সারাদেশ

নোয়াখালী জেলা শহরে দখল দূষণের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এক সময়ের প্রবাহমান খালগুলো। অন্যদিকে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা শহরের পানি নিষ্কাশনের কাজে আসছে না। যার কারণে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়া যেন নোয়াখালী শহরে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অর্ধশত বছরেও জলের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলছে না শহরবাসীর। এনিয়ে নোয়াখালী পৌরসভাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা শহরের পানি নিষ্কাশনে স্থায়িত্বশীল সমাধান দিতে পারছে না।

সরেজমিনে দেখা যায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত টানা ভারি বৃষ্টির কারণে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে জলাবদ্ধতা সমস্যা দেখা দিয়েছে। শহরের হাউজিং এষ্ট্রেট, মাস্টার পাড়া, খন্দকার পাড়া, লক্ষীনারায়পুর, মধুসূদনপুর, গুপ্তাঙ্গ সহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় পানি উঠে গেছে।

জেলা কারাগার সড়ক, জজকোর্ট-কোর্টবিল্ডিং সংযোগ সড়ক, মাইজদী পাবলিক কলেজ সড়ক, আল ফারু একাডেমি সড়ক, নোয়াখালী সাইন্স এন্ড কমার্স কলেজের সামনের সড়ক, মধুসূদনপুর সড়কসহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যার কারণে এসব সড়কে যানবাহন চালক ও পথচারীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। এছাড়া মাইজদী পৌর বাজার, মাইজদী বাজার, দত্তেরহাট বাজার, সোনাপুরসহ নোয়াখালীর পৌরসভার বিভিন্ন বাজারে জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েন ক্রেতা বিক্রেতারা।

নোয়াখালী শহরের নাইস গেস্ট হাউসের সত্বাধীকারী মো: শওকত আলী বলেন, জলাবদ্ধতা নোয়াখালী শহরের দীর্ঘদিনের সমস্যা। এর মূল কারণ হচ্ছে নোয়াখালী শহরটি মূলত ভাতের প্লেটের মতো। চারপাশের তুলনায় শহরটা নিচু হওয়ার কারণে ভারি বৃষ্টি হলে পানি নামতে পারেনা। দেখা দেয় জনদুর্ভোগ। এ সংকট মোকাবিলায় শহরের উপর নিয়ে যাওয়া ছাগলমারা খাল, বকশি খাল, ইসলামিয়া খালসহ শহরের উত্তরে বেগমগঞ্জের গাবুয়া খাল পর্যন্ত এবং দক্ষিণে

সেনাপুর খাল হয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আশপাশের সবগুলো সংযোগ খাল দখলমুক্ত করে পরিকল্পিতভাবে খনন করতে হবে যাতে খাল দিয়ে শহরের পানি বাধাহীনভাবে নদীতে পড়ে পারে। সেই সাথে নোয়াখালী পৌরসভার সবগুলো ড্রেন পরিকল্পিতভাবে পানি নামার উপযোগী করে তুলতে হবে যাতে ড্রেনের পানি বাধাহীনভাবে খালে পড়তে পারে। ড্রেনের মুখ নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে। এজন্য স্থানীয় লোকজন, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা সভা করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

মাইজদী হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মাওলা সুমন বলেন ,দ্রুত ড্রেন ও খালগুলো পরিস্কার করা না হলে সহজে জলাবদ্ধতা সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না শহরবাসীর।

শহরের মধুসূদনপুর এলাকার বাসিন্দা হাসিনা চৌধুরী বলেন, বর্ষার আগেই দুই দিনের বৃষ্টিতে শহরের পথঘাট সব ডুবে গেছে। খাল এবং ড্রেনগুলো পরিস্কার করা না হলে সামনে আরো ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

জেলা আওহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় জেলা শহর মাইজদীতে ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।