বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

লাকসামে মাদ্রাসা ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু!

লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
  ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:০৯
লাকসামে মাদ্রাসা ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু!
ছবি: যায়যায়দিন

কুমিল্লার লাকসামে এক মাদ্রাসা ছাত্রীর রহস‍্যজনক মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) এ খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ‍্যম ফেসবুকে। এতে তোলপাড় সৃষ্টি হয় গোটা এলাকা জুড়ে।

জানা গেছে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লাকসাম পৌরসভা সংলগ্ন এলাকার উত্তর লাকসাম ইকরা মহিলা মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া আক্তার (১২) মাদ্রাসা ভবনের পাঁচতলা থেকে পড়ে আহত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহত ছাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন‍্য ঢাকায় প্রেরণ করেন। ঘটনার একদিন পর শুক্রবার ঢাকার একটি হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মাদ্রাসা ছাত্রীর মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ‍্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে গোটা এলাকা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। নিহত ওই শিক্ষার্থী কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার নাগোদা গ্রামের প্রবাসী মিজানুর রহমানের মেয়ে।

নিহত ওই শিক্ষার্থীর লাশ ধানমন্ডি থানা পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় নিহত সামিয়ার মামা নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে শুক্রবার লাকসাম থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, লাকসামের পৌরসভা সড়কের উত্তর বাজারে অবস্থিত ইক্বরা মহিলা মাদ্রাসায় আবাসিকে থেকে ৭ম শ্রেনীতে লেখাপড়া করতেন সামিয়া আক্তার। ঈদের ছুটি শেষে সামিয়াকে মাদ্রাসার আবাসিকে রেখে যায় পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু আবাসিকে লেখাপড়া করতে অপারগতা প্রকাশ করে সামিয়া। এতে কেউ কর্ণপাত করেনি। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ তারা জানেন না। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।

মাদ্রাসার মোহতামিম জামাল হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে (৩ টার দিকে) আবাসিকের ওই শিক্ষার্থী মাদ্রাসার পাঁচ তলার জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নিচে পড়ে যায় এবং শরীরের একটি অংশ থেঁতলে যায়। ওই শিক্ষার্থীর আত্ম চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী আমেনা মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লায় ও পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে কোন রক্তপাত না হলেও ওই শিক্ষার্থীর শরীরের ডান পাশের অংশটি থেঁতলে যায়। ঘটনার পরদিন শুক্রবার দুপুরে ঢাকার ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ছাত্রী মৃত্যুবরণ করেন।

ঘটনার সংবাদ পেয়ে কুমিল্লা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ও লাকসাম সার্কেল অফিসার শোমেন মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এবং মাদ্রাসার প্রধানসহ শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেন।

এদিকে ইক্বরা মহিলা মাদ্রাসার মোহতামিম জামাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসেন পুলিশ। তবে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। লাকসাম থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় শুক্রবার লাকসাম থানায় একটি অপমৃত‍্যু মামলা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এর আগেও ওই মাদ্রাসায় মৃত্যুর ঘটনাসহ একাধিক ঘটনা ঘটেছে। যা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দোহাই দিয়ে নানাহভাবে ধামাচাপা দিয়ে এসেছে। একটা জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ১২ বছরের একটি মেয়ে পড়ে যাবে, এটি বিশ্বাস যোগ‍্য হতে পারেনা। এখানে হয়তো কোনো রহস‍্য লুকিয়ে রয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ‍্যমে রহস‍্য উদঘাটনের দাবি জানান তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, ওইসব মাদ্রাসাগুলোতে সরকারি নজরদারি না থাকার কারণে বারবার এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। সরকারের নজরদারি না থাকার ফলে ওইসব মাদ্রাসাগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

যাযাদি/ এমএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে