কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধপথে প্রতিদিন প্রায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের চিনি আসছে। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নয়নপুর এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে এ অবৈধ চিনি।
সেসব চিনি কুমিল্লা ও আশপাশের বিভিন্ন বাজার হয়ে ট্রাকে করে সাপ্তাহে ৩ বার প্রবেশ করে হাজীগঞ্জ বাজারে। যা বর্তমানে সিন্ডিকেট তৈরি করে হাজীগঞ্জ হলুদ পট্টীর রকিসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। অবৈধভাবে এসব চিনি আসায় সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, অন্যদিকে দেশের চিনি শিল্পে ঘটছে ব্যাপক ক্ষতি।
সরেজমিনে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাজীগঞ্জ হলুদ পট্টীর ৫/৭ সদস্য বিশিষ্টি একটি চোরা কারবারি চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে এসব চিনি ক্রয়-বিক্রয়। চক্রটি সাপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন পিকআপ ও ট্রাকে করে করে অবৈধ পথে নিয়ে আসা এসব ভারতীয় চিনি বিক্রয় করে যাচ্ছে। তবে ভারতীয় চিনি শাহরাস্তির ঠাকুর বাজারের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন পুরো চাঁদপুর জেলা নিয়ন্ত্রণ করছে। তার সাথে রয়েছে হাজীগঞ্জের একটি চক্র। কেউ তাদের ভয়ে কথা বলতে পারছে না।
অন্যদিকে দেশের বাজারের তুলনায় দাম কমে পাওয়ায় এ চিনির কারবার বেড়েই চলেছে এবং স্থানীয় বাজারসহ অধিকাংশ বাজারে ওই চিনিতে সয়লাব হয়ে গেছে বলে দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের। স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা বলছে, এতে এক শ্রেণির মানুষ লাভবান হলেও দেশীয় চিনিশিল্প হুমকির মুখে পড়ছে। সেই সঙ্গে দ্রুত এই চোরাচালান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিইচ্ছুক এক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, চোরা কারবারির প্রধান হলুদ পট্টীর ব্যবসায়ী আব্দুর রবের ছেলে রকি ভুয়া কাগজ তৈরি করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে ধোকা দিয়ে মূলত এসব চিনির বস্তা পরির্বতন করে বাজারে বিক্রি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারের চিনির তুলনায় ভারতীয় চিনির প্রতি বস্তায় ৫-৬ শত টাকা ব্যবধান হওয়ায় দেশীয় চিনি কেউ এখন আর কিনতে চায় না। কেউ কেউ আবার ভারতীয় চিনির বস্তা পরিবর্তন করে দেশীয় চিনি বলে বেশি দামে বিক্রয় করছে। মূলত প্রশাসনের কোনো ধরনের তৎপরতা না থাকায় বাজারে খোলামেলাই মিলছে এসব চিনি।
অভিযুক্ত চোরা কারবারি সিন্ডিকেটের প্রধান হলুদ পট্টীর রকি বলেন, ভারতীয় এসব চিনি আমরা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই করে থাকি।
বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা জানান, এসব চোরাকারবারিরা প্রশাসনসহ সর্বস্তরে মাসোহারা (মাসিক চাঁদা) দিয়েই এ অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় একাধীক সংবাদকর্মীও চোরকারবারীদের কাছ থেকে মাসোহারা (মাসিক চাঁদা) নিয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বাজারে চিনি আনতে গেলে ভারতীয় চিনি ছাড়া দেশীয় বা আমদানিকৃত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দোকানে বস্তা পরিবর্তন করে অন্য বস্তায় রেখে চিনি বিক্রি করছে। নিরুপায় হয়ে ভারতীয় চিনিই কিনতে হয়।
সম্প্রতি হাজীগঞ্জ থানায় একটি ট্রাক চিনি আটক করেছিলো পুলিশ। পরে বিভিন্নভাবে তদবির করে সে চিনি ছাড়িয়ে নেয়া হয়। হাজীগঞ্জ বাজারের কয়েকজন মুদি ব্যবসায়ী বলেন, ভারতীয় চিনি অধিক পরিমানে আসার কারণে আমাদের এলসির চিনি বিক্রয় কমে গেছে। গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীরা ২০/৩০ টাকা কম পেয়ে চোরাই পথে আসা অবৈধ ভারতীয় চিনি ক্রয় করছে।
এ বিষয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. নুর হোসেন বলেন, অবৈধপথে চিনি আনা বন্ধ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে চাঁদপুরের কয়েকটি স্থানে অভিযান পরিচালনা করে চিনি আটক করা হয়েছে। বিগত সময়ে বেশ কিছু দোকানিকে অবৈধ ভারতীয় চিনি রাখার দায়ে জরিমানা করা হয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি বিভিন্নভাবে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যাযাদি/ এসএম