মোদি সরকার ভারত থেকে মুসলিমদের বিতাড়িত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। দিনের পর দিন না খাইয়ে রেখে আটককৃতদের উপর চালানো হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন।
স্ত্রী - সন্তানদের আটকে রেখে পুরুষদের রাতের অন্ধকারে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে। গত ৯ মে শুক্রবার ভোরের দিকে ভারতের বিএসএফ ৭৮ জন মুসলিমকে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ফেলে রেখে যায় । বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় লঞ্চ যোগে এনে ফেলে রাখা এসব অসহায়দের উদ্ধার করেন সুন্দরবনের কোস্টগার্ডের সদস্যরা।
এরপর রোববার শ্যামনগর থানায় তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়। উদ্ধারকৃতদের বর্তমানে শ্যামনগর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে রেখে চিকিৎসাসেবাসহ খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে।
এরা হলেন- মোঃ আবু হেলাল (৩৯) সাতক্ষীরা,সাইফুল মোল্লা (২৭ ) নড়াইল,আবু বক্কর (২২) নড়াইল, নিয়ামত শেখ (৩১) যশোর, বরকত মোল্লা (৪০) হাবিবুর রহমান(৫৭) নড়াইল, সজিব(১৯) ঢাকা, সিফাত উল্লা (২৩) নড়াইল,সোয়েল সিকদার (২৪) নড়াইল, নূর মোহাম্মদ (২৮) নড়াইল, সেকেন্দার ফরাজি(৪০) নড়াইল, রমজান আলী (৩৭) নড়াইল, অনিক শেখ (৩০)নড়াইল, সোয়েল শেখ (৩৫) নড়াইল, পলাশ ( ৩০) নড়াইল, রউফ শেখ (৭৬) নড়াইল, বাবু মোল্লা (৪৭) নড়াইল, আবজাল মৃধা (৩৫) নড়াইল, রাহাত মৃধা (১৭) , নড়াইল, নাসির মল্লিক (২৭) খুলনা, মহিদুল শেখ (২৪) খুলনা, শাখায়েত (৪০) খুলনা, নিহাব ফকির (৩৫) নড়াইল, আব্দুর রহমান শেখ (২৬) নড়াইল, ইকু শেখ (২২) নড়াইল, মিজানুর সরদার (৪৭) নড়াইল, খলিল শেখ (৬৫) নড়াইল, কুদ্দুস শিকদার ( ৬৬) নড়াইল, মিলন শেখ (৩২) নড়াইল, সোহাগ শেখ (১৯) নড়াইল, মান্নু শেখ (৫৫) নড়াইল, আলমগীর শেখ (৩০) নড়াইল, আবুল হাসান (২৩) হাবিবুর রহমান নড়াইল, রবিউল (৩০) নড়াইল, রফিক শেখ (২৮) খুলনা, জাকির মোল্লা (২৫) নড়াইল, শরিফুল (২৪) ইরান মোল্লা নড়াইল, সাব্বির শেখ (১৯) নড়াইল, টিপু মোল্লা (২৪) নড়াইল, ইনামুল মোল্লা (২০) আল আমিন শেখ (২০) বাদশা মোল্রা খুলনা, শাহিন (৪৩) নড়াইল,সাজিদ(৪৪) নড়াইল, শিমুল মোল্লা (২৮) মনির শেখ (৬৫)মোসা শেখ (২০) মুস্তাইন শেখ (২৩) জাহিদুল মোল্লা (২০) আল আমিন (২৫) শরিয়তপুর, সম্রাট শেখ (৩২),সজীব মল্লিক (২২), জাহিদুল শেখ (৪৬), ইবাদুল (৪০),ইমরান হোসেন (৫৬), জাহিদ শেখ (৪০), আখতার শেখ (৩৫), ইরাফ মীর(৩৮), হরুন শেখ (৫৪), রোশ্মান মোল্লা (২৯), হবুর শেখ (২১), বাদশা শেখ (৩০), লিটন শেখ (৫০), আব্দুর রহিম শেখ (২৫), ওসমান সিকদার ৩০), হাফিজুর সিকদার (৫০), করিম শেখ (২২),আফজাল শেখ ৫৫), আবু খায়ের মোল্লা (২৯), ফুরাদ শেখ (৩৫), শরিফুল সরদার (২৬),ওসমান মোল্লা (২৭), আমানত হোসেন (৩৫), সামির সরদার (২৪), শেখ শওকত (২২), সাইফুল শেখ (১৯),হাসান শাহ (২৪) ও আব্দুর রহমান (২০)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ। কারো কারো শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আছে। একজনের হাত ভাঙা। বেশির ভাগই কয়েক দিন না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। কয়েকজন জানিয়েছেন, ১৫ দিন পর এই প্রথম থানায় এসে তারা ভাত খেতে পেরেছেন।
বন বিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ক্যাম্প থেকে তাঁকে জানানো হয়েছিল, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা কয়েক দিন না খেয়ে থাকার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাত ভেঙে গেছে। আরো কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় খাবার, স্যালাইন ও পানি নিয়ে তিনি সেখানে পৌঁছান।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাধবপাশা গ্রামের হারুন শেখ সাংবাদিকদের জানান, ৩৭/৩৮ বছর ধরে তিনি ভারতে ভাঙারির ব্যবসা করতেন । থাকতেন আহমেদাবাদের সুরাট বস্তিতে। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ আসা-যাওয়া করতেন। গত ২৬ এপ্রিল দেশটির ক্রাইম পুলিশ বস্তিতে বসবাসকারী ৫০০-৬০০ জনকে আটক করে। এ সময় তাঁদের সামনে বছরের পর বছর ধরে থেকে আসা বস্তিটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁদের একটি পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর নারী, পুরুষ ও শিশুদের আলাদা করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে। এরমধ্যে ৭৮ জনকে একটি দলে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে চোখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। তাঁদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। কোনো রকম বেঁচে থাকার মতো দেওয়া হতো একটি রুটি ও পানি। কখনো দুটি বিস্কুট। গত ৬ মে তাঁদের চোখ বেঁধে আহমেদাবাদ থেকে প্লেনে করে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বিপরীতে ভারতের সন্দেশখালীতে। সেখানে সারা দিন রাখার পর আবার চোখ বেঁধে একটি বড় লঞ্চে তুলে ৯ মে ভোর চারটার দিকে সুন্দরবনের গহিনে তাঁদের নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে সকাল ৯টার দিকে বন বিভাগের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা স্টেশনের মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পে আশ্রয় নেন তাঁরা।
এছাড়া,নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের হাসান শেখ, খুলনার তেরখাদা উপজেলার মোকামপুর এলাকার শাখায়েত মোল্যাসহ অনেকেই বলেছেন, কাজের সন্ধানে গুজরাটে গিয়েছিলেন তারা। বছরের পর বছর তারা সুরাট বস্তির বাসিন্দা ছিলেন। তাঁরা আরো জানান, তাঁদের ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও মা–বাবাদের সুরাট বস্তি থেকে পুলিশ কোথায় নিয়ে গেছে, সেটি তাঁরা জানেন না। তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। স্বজনদের সন্ধান চান তাঁরা।
এদিকে, কোস্টগার্ডের সদস্যরা ৭৮ জনের মধ্যে ৩ জনকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা হলেন আবদুর রহমান (২০), হাসান শাহ (২৪) ও সাইফুল শেখ (১৯)। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে তাঁদের পৈতৃক বাড়ি হলেও তাঁদের জন্ম হয়েছে গুজরাটের ওই বস্তিতে। তাঁদের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে ।