌকা ঈগল প্রতীকের নিকট ২৩৯৬৯ ভোটে পরাজিত হয়।
তিনটি উপজেলার মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলায় নৌকা-৭৬০০০,ঈগল-৭২৭৪২, সদরপুর উপজেলায় নৌকা-৩৬৬৬৯, ঈগল-৫৬৬১৭ ও চরভদ্রাসন উপজেলায় নৌকা-১১৩৯৭, ঈগল-১৮৬৭৬ ভোট পায়।
প্রসঙ্গত, মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী ওরফে এমপি নিক্সন। তিনি ২০১৪ সালে ফরিদপুর-৪ আসনে নৌকার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী কাজী জাফর উল্ল্যাহ কে পরাজিত করে। ওই সময়েই তিনি রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন। চমক হিসাবে প্রথম বারেই তিনি স্বতন্ত্র সংসদ প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হয়। তখন তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন না। ওই নির্বাচনে আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ কে মাত্র ২৭দিনের জনসংযোগের মাধ্যমেই জনগন নিক্সন চৌধুরী কে বিপুল ভোটে বিজয় করে জনগন কাজী জাফর উল্ল্যা’হর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে। জনগনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে মাত্র ২৭দিনের মাথায় তারুন্যদীপ্ত এ সংসদ সদস্যর স্বপ্নের বিজয় হয়। ওই নির্বাচনে সাধারন মানুষের সাথে ছিলেন না তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য আ’লীগের নেতারা। নির্বাচিত হয়ে নিক্সন চৌধুরী তৃনমৃল এলাকার রাস্তাঘাট, কালভার্ট, ব্রীজসহ নানামুখী উন্নয়নের কারনে পুরো চিত্রই পাল্টে দেন এলাকার। সাধারন মানুষ কে আপন করে নেওয়ার কারনে জনসাধারনের আস্তা ও বিশ্বাস। উন্নয়ন ও মূল্যায়নে আসে জনগন।
২০১৪ সাল থেকে ২০১৮সাল পর্যন্ত তুমুল উন্নয়ন ও জনগন কে মূল্যয়নের কারনে তিনি জনসাধারনের মধ্যে হয়ে ওঠেন এক জনপ্রিয় নেতা। তিন উপজেলার স্থানীয় রাজনীতি আ’লীগ থেকে একের পর এক নেতাকর্মীরা ভিড়তে থাকেন তার স্বতন্ত্র শিবিরে।
বিভিন্ন ভাবে জনগন কে সাথে নিয়ে দেখাতে থাকেন একের পর এক চমক। ফলশ্রুতিতে যে কারনে তিনি তুমুল মাঠের প্রতিযোগিতার মধ্যে আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ লাল কার্ড দেখিয়ে নিক্সন চৌধুরীকে ভোটাররা দ্বাদশ সংসদের টিকিট তুলে দেন। এমপি নিক্সনের যে কারনে বিজয় হিসাবে দেখা যায়, নোত-কর্মীদের উন্নয়ন ও মূল্যয়নঃ ফরিদপুর-৪ আসনের তারুন্যের অহংকার হিসাবে এলাকার যুবকসহ সব বসয়ী মানুষ ও নেতা কর্মীকে তিনি উন্নয়ন ও মূল্যয়ন করার জন্য হয়ে ওঠেন প্রিয় এমপি হিসাবে।
প্রসঙ্গত, সাধারণ মানুষ তাকে কাছে পেয়ে আত্মহারা হয়ে যান। পথে প্রান্তরে, মাঠে ময়দানে তার পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠার কারনে তিনি আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে ওঠেন। বলা চলে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই প্রথম গণমানুষের নেতা হিসাবে তাকে কাছে পেয়েছেন ফরিদপুর-৪ এর জনগন।
এরপর মহামারী করোনাঃ ২০১৮ সালের শেষের দিকে দেখা দেয় মরন ঘাতকব্যাধি মহামারী করোনা। মরনের এ থাবায় মাঠে ও সাধারন মানুষের পাশে দেখা যায়নি আ’লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ কে। জনগন ও আ’লীগের অনেক নেতার মধ্যেই তখন প্রচুর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিন্তু দুর্বিষহ সময়ে নিজের জীবন-বাজি রেখে ছুটে এসে তৃনমৃল মানুষের পাশে দাঁড়ান এমপি নিক্সন চৌধুরী। খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা সামগ্রী হিসাবে ওষুধ ও ফল পাঠিয়ে দেন করোনায় আক্রান্ত পরিবারের কাছে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি অস্থায়ী ক্যাম্প হিসাবে কয়েকটি কল সেন্টার চালু করেন। যে কল সেন্টারে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন দিলেই গোপনে চলে যেত বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী। স্বাস্থ্য বিধি মেনে সকল চলার জন্য অনুরোধ জানান। ওই সময় মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারতেন না। খাদ্যসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন থাকায় নিম্ম ও মধ্যম আয়ের পরিবারের মাঝে নেমে আসে চরম হতাশা। জনগনের কথা চিন্তা করে নিজে পায়ে হেটে জনগন কে আর্থিক সহযোগিতা করেন। তার শ্লোগান হিসাবে ছিলো আমি বেঁচে থাকলে আমার জনগন না খেয়ে মারা যাবেনা। দিন-রাত মানুষের সেবায় ব্যস্ত থাকেন। ফলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জনগন তাকে ভোট দিয়ে।
মাদকঃ এমপি নিক্সন চৌধুরী তার রাজনৈতিক বিভিন্ন সভাসমাবেশে বেশীর ভাগ সময়ই মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা বলতেন। যুব সমাজ কে মাদকের হাত থেকে রক্ষার জন্য মাদকের বিরুদ্ধে তিনি হুলিয়া জারি করেন। মাদকের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা নিতে কঠোর নির্দেশ দেন তিনি। সাধারন মানুষ কে আপন করে নেওয়াঃ এমপি নিক্সন চৌধুরীর যে দিক গুলো দৃশ্যমান হিসাবে দেখা যায়, তিনি বিভিন্ন বয়সী মানুষের সাথে খোলামেলা ভাবে মিশতেন। দিন মজুর, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষের কাঁধে বা হাত রেখে চলতেন পথে প্রান্তরে। প্রতিশোধ মূলক আচরন হিসেবেঃ ২০১৪ সালে বিজয় লাভ করার পর থেকে তিনি উন্নয়ন পাগল হিসাবে পথে প্রান্তরে, মাঠ, ময়দানে ঘুরে বেড়ান। তাকে যারা ভোট দেন নাই তাদের কে উন্নয়ন ও মূল্যয়ন করে কাছে ডেকে নিয়েছেন। প্রতিশোধের বিপরীতে তার স্বতন্ত্র শিবিরে নিয়ে তাদের কে কাজ দিয়ে এলাকার উন্নয়ন করার কারনে একের পর এক তার শিবিরে আসতে থাকেন আ’লীগ থেকে নেতাকর্মীরা। অপরদিকে, ফরিদপুর-৪ এর তিনটি উপজেলায় আ’লীগের জনগন সম্মৃক্ত থাকা নেতা, নেতৃত্বকারী কোনো নেতা বা কর্মীরা জাফর উল্লা’হর সাথে ছিলেন না।
এছাড়াও এলাকার ও আ’লীগের নেতা,কর্মীরা তার সাথে না থাকার কারনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
যাযাদি/ এম