বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দাগনভূঁইয়ায় অরফেন্স সেন্টার স্কুলে নানান অনিয়মে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান 

অনিশ্চয়তায় প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী
ফেনী ও দাগনভুইয়া প্রতিনিধি
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:০৫
দাগনভূঁইয়ায় অরফেন্স সেন্টার স্কুলে নানান অনিয়মে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান 

ফেনীর দাগনভূঁইয়া পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়ন হাসানগনিপুর অরফ্যন্স সেন্টার স্কুলে চার সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে নিয়ে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ শঙ্কিত। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর নতুন শিক্ষক নিয়োগ ও বৈধকরণ জটিলতা, চাকরিরত শিক্ষকদের সাথে নতুন এডহক কমিটির মতপার্থক্য, রাজনৈতিক প্রভাব ও বাহিরে কমিটি নিয়ে গ্রুফিং লবিং এ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে রীতিমতো।

অন্যদিকে কমিটির পছন্দের শিক্ষক অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পাবেন, অন্যথায় সরিয়ে দিবেন,বলে বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে ক্রমান্বয়ে। এমতাবস্থায় স্বনামধন্য এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি অভিভাবকদের। অনিশ্চয়তার মধ্যে ভুগছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ প্রায় তিন শতাধিক অধ্যায়নরত স্কুল শিক্ষার্থী।

জানা যায়, গত বছর ২২ নভেম্বর বোর্ড থেকে অনুমোদিত এডহক কমিটিদের মধ্যে শিক্ষক প্রতিনিধি মো. ইলিয়াছ হোসেনকে না জানিয়ে সিল স্বাক্ষর জাল করে কুমিল্লা বোর্ডে পাঠান স্কুলের প্রধান ও সভাপতি। অথচ এসব বিষয়ে সাবেক সহকারী শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন কিছুই জানেন না বলে জানান।

অন্যদিকে অভিভাবক সদস্য রাম প্রশাদ চক্রবর্তীকে না জানিয়ে রাতে স্বাক্ষর আনেন প্রধান শিক্ষক। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক একক ক্ষমতাবলে রেজুলেশন বই, হাজিরা খাতা রাখেন নিজ ঘরে। কাউকে কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে খামখেয়ালিভাবে পরিচালনা করছেন দীর্ঘ ২ মাস বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। সভাপতি সোহেল আহমেদ হারুন ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজশে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন পুরাতন শিক্ষককে অন্যত্র চলে যেতে তারমধ্যে অনেকেই ১০/১২ বছর শিক্ষকতা করছেন এমপিওভূক্ত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এ বিদ্যালয়ে।

গত বছর অসদুপায় অবলম্বন করে প্রধান শিক্ষক একজনকে নিয়োগ দেয়া হলেও গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে তিনি পালিয়ে যান। এডহক কমিটির সভাপতি আভ্যন্তরিন বিষয়ে অশালীন আচার আচরণে ক্ষোভে ও শিক্ষকদের বেতন বোনাস দাবিতে গত বুধবার থেকে তারা ক্লাস করানো বন্ধ করে দেন। তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পর গত সোমবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ শিক্ষকদের আলাপ আলোচনায় আশ্বস্ত করলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যান। সভাপতি হারুনের নেতৃত্বে বহিরাগতদের হুমকিতে শিক্ষকগন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানালেও মুখ খুলেননি চাকুরি হারানোর ভয়ে। এমন খবর প্রচার হলেও লিখিত অভিযোগ দেননি কেউ। তবে গত বুধবার ৩১ জানুয়ারি শিক্ষক প্রতিনিধি মো. ইলিয়াস হোসেন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি পত্র প্রদান করেন। শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্য, আধিপত্য বিস্তার, শিক্ষার্থীদের মিথ্যা আশ্বাসে দাপটের সাথে পরিচালনা হচ্ছে অনিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা কার্যক্রম।

এ বিষয়ে সহকারি শিক্ষক শামীমা ইয়াছমিন জানান, দীর্ঘ ১২ বছর শিক্ষকতা করছি এ বিদ্যালয়ে এমপিও হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কিন্তু কমিটি থেকে অশোভন আচরণে আমরা হতাশ ও লজ্জিত। শিক্ষাক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি আমার বোধগম্য নয়।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার জানান, ২০২২ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হওয়ার পর পুরাতন কমিটি বাতিল করে এডহক কমিটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়েছে যা বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে। কমিটি যেভাবে স্কুল চালাবেন সেভাবে চলবে। এখানে ফাউন্ডারের কথা চলে না। এক্ষেত্রে শিক্ষক কেউ চলে যেতে চাইলে আমার করণীয় কিছু নেই। এডহক কমিটির সভাপতি সোহেল আহমেদ হারুনকে তার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মোবাইলে অনেকবার কল করা হলেও মোবাইল বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিজুল হক জানান, কয়েকমাস যাবত এ বিদ্যালয়ের ফাউন্ডার, এডহক কমিটি ও শিক্ষকদের নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকা থেকে সবকিছু বুঝতেছেন না। যদিও তিনি প্রতি মাসে শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করে আসছেন। সৃষ্ট চলমান সমস্যা নিয়ে ইউএনও ও কমিটির সমন্বয়ে বিদ্যালয়ে একটি সুন্দর পরিবেশ আশা করছি ফিরে আসবে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে