সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১

গরম কমাতে চার টিপস   

ড. আসফাক আহমদ
  ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৯
ড. আসফাক আহমদ

ভূপৃষ্ঠের গরম তথা তাপের তীব্রতা কমাতে চার টিপস প্রদান করেছেন বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবেশবিদ ড. আসফাক আহমদ ।

অধ্যাপক আসফাক বলেন, বর্তমানে আমরা পরিবেশের এক বিপর্যয়ের সম্মুখিন। তীব্র তাপদহে পুড়ছে দেশ। পৃথিবীর ইতিহাস তথা সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে আমরা ধীরে ধীরে গরমের অবস্থার দিকে প্রবেশ করছি, প্রকৃতিকভাবে নিকট ভবিষ্যৎ এ শীতল পরিবেশ পাওয়ার আশা নাই (Milankovitch চক্র), পরবর্তী ৩০ হাজার বছরেও আর একটি বরফ যুগ আসার সম্ভবনা নাই। এছাড়া মানূষ্য সৃষ্ট বিভিন্ন গ্রীণহাউজ গ্যাসের কারনে প্রকৃতি আরও উষ্ণ হয়ে উঠছে। মারা উপর খড়ার ঘাঁ হিসেবে এবছর এল নিনো (El Nino) বছর, যার ফলে প্রকৃতি আরও উষ্ণ হচ্ছে।

গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশের তুলনায় শহরের ইট-পাথরের এই কৃত্রিম পরিবেশের কারণে আমরা আরও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য কিছূ সহজ কাজ করলে, কিছু উদ্দোগ গ্রহণ করলে, পদার্থ বিজ্ঞানের সাধারণ কিছু তত্ব অনুসরনে এই বিপর্যয়ের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার সম্ভবনা আছে। সম্ভাব্য এই চারটি সমন্বিত পদক্ষেপে পরিবেশ সংক্ষিপ্ত ও বৃহৎ পরিশরে পরিবেশ আমাদের জন্য সহনীয় হবে:

১) জলাশয় তৈরি করা :

শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাশয় তৈরী করা, এজন্য প্রতিটি থানা/ওয়ার্ডের পতিত, পরিত্যাক্ত বা সরকারী খাস জমি ব্যাহার করা যেতে পারে অথবা সরকার সুবিধামত জায়গা ব্যবহার করতে পারে। এটা আমরা সবাই জানি যে, পানির আপেক্ষিক তাপ মাটির তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশী বিধায় জলাশয়ের নিকটবর্তী এলাকা পাশ^বর্তী এলাকার তুলনায় শীতল থাকে। পানি আস্তে আস্তে তাপ শোষণ করে উত্তপ্ত হয়, তাপ ধরে রেখে পরিবেশকে শীতল রাখতে সহায়তা করে।

সুতরাং শহরের জলাশয় সৃষ্টি করে তাপ বৃদ্ধি রোধ করা সহজেই সম্ভব। আমরা যদি আজকে একটা জলাশয় তৈরী করি, তবে এর ফলাফল আমরা তাৎক্ষনিকভাবে পেতে পারি, কিন্তু বৃক্ষরোপন করে এ ফলাফল পেতে সময় বেশি লাগে।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমের মধ্যেও সমুদ্রের তীরে কিংবা কোন জলাশয়ের পাড়ে অবস্থান করলে তার ( পরিবেশ ঠান্ডা হওয়ার) প্রমাণ মেলে। আর বৃক্ষ রোপন করে তা থেকে ছায়া পেতে কয়েক বছর সময় লাগবে।

২) ঘরবাড়িতে সাদা রং করা :

আমরা জানি সূরে‌্যর আলো তাপের উৎস। আর সূরে‌্যর আলোয় বিভিন্ন বর্ণের আলোকণা রয়েছে। এ সূরে‌্যর আলো শোষণ করে কোন বস্তু তথা পরিবেশ গরম হয়ে থাকে। সাদা রং আমারা তখন দেখি যখন কোন বস্তু সূর্যালোর সাতটি বর্ণ কনিকার কোনটিই শোষণ না করার ফলে তার প্রতিফলন ঘটে। ক্ষেত্রবিশেষে শোষণ করলেও তার পরিমাণ কম। ফলে সাদা ঘরের দেয়াল তথা ঘর কম গরম হয়। আর যদি কোন বস্তু সবুজ রঙ করা হয় তাহলে সবুজ বর্ণের আলোকণা ছাড়া অন্যান্য বর্ণের আলোকণা শোষণ করে তাকে বেশি উত্তপ্ত করে। এ ক্ষেত্রে শুধু সবুজ বর্ণের কণিকা প্রতিফলিত হয় বিধায় আমারা বস্তুটি সবুজ বলে বুঝতে পারি। অন্য রংয়ের বস্তুর বেলায় ও একই ঘটনা ঘটছে।

আগে আমাদের দেশে বাড়িঘর সাদা রং (চুনকাম) করা হতো, আগে সাদা ছাড়া বর্তমানের মতো লাল, নীল,সবুজসহ বিভিন্ন রঙের ভবন দেখা যেত না। আমরা জানি, কোন একটা বস্তু তখনই সাদা দেখায় যখন সেটা সূরে‌্যর আলো শোষন না করে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত করে। ফলে আগের সাদা ঘড়গুলো আলো শোষন না করার কারণে তুলনামূলকভাবে শীতল থাকতো। বর্তমানের দৃষ্টিনন্দন রঙ্গিন বাসাবাড়িগুলো ঐ নির্দিষ্ট রং ব্যতিত সম্পূর্ন আলোক রশ্মি শোষণ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাত্রের বেলায় ধীরে ধীরে তাপ হারাচ্ছে, পরিবেশ উত্তপ্ত থাকছে এবং যার ফলে দিন-রাত্রের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসছে। আমাদের বাড়িঘড় সাদা কারার ব্যবস্থা আমরা খুব সহজেই অল্প খরচে কারতে পারি।

৩) ভবনের ছাদে সাদা রং করা :

আর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আমাদের বাসাবাড়ির ছাদগুলো সাদা রং করা, এটারও একই ফিলোশফি, ছাদ দিনের বেলায় সূরে‌্যর আলো শোষন না করে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত করবে, যা আমাদের বাড়িঘড় ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো সম্ভব। এই পদ্ধতি জড়ড়ভঃড়ঢ় যিরঃবহরহম নামে পরিচিত। এব্যাপারে আনেক গবেষণা হয়েছে এবং এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। নিউ ইয়র্ক শহরের বিল্ডিং কোডে ২০১২ সালে এটা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আমাদের দেশের বিল্ডিং কোডে এটা অন্তর্ভূক্ত করা দরকার এবং বর্তমানে যে বিল্ডিং আছে সেগুলোর ছাদও সাদা করা দরকার যা রাত্রেবেলা এমনকি দিনের বেলায়ও বিল্ডিং ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে এবং বিল্ডিং ঠান্ডা রাখতে প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত এনার্জি ব্যবহার কমাতে সাহায্য করবে।

৪) রাস্তার দুইপাশে বড় বড় বৃক্ষ লাগানো :

চতুর্থ যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার যার ব্যাপারে আমরা সবাই একমত, তবে পদ্ধতিগতভাবে মতোভিন্নতা আছে। অধ্যাপক আসফাক মনে করেন , রাস্তার দুইপাশে এবং বিভাজকগুলোতে বড় বড় বৃক্ষ লাগানো দরকার যা ছায়া প্রদানকারী হিসাবে কাজ করবে। এর উদাহরণের কোন অভাব নাই। বর্তমানে মৎস ভবন থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত সড়ক সবচেয়ে বড় উদাহরণ, এই তপ্ত দিনের যে কোনো সময়ে এই রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে খুব সহজেই এই বাস্তবতা বুঝে আসবে, এজন্য কোন বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নাই।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে