সারাদেশ

গত দুবছর ধরে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে ভুগছেন সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা নিতে আসা রোগীরা। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দেয়ায় হাসপাতালের বাইরে থেকে পানি এনে রোগী ও স্জনদের পান করতে হচ্ছে। গ্রাম থেকে আসা অসহায় ও হতদরিদ্র রোগীরা আর্থিক সংকটের পাশপাশি চিকিৎসা নিতে এসে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং এতে করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নলকূপ বিকল হওয়ায় এবং মেরামতের অভাবে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এতে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাহাদের স্বজনরা এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাধ্য হয়েই হাসপাতালের বাইরে গিয়ে প্রায় অর্ধ কিলো মিটার রাস্তা হেটে শান্তিগঞ্জ বাজারের দোকান থেকে মিনারেল ওয়াটার ও আশপাশের বসত বাড়ীর নলকূপের পানি আনতে হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি সংকটে কারণে দিনে ও রাতের বেলা অনেক রোগীকে বাথরুমের ট্যাপ ও হাত দোয়ার ভেসিন থেকে নোংরা পানি পান করতে হচ্ছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি থাকেন এবং প্রায় ২ থেকে ২শ ৫০ শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগী ও স্বজনদের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে হাসপাতালে রয়েছে মাত্র ১টি নলকূপ। তাও আবার বিকল হয়ে পড়ে আছে। মেরামত করতে উদ্যোগ নিচ্ছেন না হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

রবিবার(০১ জুন) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পূর্ব পার্শ্বে একটি সাবমার্সিবল গভীর নলকূপ রয়েছে। নলকূপের সাথে একটি পানির ট্যাঙ্কি রয়েছে। পানির ট্যাঙ্কির পাশে ৪টি পানির টেপ চুরি হওয়ায় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মেরামতের অভাবে নষ্ট অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যার ফলে অধিকাংশ রোগীরা আশপাশের বসত বাড়ীর টিউবওয়েল থেকে পানি সরবরাহ করছেন এখানকার রোগীর স্বজনরা। পাশপাশি সামর্থ্যবান রোগীরা বাজার থেকে বোতলজাত পনি কিনে খাচ্ছেন। অন্যদিকে অসচেতন রোগী ও তাদের স্বজনরা টয়লেটের পানির ট্যাপ থেকে ময়লা পানি পান করছেন। যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন এই এলাকার সাধারণ মানুষ।

আক্তাপাড়া গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন আলী আমজদ বলেন, ‘হাসপাতালে খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। বাইরের দোকান থেকে পানি আনতে হয়। আশপাশে নলকূপ নাই। তবে অধিকাংশ রোগীরা বাথরুমের ট্যাপ ও হাত দোয়ার ভেসিন থেকে প্লাস্টিকের বোতলে করে পানি নিয়ে পান করছেন।

হাসপাতালে আগত অধিকাংশ রোগীর স্বজনরা জানান, শান্তিগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের পাইপ লাইনে যে পানি আসছে, তাতে ময়লা থাকায় তা পানের অযোগ্য। দীর্ঘদিন হলেও পানির ট্যাঙ্কি পরিস্কার করা হচ্ছে না। তবে, সে পানি দিয়ে ধোয়া-মোছার কাজটি করছেন তারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হাসান জানান, আমাদের একটি নলকূপ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। একটি নতুন নলকূপের জন্য আবেদন করেছি, কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আমরা নতুন নলকূপটি পেয়ে যাবো।

সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন শরিফী বলেন, আপনার মাধ্যমে পানি সমস্যার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। সেবা নিতে আসা রোগীরা বিশুদ্ধ পানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারকে বলবো। তিনি যেন দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেন।