চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের দুর্ঘটনায় নিহত বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ রিফাতের লাশ সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে জানাযা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নানার কবরে সমাহিত করা হয়েছে। এর আগে বেলা এগারোটা পঞ্চাশ মিনিটে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টার যোগে মানিকগঞ্জ শহীদ মিরাজ তপন স্টেডিয়ামে আসিসের মরাদেহ আনা হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আজ শুক্রবার সকাল ১০টার পর থেকে বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদের লাশ এক নজর দেখতে স্বজনসহ শত শত মানুষ শহীদ মিরাজ তপন স্টেডিয়াম মাঠের চারপাশে অপেক্ষায় ছিলেন। এর আগে কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য বিমান বাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মাঠটি তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। বেলা সারে ১১ টার কিছু সময় পর স্বজনদের সঙ্গে গাড়ি যোগে কান্না কণ্ঠে উপস্থিত হন আসিস জাওয়াদের গর্বধারিনী মা নিলুফা খানম। বুকেরধন একমাত্র সন্তানকে কখন এক নজর দেখতে পাবেন সেই প্রলাপ বকতে থাকেন। ক্রীড়া সংস্থার অফিস রুমে ২০ মিনিট অপেক্ষার পর একমাত্র সন্তান নিথর দেহে হেলিকপ্টার যোগে আসে। বিমান বাহিনীর হেলিককপ্টর মাঠে অবতরণ করার পর পরই নিহতের বাবা মো. আমানউল্লাহ,নিহতের স্ত্রী অন্তরা এবং ছয় বছরের মেয়ে এবং এক বছরের ছেলে সন্তান, নিহতের শ্বশুর,নিহতের শাশুড়ী, শালিকা বিমান থেকে নেমে আসেন। এরপর নিহত আসিসের মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেন নিহতের স্ত্রী অন্তরা। এ সময় পুরো মাঠে এক হৃদয়বিধারকের সৃষ্টি হয়। এর ১০ মিনিট পর করা নিরপত্তায় বিমান বাহিনীর সদস্যরা লাশের কফিন বিমান থেকে নামিয়ে লাশবাহি এ্যাম্বুলেন্সে রাখেন। এসময় লাশবাহী গাড়ী ঘিরে ধরে কান্না করতে থাকেন আসিসের গর্বধারিনী মা। সন্তান হারা মাকে শান্তনা দিতে থাকেন বিমান বাহিনীর সদস্য,নিহতের আত্মীয় স্বজন।
এ সময় পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় বাদজুম্মা শহীদ মিরাজ তপন স্টেডিয়ামে আসিসের নামাজের জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।স্থানীয় কয়েকটি মসজিদে জানিয়ে দেওয়া হয় জানাযার সময় সুচি।
এরপর দুপুর একটার জুম্মার নামাজের পর স্থানীয় জেলা প্রশাসনের উর্দতন কর্মকর্তা,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সহ কয়েক হাজার মানুষ মানুষ মাঠে উপস্থিত হন।
নিহতের বড় খালু শামসুল ইসলাম বলেন,বিমান বাহিনীর হেড কোয়াটারে আসিস জাওয়ানের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিমান বাহিনীর উর্দতন কতৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আসিসকে ঢাকায় তাদের নিজস্ব কবরস্থানে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আসিসের মায়ের দাবি অনুযায়ী তাকে মানিকগঞ্জ সেওতা কবরস্থানে তার নানার কবস্থানে দাফন করা হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল বলেন, আমরা মনে করি আসিস মারা যাওয়ার ঘটনায় একটি নিখুত এবং সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিৎ। কিভাবে ,কি কি কারনে এমন একটা দুর্ঘটনা হলো। এটা আমরা জানতে চাই। জাতির সামনে সেটা যেন তদন্ত রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি নিহতের মা,স্ত্রী সন্তানেরা যেন সারাজীবন চলতে পারে তার একটা সঠিক ব্যবস্থা যেন সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়।
এরপর বেলা তিনটার সময় নিহত আসিসের নামাজের জানাযার পর মারাদেহ নেওয়া হয় সেওতা কবরস্থানে। সেখানে মরাদেহ কবরে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে বিমান বাহিনীর একটি চৌকুস দল তিনবার ফায়ারিং করে গার্ড অব অনার দিয়ে নানার কবরে আসিসের লাশ সমাহিত করা হয়।
যাযাদি/ এস