শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জামাইয়ের ধাওয়ায় পালাল শ্বশুর, পা ভাঙলো দাদা শ্বশুরের

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
  ১১ জুন ২০২৫, ১৬:৪৬
জামাইয়ের ধাওয়ায় পালাল শ্বশুর, পা ভাঙলো দাদা শ্বশুরের
ছবি: যায়যায়দিন

বরগুনার বেতাগীতে আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাবে বাড়িতে আটকিয়ে শশুরকে মারধর ও দাদা শশুরের পা ভেঙ্গে দিয়েছে জামাই। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে রক্ষা পেলেন শশুর।

জানা গেছে, উপজেলার বেতাগী সদর ইউনিয়নের ভাগলের পাড় গ্রামের নুরু মৃধার পুত্র মো. মামুন মৃধার সাথে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার পালট গ্রামের এনামুল হক হকের মেয়ে হৃদির সাথে এক বছর আগে বিবাহ হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্ত্রীর উপর নির্যাতন শুরু করে মামুন মৃধা এবং দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে।

1

এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও কথার কাটাকাটি হয়, এমনকি মামুন তার স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময় শারীরিকভাবেও নির্যাতন করতো। যৌতুক না দেওয়ায় বিগত ৪ মাস স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে যেতে দেয়নি।

এ অবস্থায় স্ত্রী হৃদির বাবা আলহাজ্ব এনামুল হক তার চাচা সারোয়ার হাওলাদারকে নিয়ে মঙ্গলবার (১০জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় জামাই বাড়িতে যান। বাড়িতে আসার পর জামাই মামুন মৃধা শ্বশুরকে সাব জানিয়ে দেয় মেয়েকে নিতে হলে এখান থেকে তালাক ও স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়ে নিতে হবে, তা না হলে নেওয়া যাবে না।

শশুর এনামুল হক এ কথার প্রতিবাদ করলে মামুন ও তার বড় ভাই স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বাদশার নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করে। মামুন তার শশুর এবং স্ত্রীকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে শশুর এনামুল হক তার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। কিন্তু এনামুলের চাচা সারোয়ার হাওলাদারকে বাড়িতে আটকে বেদমভাবে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেয়।

এনামুল হক পালিয়ে আসার পর বেতাগী থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক সারোয়ার হাওলাদারকে উদ্ধার করে। পরে মারাত্মকভাবে আহত সরোয়ার হাওলাদারকে (৫৫) বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

স্ত্রী হৃদি বলেন, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই আমার কাছে ২ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলো। মাদকাসক্ত আমার স্বামী যৌতুকের দাবিতে প্রায় দিনই রাতে বাইরে নিয়ে আমাকে দেশীয় অস্ত্র (রান্দা) দিয়ে পেটাতো এবং আমার বক্তব্য মোবাইলে ধারণ করতে চাইতো।

শশুর আলহাজ্ব এনামুল হক বলেন, আমার মেয়ের উপর জামাই মামুন ও তার পরিবারের লোকজন প্রতিনিয়তই যৌতুকের জন্য নির্যাতন করত। বিশেষ করে জামাইর বড় ভাই বাদশা স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় এত দিন ধরে প্রভাব খাটিয়ে আসছিলো। আমি জামাই বাড়ি যাওয়ার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে যাই। আল্লাহ হয়তো আমাকে ওই নামাজের উসিলায় জীবন রক্ষা করেছেন। আমার চাচার উপর নির্মমভাবে যে ধরনের আক্রমণ করা হয়েছে আমরা পালিয়ে না আসলে আমাদের জীবন আর রক্ষা হতো না। চাচার অবস্থাও গুরুতর।

যৌতুকের অভিযোগ অস্বীকার করে মামুন মৃধা বলেন, বিয়ের বেশ কিছুদিন পর থেকেই আমরা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে পারিবারিক কলহ চলে আসছে। ঐ দিন কাউকে মারধর কিংবা হামলার ঘটনা ঘটেনি। কথার কাটাকাটির সময় দাদা শশুর পা ফসকে পরে আহত হয় তাছাড়া আর কিছুই নয়।

বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মনিরুজ্জামান বলেন, জানার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। থানায় এখনো কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে