শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মেহেরপুরে ভোজন রসিকদের প্রিয় দুই কেজি ওজনের রসগোল্লা

গোলাম মোস্তফা, মেহেরপুর প্রতিনিধি
  ০৫ মার্চ ২০২৪, ১৩:০০
মেহেরপুরে ভোজন রসিকদের প্রিয় দুই কেজি ওজনের রসগোল্লা

রসগোল্লা। যে মিষ্টির নাম শুনলেই জিভে জল আসে। সেই আদিকাল থেকেই রসগোল্লা নিয়ে রচিত হয়েছে গল্প, নাটক ও লোককাহিনী। তবে এই রসগোল্লার গল্পটি একটু ভিন্ন। বাজারে সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের রসগোল্লা পাওয়া যায়। কিন্তু মেহেরপুরের মহিদুলের দোকানে তৈরি হয় ছোট থেকে দুই কেজি ওজনের রসগোল্লা। স্বাদ ও গন্ধে ভিন্নধর্মী এ রসগোল্লা খেতে ভোজন রসিকরা প্রতিদিনই তার দোকানে ভিড় করেন। কেউ বা পাঠান আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আবার অনেকেই পাঠান দেশের বাইরে।

মেহেরপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে শ্যামপুর বাজারের দক্ষিণে মহিদুলের মিষ্টির দোকান। দোকানে কাঁেচর সোকেচে থরে থরে সাজানো রয়েছে হরেক রকমের মিষ্টি। ছোট বড় সাইজের রসগোল্লা চম চম ছাড়াও রয়েছে আধা কেজি এক কেজি ও দুই কেজি ওজনের রসগোল্লা। দোকানের পেছনে রয়েছে তার মিষ্টি তৈরীর কারখানা। ছানা থেকে মিষ্টি তৈরীর যাবতীয় কাজ নিজ হাতেই করেন তিনি। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে মিষ্টি তৈরীর কাজ। আর বিকেল থেকেই শুরু হয় ভোজন রসিকদের আনাগোনা। চলে গভীর রাত পর্যন্ত বিকিকিনি। দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন তার তৈরী রসগোল্লা খেতে। অনেকেই আবার আত্মীয়তা করার জন্য বড় মাপের রসগোল্লা নিয়ে যান। কেউ কেউ পাঠান দেশের বাইরে।

মহিদুল ইসলাম যায়যায়দিনকে জানান, একযুগ আগে বাজারে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে এক মিষ্টির কারিগরের সাথে পরিচয় হয় মহিদুলের। তার কাছ থেকেই মিষ্টি তৈরীর কৌশলটি রপ্ত করেন তিনি। কিভাবে মিষ্টি তৈরি করে তা মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। দেখে দেখে মনে রাখতেন কোনটার পর কোনটা করতে হয়। ওখানে দেখতেন আর বাড়িতে এসে দুধের ছানা কিনে নিজে তৈরি করার চেষ্টা করতেন। প্রথমে ছোট আকারের রসগোল্লা তৈরী করলেও পরে দুই কেজি ওজনের রসগোল্লা তৈরী করতে থাকেন। তার ভিন্নধর্মী রসগোল্লা এলাকাতে প্রথম বলে দাবী করেন তিনি। ছোট হোক আর বড় হোক সব সাইজের রসগোল্লা প্রতি কেজি বিক্রি করেন ৩০০ টাকা দরে।

একবারেই প্রাকৃতিক উপায়ে রসগোল্লা তৈরি করেন মহিদুল। প্রথমে আধাঘণ্টা ধরে চিনি জ্বালিয়ে রস করার পর দুধের ছানার সঙ্গে যৎসামান্য এলাচ গুঁড়ো এবং রুলি ময়দা ভালোভাবে মিশিয়ে গোল্লা রসের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়। এভাবে দেড় ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় রসগোল্লা। বড় রসগোল্লা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পাঁচ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় অনেক দিন রাখা যায়।

মহিদুলের স্ত্রী নারগিছ জানান, মিষ্টির দোকানে কর্মচারীরা ঠিকমতো কাজ করে না। তাছাড়া নানা ধরনের ক্ষতি করার কারণে এখন কোন কর্মচারী রাখা হয় না। যারা এ কারখানাতে কাজ করতো সেই সব কর্মচারীরা এখান থেকে শিখে নিজেই দোকান দিয়েছে। তাই সন্তান সংসার সামলে স্বামীর মিষ্টি তৈরীতে সাহায্য করেন মহিদুলের স্ত্রী নারগিছ। একযুগ ধরেই তিনি মিষ্টি তৈরীতে সহগোগিতা করছেন। এতে অনেক স্বাচ্ছন্দবোধ করেন তিনি।

শ্যামপুরের তাওহীদ হাসান জানান, তিনি এক কেজি ওজনের দুইটি রসগোল্লার বায়না দিয়েছেন। তার ভাই ঢাকাতে চাকরী করেন। ইতালী থেকে তার ফ্যাক্টরীর মালিক আসবেন। তাকে আপ্যায়নের জন্য এই রসগোল্লা পাঠাবেন ঢাকাতে। এর আগেও ঢাকাসহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের কাছে রসগোল্লা পাঠিয়েছেন তিনি। সকলেই এর প্রশংসা করেছেন।

গাংনীর কুঞ্জনগরের মজনুর রহমান আকাশ যায়যায়দিনকে জানান, তিনি অনেক আগে থেকেই এই ব্যতিক্রমী রসগোল্লার নাম শুনেছেন। কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে রসগোল্লা খেয়ে নতুন আত্মীয়দের জন্য রসগোল্লা কিনেছেন। এ রসগোল্লা প্রশংসার দাবীদার বলেও জানান তিনি। একই কথা জানালেন হাড়াভাঙ্গা গ্রামের জুরাইস ইসলাম, মালসাদহ গ্রামের বাপ্পি ও গাংনী ভিটাপাড়ার আব্দুল আলিম।

শ্যামপুর বাজারের বিশিষ্ট ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ি মনিরুল ইসলাম যায়যায়দিনকে জানান , মহিদুলের বাবা একজন কৃষক। তার পরিবারের কেউ মিষ্টি তৈরী করে না। সেই ই প্রথম কারিগর। বাজারে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে সে মিষ্টি তৈরী শিখেছে। শুধু এই বাজারেই নয়, জেলা ও জেলার বাইরেও মহিদুলের রসগোল্লার সুনাম রয়েছে। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে লোকজন এখানে রসগোল্লা নিতে আসেন বলেও জানান তিনি।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে