বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভেজালের ভিড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে আশুলিয়ার খাঁটি আখের গুড়

আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৪৪
ভেজালের ভিড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে আশুলিয়ার খাঁটি আখের গুড়
ছবি: যায়যায়দিন

ঋতু পরিবর্তনের শুরুতেই ধীরে ধীরে বাড়ছে শীতের আমেজ। শীত এলেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য শুরু হয় পিঠা-পুলির মহোৎসব। পিঠা তৈরিতে আখের গুড়ের জুড়ি নেই। তবে ভেজাল গুড়ে সয়লাব যখন আশুলিয়ার হাটবাজার ঠিক তখনই জনপ্রিয়তা বেড়েছে শিমুলিয়ার সায়েদ আলী বেপারীর খাটি আখের গুড়ের। শুধু আশুলিয়া নয় এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের জেলাগুলোতেও। অনেকে আবার আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বাহিরেও। সাভার উপজেলা কৃষি অফিস বলছে আখ ক্ষেতের ব্যাকটেরিয়া বা কোন রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিনা তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। এছাড়া গুড় তৈরীতে কোন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় কি না সেটাও লক্ষ রাখছেন।

ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের শান্তিপাড়া এলাকায় খাটি আখের গুড় তৈরী করছেন মো: সায়েদ আলী নামের এক ব্যক্তি।

1

সায়েদ আলী বেপারী জানান, তিন বছর ধরে তিনি এখানেই আখের গুড় প্রস্তুত করছেন। এবার তিনি ১২০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছেন। এই আখ কেটে এনে তা মেশিনের মাধ্যমে রস সংগ্রহ করেন। পরে বড় আকাড়ের একটি লোহার কড়াইয়ে প্রাকৃতিকভাবে খড়-কুটো আর কাঠের লাকড়ি দিয়ে আগুনে জাল করা হয় রস। দীর্ঘ সময় আগুনে জাল করার পরে রস গাঢ় রং এলে মাটির পাত্রে এবং টিনের পাত্রে ঢেলে রাখা হয় এবং গুড় প্রস্তুত করা হয়।

তিনি জানান, মোট ৬ জন তার সাথে কাজ করছেন। গুড় কিনতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে আসেন। সেই সাথে এখন দেশের বাইরেও নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।

তিনি আরো জানান, গুড়ে কোন প্রকার ভেজাল মিশ্রত করা হয় না। তিনি ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি করে থেকেন। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। এবার তার আখ উৎপাদনে খরচ পড়েছে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ মৌসুমে তার কমপক্ষে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার মত গুড় বিক্রি হবে বলেও তিনি জানান।

পুরো গুড় প্রস্তুত করে থাকেন সিরাজ উদ্দিন। তিনি জানান, প্রথমে খেত থেকে আখ কেটে আটি করে রাখা হয়। পরে সেগুলো এনে মাড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়। এরপর মেশিনে মাড়াই করে রস বের করা হয়। এরপর টিনের ঝাড়ে ভরে রস লোহার কড়াইয়ে ঢালা হয় জাল করার জন্য। এরপর চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টার মত আগুনে জাল দেয়া হয়। ঘন এবং লালছে বা বাদামী রঙ হলেই মাটির পাত্র ও টিনে পাত্রে নামিয়ে নেয়া হয়। টিনের ঝাড়ে এবং মাটির হাড়িতে ভরে রেখে দেয়া হয় এক রাত। এরপর গুড় প্রস্তুত হয়ে যায়।

গাজীপুরের কাশিমপুর থেকে গুড় নিতে আসা হাফেজ মাওলানা হাবীবুল্লাহ জানান, এখানকার গুড়ের কথা লোকমূখে শুনে নিজ চোখে দেখতে এসেছেন এবং গুড় নিতে এসেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে ভেজাল গুড়ে সয়লাব বাজারগুলো। ভাল মানের গুড় পাওয়া যায় না। এখানে এসে গুড় প্রস্তুত করা দেখলাম এবং খেয়েও দেখলাম। বাসার জন্য ৫ কেজির একটা পাত্র নিয়ে যাবো। দামও বেশ কম।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলভীর রহমান জানান, আখের গুড় গ্রাম বাংলার একটি মুখরোচক খাবার। উৎপাদিত আখের গুড়ে ক্ষতিকর কোনো দ্রব্য মেশানো হচ্ছে কি না তা নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। আখ উৎপাদনের সময় কোন রোগ বালাই বা ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন কীটনাশক ঔষধ এবং ভালো ফলনের জন্য উন্নত মানের সার ও জৈব সার প্রয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয় চাষীদের।

তিনি জানান, আসন্ন রমজান ও শীত উপলক্ষে গুড়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই অনেক চাষী আখগুলো খুচরা বিক্রি না করে আখ ক্ষেতের পাশেই ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করে বিক্রি করছেন। এতে তারা অনেক লাভবান হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে