মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২
ইউএনও'র বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাত অভিযোগ

ঈদগাঁওয়ে জব্দকৃত ১৫৫ গরু মহিষ ছাড়  

ঈদগাঁও (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  ১৩ মে ২০২৫, ১১:০৪
আপডেট  : ১৩ মে ২০২৫, ১১:২২
ঈদগাঁওয়ে জব্দকৃত ১৫৫ গরু মহিষ ছাড়  
জব্দকৃত পশুগুলো ছেড়ে দেয়া হয়। ছবি: যায়যায়দিন

কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে জব্দকৃত কোটি টাকা মূল্যের পশু ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে ইউএনও'র বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ অপকর্মে দুই চেয়ারম্যান ও এক চিহ্নিত আওয়ামী দোসর জড়িত বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ৬ মে ঈদগাঁও গরু বাজার থেকে ১৫৫ টি গরু-মহিষ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে আনার অভিযোগে জব্দ করেন ঈদগাঁও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শারমিন সুলতানা‌।

1

পরে তিনি পশুগুলো ঈদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিমের জিম্মায় দেন। পরদিন ব্যবসায়ীরা বৈধ কাগজপত্র দেখালেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা পশু গুলো ছাড়তে গড়িমসি শুরু করেন।

গত বুধবার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চিহ্নিত আওয়ামী দোসর যুবলীগ নেতা রমজানুল আলম পশু ব্যবসায়ী আজগর ও বাবুল সওদাগরকে জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর তাজ জনির কার্যালয়ে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ঈদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত ) আব্দুল হাকিমসহ অন্যরা। নানা দেনদরবারের পর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জব্দকৃত পশুগুলো ছাড়িয়ে নেয়ার আশ্বাস দেন তারা।

পরে দেনদরবার মত প্রায় অর্ধকোটি টাকা বুঝে পাওয়ার গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে ৯ মে শুক্রবার সন্ধ্যা রাতে জব্দকৃত পশুর ১৪১ টি ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে দিতে জিম্মাদার চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিমকে নির্দেশনা দেন ইউএনও বিমল চাকমা।

এক পর্যায়ে অবশিষ্ট ১৪ টি গরুর জন্য দাবিকৃত অতিরিক্ত টাকা দিলে ঐ পশু গুলোও ছেড়ে দেয়। জব্দকৃত এ পশুগুলো কিভাবে ছাড়া হল এ তথ্য উদঘাটন করতে গিয়েই রহস্য বেরিয়ে আসে ।

বাজার ইজারাদার আব্দুর রহিমের সাথে কথা হলে জানান, পশুগুলো জব্দের পর ইজারাদার হিসেবে বৈধ কাগজপত্র ইউএনও কার্যালয়ে সরবরাহ করেন।

ছাড়িয়ে নিতে বিশাল অঙ্কের লেনদেনের বিষয়ে তিনি জানেন না। পশু ব্যবসায়ী আজগর সওদাগরের কাছে অবৈধ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।

অপর পশু ব্যবসায়ী আমানু খুশবর কাছে একই বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষে আজগর ও বাবুল সওদাগরক দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল । তারা পশু ছাড় করতে কত টাকা লেনদেন করেছেন এখনো হিসাব দেননি। হিসাব দিলে বলতে পারবেন।

এসব পশু ছাড়ে অবৈধ মোটা অংকের টাকা কিভাবে, কার কার উপস্থিতিতে, কার কার জন্য নেয়া হয়েছে এর একাধিক অডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

উপরোক্ত অভিযোগের বিষয়ে জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর তাজ জনির সাথে কথা হলে তিনি অবৈধ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং হাটবাজার কমিটির সদস্য হিসেবে অন্যান্য চেয়ারম্যানের মত তিনিও ইউএনও'র সাথে কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ে উপস্থিত ছিলেন। পরে বৈধ কাগজপত্রের আলোকে পশুগুলো ছেড়ে দেয় উপজেলা প্রশাসন।

অভিযোগ উঠা ঈদগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হাকিমও অবৈধ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কাগজপত্র যাচাই করে শুক্রবার ১৪১ টি পশু ছেড়ে দেয়া হয়েছে । অবশিষ্ট ১৪ টি এখনো তার জিম্মায় রয়েছে দাবি করলেও উক্ত চৌদ্দটি পশুও একই সাথে দ্বিতীয় দফা টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ইসলামপুর ইউপির চেয়ারম্যান মৌলানা দেলোয়ার হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান,পশুগুলো বৈধ কিনা কাগজপত্র যাচাই করে বৈধতা পেয়ে ছেড়েছে উপজেলা প্রশাসন ।

অভিযুক্ত রমজানুল আলমের সাথে কথা হলে তিনি এ সংক্রান্ত কোন বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করলেও বৈঠকে উপস্থিত অন্যরা নিশ্চিত করেছেন এবং লেনদেনে সেই মধ্যস্থতা করেছেন।

অভিযোগ উঠা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমার সাথে কথা হলে তিনিও অবৈধ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে এ অভিযোগ শুনার পর তিনি খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা পাননি। পশুগুলোর কাগজপত্র হাটবাজার কমিটির সদস্য চেয়ারম্যানদের উপস্থিতিতে যাচাই করে ১৪১ টি পশু ছাড়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১৪ টি এখনো ঈদগাঁও চেয়ারম্যানের জিম্মায় রয়েছে দাবি করলেও ওই ১৪ টিও দ্বিতীয় দফা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একই সাথে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যার সত্যতা সংরক্ষিত অডিও ক্লিপে আছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী , ইজারাদার ও জনমনে প্রশ্ন, ইউএনও'র যোগসাজশে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ায় জড়িত চক্রটি পরিকল্পপিত ভাবে এসিল্যান্ডকে ব্যবহার করে সম্পুর্ন অন্যায়ভাবে ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।

ঈদগাঁওয়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সচেতন ব্যবসায়ীদের দাবি, একজন ইউএনও'র ছত্রছায়ায় যদি এভাবে কাগজপত্রে বৈধ পশু জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চক্র গজিয়ে উঠে, আগামীতে এতো উচ্চ মুল্যে রাজস্ব দিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ বাজার ইজারা কেউ নিবে না ।

ব্যবসায়ি ও ইজারাদাররা ঐতিহ্যবাহী এ বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আগামীতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবেন। তারা অবিলম্বে এ দূর্নীতিবাজ ইউএনওর অপসারণ দাবি করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

উপজেলায় প্রচার আছে বাজারটি ইজারা নেয়ার সময় ইউএনও বিমল চাকমার যোগসাজশে উক্ত চক্রটির দাবিকৃত মোটা অংকের দাবি পুরণ না করে সরকারকে ৭ কোটি টাকার অধিক রাজস্ব দিয়ে বাজারটি ইজারা নেয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ চক্রটি ইজারাদারের উপর ক্ষুদ্ধ ছিল। তাই ইউএনও'র পরিকল্পনায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে