রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মানবিক হস্তক্ষেপে বদলে গেল ফতুল্লার প্রাণকেন্দ্রিক সড়কচিত্র

জাহাঙ্গীর আলম, বিশেষ প্রতিনিধি
  ০৩ মে ২০২৫, ১৬:৩৩
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মানবিক হস্তক্ষেপে বদলে গেল ফতুল্লার প্রাণকেন্দ্রিক সড়কচিত্র
ছবি: যায়যায়দিন

নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল এলাকা এলজিইডি কার্যালয় সংলগ্ন ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশ দিয়ে চলাচলকারী সড়কটি বিগত দেড় থেকে দুই বছর যাবৎ ছিল ভয়াবহ অবহেলিত। খানাখন্দে ভরা, বর্ষায় জলাবদ্ধ, শুকনো মৌসুমে ধুলায় আচ্ছন্ন সড়কটি দিনের পর দিন ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছিল। অথচ এই রাস্তাটিই প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের চলাচলের প্রধান মাধ্যম।

প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, পোশাক শ্রমিক, দিনমজুর, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। কেউ কেউ বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়েই অনেকে পা মচকেছেন, মোটরসাইকেল-রিকশা উল্টে গেছে, শিশুদের স্কুলে পৌঁছানো ছিল দুরূহ।” এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির দুরবস্থা নিয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হলেও কোনও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

এই অবস্থায় একঝাঁক সচেতন তরুণের নেতৃত্বে 'তারুণ্যের প্রতীক' নামক একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে মানবিক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার নিকট একটি লিখিত আবেদন প্রেরণ করা হয়। অনেকে ভেবেছিলেন, হয়ত এটিও হবে পূর্বের মতোই অনুত্তরিত; কিন্তু বাস্তবে ঘটল তার উল্টো।

জেলা প্রশাসক মুহূর্তেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নেন। তিনি সরেজমিনে সরাসরি পরিদর্শনের নির্দেশনা দেন এবং সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল ও এলজিইডি কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে অতি দ্রুত সড়কটি সংস্কারের নির্দেশ জারি করেন।

জেলা প্রশাসকের নির্দেশনার পর কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হয় সংস্কার কাজ। নতুন করে রাস্তা পুনঃনির্মাণ, ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নয়ন এবং পাশের ফুটপাথ সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হয়। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করে রাস্তাটি সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, “আগে বৃষ্টিতে দোকানের সামনে হাঁটু পানি দাঁড়িয়ে থাকত, এখন একফোঁটাও পানি জমে না। আমরা মনে করি, জেলা প্রশাসক শুধু একজন কর্মকর্তা নন, একজন সত্যিকারের অভিভাবক।”

সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষক, ব্যবসায়ী, এমনকি স্কুলগামী শিশুরাও আজ স্বস্তিতে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানে মানুষ কৃতজ্ঞতার সাথে বলছে— “জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা একজন মানবিক ও দূরদর্শী প্রশাসক, যিনি জনগণের পাশে থেকে কাজ করেন।” ক্যামব্রিয়ান স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, “আমরা দিনের পর দিন এই সমস্যার ভেতর দিয়ে গিয়েছি, কিন্তু জেলা প্রশাসকের একান্ত উদ্যোগ না থাকলে আজও এই রাস্তা ঠিক হতো না।”

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জেলা প্রশাসক যে উন্নয়নভিত্তিক ও পরিবেশবান্ধব নারায়ণগঞ্জ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন, এই সড়ক সংস্কার তারই একটি প্রমাণ। ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ প্রকল্পের আওতায় শহরের সৌন্দর্য ও নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির এই উদ্যোগকে এলাকাবাসী এক প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।

প্রশাসনের সদিচ্ছা ও নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ মিললেই সম্ভব একটি পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও মানবিক শহর গড়ে তোলা। ফতুল্লার এই সড়ক সংস্কারের উদাহরণই প্রমাণ করে, জনগণের পাশে থাকলে প্রশাসনের কাছে অসম্ভব কিছু নয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে