মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গোপালগঞ্জ পৌরসভা গ্রাহকের পানির চাহিদা মেটাতে পারছে না

এস এম নজরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ
  ০১ জুন ২০২৫, ১৫:১৪
গোপালগঞ্জ পৌরসভা গ্রাহকের পানির চাহিদা মেটাতে পারছে না
ছবি: যায়যায়দিন

আয়তন বেড়েছে, ওয়ার্ড সংখা বৃদ্ধি পেয়েছে, গ্রাহক বেড়েছে কয়েকগুন, সেই সাথে পৌরবাসীর পানির চাহিদাও বেড়েছে, বাড়েনি পানির নতুন কোন উৎস, স্থাপন হয়নি নতুন কোন প্লান্ট। যেকারনে পৌরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ পৌর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জ পৌরসভার পক্ষ থেকে নতুন প্লান্ট স্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে বার বার আবেদন করলেও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় গ্রাহকের পানির চাহিদা মেটাতে পারছে না।

তাছাড়া পানি শোধনাগারের সক্ষমতা হ্রাস এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে গোপালগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারছে না পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পৌরসভার প্লান্ট যে পরিমাণ শোধন করতে পারছে, তা কেবল চাহিদার শতকরা ২৫ ভাগ প‚রণের সমর্থ রয়েছে। এতে পৌরসভার বাসিন্দারা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন। গোপালগঞ্জ পৌরসভার পানি সৃবিদা বঞ্চিত গ্রাহকগন নতুন প্লান্ট স্থাপন করে পানির সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, দীর্ঘদিন যাবৎ একই প্ল্যান্টে পানি শোধন করায় প্ল্যান্টের পানি শোধনের সক্ষমতা কমেছে। ওই প্ল্যান্ট সংস্কার ও নতুন প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমেই কেবল এ সমস্যা নিরসন করা সম্ভব।

1

গোপালগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে পৌরসভার এলাকা বর্ধিত করা হয়। আগে পৌর এলাকার সীমানা ছিল ১৩ দশমিক ৮২ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৩০ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটার। পৌরসভায় বর্তমান জনসংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার ৪৫০ জন। বর্তমানে পৌর এলাকায় ৯ হাজার ৯০০ পরিবারে পানির সংযোগ আছে। এই গ্রাহকদের প্রতিদিন চারটি প্ল্যান্টের মাধ্যমে শোধন করে প্রতিদিন ১৩-১৪ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে। পৌরবাসীর প্রতিদিন পানির চাহিদা ৬০ মিলিয়ন লিটার, কিন্তু বর্তমানে পৌরসভা কেবল চাহিদার শতকরা ২৫ ভাগ প‚রণে সমর্থ রয়েছে।

পৌরসভার শিশুবন এলাকায় প্রধান দুটি পানি শোধনাগার রয়েছে। একটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০০-২০০১ সালে, অন্য প্ল্যান্টটি ২০১৯-২০২০ সালে স্থাপন করে। শুরুতে প্রথম প্ল্যান্টের পানি শোধনের সক্ষমতা ছিল ৫৪০ ঘনমিটার/ঘণ্টা। বর্তমানে ওই প্ল্যান্টের পানি শোধনের সক্ষমতা ২৫০ থেকে ৩০০ ঘনমিটার/ঘণ্টায় নেমে এসেছে। দ্বিতীয় প্ল্যান্টটির পানি শোধন সক্ষমতা স্বাভাবিক থাকায় এটির ওপর চাপ বেশি পড়ছে। এছাড়া পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য একটি আয়রন রিমুভাল প্ল্যান্ট, সদর উপজেলার কাজুলিয়ার বিলে ভ‚গর্ভস্থ পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট ও মানিকহার এলাকায় মধুমতী নদী থেকে ভ‚পৃষ্ঠের পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে এসব প্ল্যান্ট থেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি শোধন করা যাচ্ছে না।

পৌরসভা স‚ত্রে আরও জানা যায়, ২০২৪ সালে প্রধান পানি সরবরাহ প্ল্যান্টের মেরামত ও সংস্কারে গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) জমা দেওয়া হয়। যা পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমোদন লাভ করলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দী হয়ে আছে। এ ছাড়া দুই বছর আগে একটি নতুন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিদল টুঙ্গিপাড়ার বর্ণি বাঁওড়ে সমীক্ষা যাচাই করে। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

শহরের মিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ হাবিবুর রহমান, রজবুল সরদার, গোহাটা বটতলার মাসুম শেখ, লাবু শেখ, নিলামাঠ এলাকার অনিমা রানী, হরিদাসপুরের মিন্টু মিয়া, চানমিয়া কাজীসহ আরো অনেকে অভিযোগ করে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে চাহিদামতো পানি পাইনা। মাত্র এক-দুই ঘণ্টার জন্য পানি পাই। এই সামান্য পানি দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটে না।

গোপালগঞ্জ পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী স্বরূপ বোস বলেন, পৌর এলাকায় বর্তমানে যে পরিমাণে পানির চাহিদা রয়েছে, পুরোনো প্ল্যান্টটি ২৪ ঘণ্টা বিরামহীনভাবে পরিচালনা করে শতকরা ২৫ ভাগ গ্রাহকের পানির চাহিদা প‚রণ করা সম্ভব। সংস্কার না করে এভাবে চললে প্ল্যান্টটি যেকোনো সময় নষ্ট হয়ে যাবে। পৌরসভায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে আমাদেরকে চরম বেকায়দায় পড়তে হবে।

গোপালগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, ‘প্রতিদিন নতুন নতুন সংযোগের জন্য আবেদন বাড়ছে। এর আগে প্ল্যান্টের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বর্ধিত এলাকায় নতুন পাইপলাইন সংযোগের লক্ষ্যে একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে। ডিপিপিটি এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত পেলে নতুন প্লান্ট স্থাপন ও চলমান প্লান্ট মেরামতের মাধ্যমে পৌরবাসীর পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

পৌরবাসীর পানির এই সমস্যা নিয়ে কথা বললে জেলা প্রশাসক মৃহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ২০২৪ সালে প্রধান পানি সরবরাহ প্ল্যান্টের মেরামত ও সংস্কারে গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) জমা দেওয়া আছে। এ ছাড়া দুই বছর আগে একটি নতুন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিদল টুঙ্গিপাড়ার বর্ণি বাঁওড়ে সমীক্ষা যাচাই করে। এসব বিষয় নিয়ে আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সচিব মহোদ্বয় ও প্লানিং কমিশনের ডিজির সাথে কথা বলেছি। আশা করছি দ্রুত এসব প্রকল্প অনুমোদন হয়ে গোপালগঞ্জ পৌরসভায় বাস্তবায়ন হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে