মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চট্টগ্রামে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণে বর্ণাঢ্য আয়োজন

চট্টগ্রাম অফিস
  ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:২১
ছবি : যায়যায়দিন

ঈদের আমেজের মধ্যে চট্টগ্রামে বর্ষ বিদায় ও বরণে বরবারের মতো চলছে বর্ণাঢ্য আয়োজন। এর মধ্যে নগরীর চারটি স্থানে বড় আকারে বর্ষ বিদায়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। যা শেষ হবে আগামিকাল পহেলা বৈশাখ বরণের মধ্য দিয়ে।

এর মধ্যে-নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে শুরু হয় সিআরবির শিরীষতলায় সাড়ম্বর অনুষ্ঠান, ডিসি হিলে আয়োজন করে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ ও জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এর বাইরে চট্টগ্রাম মহানগরীর এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ মাঠে প্রথমবারের মতো পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত উদযাপন পরিষদ।

এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। যারা আবহমান বাংলার প্রাণ-প্রকৃতিকে নবতরূপে উপস্থাপনের সাড়ম্বর প্রয়াসে মিলিত হচ্ছে ঈদের ছুটিতে বন্ধ থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে।

শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০টায় চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হবে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে, নবতররূপে করি বাংলার বন্দনা।

শোভাযাত্রা নগরীর বাদশা মিয়া সড়ক থেকে চট্টেশ্বরী মোড়, আলমাস, কাজির দেউড়ি, জামালখান হয়ে সার্সন রোড দিয়ে আবার ক্যা¤পাসে ফিরবে। এরপর দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে।

শোভাযাত্রাকে রাঙিয়ে তুলতে নগরীর বাদশা মিঞা সড়কের চারুকলা ক্যা¤পাসে শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে বর্ণিল সব মুখোশ তৈরি আর রংতুলির আঁচড়ে চিরায়িত বাঙালি ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে দেখা যায়, চারুকলা ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের সামনের সড়কে ও পাহাড়ের প্রতিরোধ দেয়ালে কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে বিভিন্ন চিত্র আঁকছেন। সড়কেও আলপনা আঁকার প্রস্তুতি চলছে। শোভাযাত্রা জন্য ডামি ও মুখোশ তৈরি করছেন।

চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, পহেলা বৈশাখের কর্মযজ্ঞ রোববার সকাল পর্যন্ত চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় জীবজন্তুর প্রতিকৃতি রাখা হবে। থাকবে ইলিশের প্রতিকৃতিও। কাগজ আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বানানো হচ্ছে প্রতিকৃতি। শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পাবে। অশুভ শক্তি দূর করে নতুন বছরে নতুন আবাহনে সৌন্দর্য বরণের প্রত্যয়ে হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।

চবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী স্বপ্নিল ভট্টাচার্য্য জানান, বাংলা ও বাঙালির যে সংস্কৃতি সেটাকে ধারণ করে দেয়ালে ম্যুরাল আঁকা হচ্ছে। সেখানে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নকশী কাঁথার নানা চিত্র। শোভাযাত্রার জন্য হাতি ও মুরগির দুটি বড় ডামি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া পেঁচা, হাতি ও বাঘের একাধিক মুখোশ বানানো হয়েছে।

স্বপ্নিল বলেন, প্রকৃতির বৈচিত্রকে বাংলা এবং বাঙালির যে চিরন্তন সংস্কৃতি, সেটাকেই নবরূপে আবাহনের কথা আমরা এবার বলছি। আমাদের সার্বিক আয়োজনেও সেটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে। আমরা ম্যুরাল এঁকেছি, সেখানে নকশিকাঁথার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের মা-দাদিরা গ্রামে একসময় সেলাই করা কাঁথায় যেভাবে ফুল, ফল, হাতি, সাপসহ নানা প্রাণি এবং মানুষের অবয়ব ফুটিয়ে তুলতেন, সেটাই আমরা আবার মানুষের স্মরণে আনার চেষ্টা করেছি। মুখোশগুলোকে যতটা রঙিন করা যায়, সেটা করেছি। সকালে মুরগির ডাকে যে মানুষের ঘুম ভাঙে আর হাতির সঙ্গে গ্রামীণ জনপদের যে স¤পর্ক, সেটাকে ডামির মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।

চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী জানান, ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রা অশুভকে দূর করা, সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতীক। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালির ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিগত সব ধরনের বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয়।

তিনি জানান, সকাল ৯টায় ইনস্টিউটের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা উদ্বোধন করবেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেণু কুমার দে ও মো. সেকান্দর চৌধুরী এসময় উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া চবির সকল অনুষদের ডীন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বিশিষ্টজনেরা শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন।

এদিকে নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রামের সংগঠক কবি কামরুল হাসান বাদল জানান, সিআরবি শিরিষতলায় প্রতিবছরের মতো এবারও ১৩ এপ্রিল বাংলা বর্ষবিদায় এবং ১৪ এপ্রিল নববর্ষ বরণের আয়োজন করেছে। বর্ষবিদায়ের আয়োজন ১৩ এপ্রিল বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হয়েছে। চলবে সন্ধ্যা ৬টা কিংবা মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত। পহেলা বৈশাখে সকাল ৭টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, চট্টগ্রামের সংগঠক অনির্বাণ ভট্টাচার্য জানান, বর্ষবিদায়ের দিনে ১৩ এপ্রিল রাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ডিসি হিলের সামনে নন্দনকানন এলাকায় সড়কে আলপনা আঁকা হচ্ছে। পরদিন সকাল ৮টায় এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ মাঠে পহেলা বৈশাখের আয়োজন শুরু হবে। পরিষদের শিল্পীরা প্রথমে দুই ঘন্টা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। এরপর বিরতি দিয়ে দুপুর দু‘টায় আবার অনুষ্ঠান শুরু হবে। তখন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের পরিবেশনা নিয়ে থাকবে।

সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের পক্ষে সুচরিত দাশ খোকন জানান, প্রতিবছর বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের দু‘দিনের আয়োজন করলেও এবার তারা শুধুমাত্র পহেলা বৈশাখের আয়োজন করছে। পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৬টায় তাদের আয়োজন শুরু হবে। দুপুরে নামাজের বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫টার মধ্যে তাদের আয়োজন শেষ হবে।

এদিকে মঙ্গল শোভাযাত্রা সুন্দরভাবে স¤পন্ন করতে পুলিশ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছে। সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার সম্মুখ, মধ্য ও শেষ- তিনভাগে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পহেলা বৈশাখের আয়োজন নিয়ে দৃশ্যমান কোনো ঝুঁকি নেই। তবে সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই আমাদের সতর্কতা এবং প্রস্তুতি আছে।

এছাড়া বর্ণবরণ ও বর্ষবিদায়ের প্রতিটি ভেন্যুতে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। প্রতিটি ভেন্যুতে থানার সার্বক্ষণিক টিম ও মোবাইল টিম, ফুট পেট্রোল, চেকপোস্ট, সাদা পোশাকে পুলিশ, ডিবি টিম, সোয়াট টিম, কুইক রেসপন্স টিম, ডগ স্কোয়াড কে-নাইন ও বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট মোতায়েন থাকবে। এছাড়া পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হবে। প্রবেশপথে আর্চওয়ে থাকবে, মেটাল ডিটেক্টর দিয়েও তল্লাশি করা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রার সম্মুখ, মধ্য ও শেষ- তিনভাগে পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে সভায় জানানো হয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে