বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ক্রেতা না পেয়ে মাদরাসায় দান, ক্ষতিগ্রস্ত মওসুমী ব্যবসায়ীরা

পূর্বধলায় আরতদারদের সিন্ডিকেটের কবলে কোরবানীর পশুর চামড়া 

পূর্বধলা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি
  ১০ জুন ২০২৫, ১৩:৫৭
পূর্বধলায়  আরতদারদের সিন্ডিকেটের কবলে কোরবানীর পশুর চামড়া 
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোণার পূর্বধলায় এ বছরও আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারনে কোরবাণীর পশুর চামড়ার ন্যয্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বিক্রেতারা। উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে কোরবানাীর পশুর চামড়ার কোন ক্রেতা না থাকায় বিনামুল্যে চামড়া দিয়ে দিয়েছেন কোরবানী দাতারা।

এতে চামড়া বিক্রির টাকার হক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সমাজের অসহায় ও দু:স্থরা। সেই সাথে আড়তে চামড়া মুল্য কমিয়ে দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, লোকসান গুনতে হয়েছে মওসুমী ব্যসায়ীদের। মওসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারনে এমনটি হয়েছে বলে জানান।

1

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এম.এম.এ আব্দুল আওয়াল তালুকদার জানান, উপজেলায় এ বছর ১২ হাজার ৯শ ৯১টি পশু কোরবানী হয়েছে। তার মধ্যে ষাঁড়-বলদ ৮হাজার ৮টি, গাভী ২৫০টি, ছাগল ভেড়া রয়েছে ৪হাজার ৭৩৩টি।

ঈদের দিন বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মাঠ পর্যায়ে কোন চামড়ার ক্রেতা ছিল না বললেই চলে। উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের ধলা গ্রামের কোরবানী দাতা আব্দুল হেলিম জানান, চামড়ার ক্রেতা না থাকায় চামড়া ফ্রিতে মাদরাসায় দিয়ে দিয়েছি। ঘাগড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুল মোতালিব জানান ১লক্ষ টাকার উপরে দামের দুটি ষাঁড়ের চামড়া বিক্রি করেছি মাত্র ১,০০০ টাকায়।

এদিকে ঈদের দিন উপজেলা সদরে বিভিন্ন পয়েন্টে মওসুমী ব্যবসায়ীরা দিনের শুরুতে ৪শ থেকে ৫শ টাকা দরে চামড়া ক্রয় করছিলেন। এমন খবরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি টহলরত টিম জবাবদিহি চাইলে পরে তারা দাম বাড়িয়ে ৬শ থেকে ৭শ টাকার উপরে দামে চামড়া ক্রয় করেন।

উপজেলা সেহলা মাদরাসার শিক্ষক মাও: সিদ্দিকুর রহমান জানান, ঈদের দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ৭৭টি চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল।

তার মধ্যে ৫২টি ষাঁড় ও ২৫টি গাভী গরুর চামড়া ছিল। পরে মওসুমী ব্যবসায়ীর কাছে গড়ে ষাঁড়ের চামড়া ৬০০টাক ও গাভীর চামড়া ১৩০টাকা করে বিক্রি করেছি। তিনি আরও জানান, লবণ দিয়ে বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতারা বেশি দাম দিতে রাজী হন নি। চামড়ার মুল্য কম থাকায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

উপজেলার ধলা যাত্রাবাড়ী মাদরাসার শিক্ষক মাও: নুরুল আমিন জানান, এ বছর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯৪টি ষাঁড় ও ৪৯টি গাভী গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছি। পরে স্থানীয় পাইকারের কাছে গড়ে ৪৩৫ টাকা করে বিক্রি করেছি। এছাড়া খাসী ও ছাগলের চামড়ার ক্রেতা না থাকায় মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছে। নতুন নির্ধারিত মুল্য অনুযায়ী এ বছর ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গত বছরের তুলনায় ৫ টাকা বাড়ানো হয়।

ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা, আর ঢাকার বাইরে সর্বনি¤œ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকার নির্ধারিত মুল্য মাথায় রেখে চামড়া কিনতে গিয়ে ক্ষতির মাঝে পড়েছেন মওসুমী ব্যবসায়ীরা। আড়তদারগুলো সিন্ডিকেট করে উপযুক্ত দাম না দেওয়া তাদের মোটা অংকের লোকসান গুনতে হয়েছে।

পূর্বধলা বাজারের মওসুমী ব্যবসায়ী মো: মোজাম্মেল হক জানান কিছু লাভের আসায় তারা ১২জনে মিলে প্রায় ১২শর মত চামড়া কিনেছিলেন । পরে এসব চামড়া সম্ভুগঞ্জে আড়তদারের কাছে প্রায় ১লক্ষ টাকার উপরে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে। তিনি আরও জানান একটু কম দামে চামড়া ক্রয় করার দায়ে সেনাবাহিনীর লোকজন তাদের একজনকে পিটিয়েছে।

মওসুমী ব্যবসায়ী মো: নাসির জানান, তারা ৯জনে মিলে বিভিন্ন দামে প্রায় ৪০০ চামড়া ক্রয় করেছিলেন । যার সর্বোচ্চ মুল্য ছিল ৭৫০টাকা করে। পরে শম্ভুগঞ্জে নিয়ে ৪০ হাজার টাকা লোকসান দামে বিক্রি করতে হয়েছে। তিনি আরও জনান এ অবস্থার কারনে আগামীতে মওসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনা থেকে উৎসাহ হারাবে।

পূর্বধলা বাজারের ব্যবসায়ী, আব্দুল মোমেন জুয়েল জানান এক সময় একটি ষাঁড় গরুর চামড়া দাম ছিল ২ থেকে ৩হাজার (লবন বিহীন) টাকার উপরে।

বর্তমানে চামড়াজাত পন্যের দাম এই কয় বছরে কয়েকগুন বৃদ্ধি পেলেও কয়েক গুণ কমেছে চামড়ার দাম। বিষয়টা অদ্ভুদ লাগে। তিনি চামড়া বাজারে এসব কারসাজি ঠেকাতে বাণিজ্যমন্ত্রনালয়ের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজওয়ানা কবির জানান, চামড়া নিয়ে কারসাজি ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনিক তৎপরতা বিদ্যমান ছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে