সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

ভেড়ামারায় ৯ মাসে কুরআন মুখস্থ করে হাফেজ ৭ বছরের মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
  ১৬ জুন ২০২৫, ১৩:০৬
ভেড়ামারায় ৯ মাসে কুরআন মুখস্থ করে হাফেজ ৭ বছরের মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ
হাফেজ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ

৭বছর বয়সী শিশু মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ৯মাসে সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়ীয়া ফায়ার সার্ভিস মোড়ে এলাকার মুফতি আব্দুল্লাহ বিন আমজাদের ছেলে।

1

তার এ কৃতিত্বে আত্মীয়-স্বজন,এলাকাবাসী, অভিভাবকসহ শিক্ষক-সহপাঠীরা আনন্দিত। দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তারা। নানি হাফেজা আলেমা রাবেয়া বসরীর কাছে পড়াশোনা করে হাফেজ হয়েছে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়ীয়া ফায়ার সার্ভিস মোড়ে এলাকার মুফতি আব্দুল্লাহ বিন আমজাদের ছেলে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ প্রথম শ্রেণির ছাত্র।

আব্দুল্লাহর মা, নানা ও নানি কুরআনের হাফেজ। এছাড়াও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে প্রায় ১২জন কুরআনের হাফেজ। মুহাম্মদ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হেফজ শুরু করে।

২০২৫ সালের মে মাসে হেফজ সম্পন্ন হয়। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় মুহাম্মাদ। মুহাম্মাদের মা হাফেজা আলেমা মাসুমা জান্নাত ও নানি হাফেজা আলেমা রাবেয়া বসরী সাতবাড়ীয়া ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশে অবস্থিত মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদ্রাসা পরিচালনা করেন।

তার নানা হাফেজ মাওলানা মুফতি গোলাম কিবরিয়া। মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ২০১৮ সালে জন্মগ্রহণ করে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সাড়ে ৫ বছর বয়সে একটি নুরানি মাদ্রাসায় প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক বছরের মধ্যে প্লে ও নার্সারি সম্পন্ন করে। এরপর কোরআন হেফজ করার জন্য নুরানি পড়াশোনা বন্ধ রাখা হয়। তার নানির কাছে হেফজ শুরু করে।

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহের নানি হাফেজা আলেমা রাবেয়া বসরী বলেন, ছোট্ট শিশু মুহাম্মাদের মেধা অসাধারণ। মনোযোগ সহকারে পড়লে যে কোনো জিনিস খুব দ্রুত মুখস্থ করে দিতে পারে। মাত্র ৯ মাসে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করে হাফেজের গৌরব অর্জন করেছে।

তাকে বিশ্বজয়ী হাফেজ হিসেবে দেখতে চাই। কুরআনের ধারক বাহক হিসেবে দেখতে চাই। সবাই মুহাম্মাদের জন্য দোয়া করবেন।

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহের মা হাফেজা আলেমা মাসুমা জান্নাত বলেন, আমার ছেলে মুহাম্মাদের বয়স যখন আড়াই মাস।

তখন সে আল্লাহ আল্লাহ বলা শিখে। ওর সর্বপ্রথম মুখের কথা ছিল আল্লাহ। তখন থেকে আমাদের আগ্রহ হয় যে, হেফজ পড়াবো, কোরআনের হাফেজ বানাবো। ওর বয়স যখন সাড়ে ৫ বছর, তখন ওকে আরবি কায়দা দেওয়া হয়। ৬ মাসের মধ্যে নাজেরা সম্পন্ন করানো হয়। এটা সম্পূর্ণ ওর নানির কাছে পড়ে। আমি তার পড়াটা রেডি করে দিতাম।

এরপর সে তার নানির কাছে গিয়ে শোনাতো। এরপর তাকে হেফজ সবক দেওয়া হয়। প্রথমের দিকে দুই পৃষ্ঠা করে সবক দিতো। তার মেধা আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো। এজন্য পরবর্তীতে পড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তিন পৃষ্ঠা করে সবক দেওয়া শুরু করা হয়। শেষের দিকে চার পৃষ্ঠা করে সবক দিতো। প্রতি মাসে চার পারা করে পড়তো। চার পারা করে পড়ে সম্পূর্ণ করার কারণে আল্লাহর রহমতে মাত্র ৯মাসে হাফেজ হয়ে যায়। শুক্রবারেও তার ছুটি ছিল না। শুক্রবারও সবক মুখস্থ করতো।

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বাবা মুফতি আব্দুল্লাহ বিন আমজাদ বলেন, আমার সন্তান মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহর বয়স ৭ বছর। সে ৯ মাসে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করেছে। পাশাপাশি পড়াশোনা করে পেছনের সকল সবকগুলো সম্পন্ন করেছে। এতো অল্প বয়সে ৯ মাসে কুরআন হেফজ করার বিষয়টি অনেকটা অলৌকিক ব্যাপার। মুহাম্মাদের মা ও নানি দুজনেই হাফেজা।

মুহাম্মাদের মা ৭ বছর বয়সে তার মায়ের কাছে হেফজ করেছে। মায়ের তুলনায় মুহাম্মাদ দুই মাস আগেই হেফজ সম্পন্ন করেছে। এর পেছনে যতটুকু শ্রম-অবদানসহ যা কিছু করার তার সবকিছু করেছেন তার নানি। পাশাপাশি তার মা যথেষ্ট অবদান রেখেছে। সাড়ে ৫ বছর বয়সে কায়দা শেষ করে। এরপর ৫ মাসে সম্পূর্ণ কুরআন নাজেরা সম্পন্ন করে। এরপর থেকে তার হেফজ শুরু হয়। মুহাম্মাদের নানির কঠোর অধ্যবসায়, চেষ্টা, পরিশ্রম ও দেখভালের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে মুহাম্মাদ হেফজ সম্পন্ন করেছে। সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।

৭ বছর বয়সী কুরআনের হাফেজ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বলেন, আমি কুরআনের ৫ লাইন করে মুখস্থ করতাম। যখন এক পৃষ্ঠা মুখস্থ হতো, তখন একবার রিভাইজ দিতাম। তারপর পরের পৃষ্ঠা মুখস্থ করতাম। ১০ থেকে ১১ মিনিটে এক পৃষ্ঠা মুখস্থ করে ফেলতাম। এভাবে প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা থেকে চার পৃষ্ঠা পর্যন্ত মুখস্থ করেছি। এভাবে ৯ মাসে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করে হেফজ সম্পন্ন করেছি। আমি আমার নানুমনির কাছে থেকে হাফেজ হয়েছি। আমার হাফেজ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান নানুর। এছাড়াও আমার আম্মুর অনেক অবদান রয়েছে।

আমার নানুমনি কুরআন মুখস্ত করিয়ে দিতেন ও পড়া আদায় করে নিতেন। শুক্রবার আমার আম্মু পড়া নিতেন। আমার নানুমনির অবদান সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়াও পরিবারের সকল সদস্যদের অবদান রয়েছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি একজন হাফেজ মাওলানা মুফতি হতে চাই। প্রতিদিন ফজরে নানুমনিকে সবক শোনাতাম। এরপরে সকাল সোয়া ৯টা পর্যন্ত ৭ সবক শোনাতাম।

এরপর দুই ঘণ্টা ঘুমানোর ছুটি। এরপর দুইটা পর্যন্ত আম্মুকে শোনাতাম। এরপর দুইটা থেকে এক ঘণ্টা খাওয়া ও গোসলের বিরতি। তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত পড়তাম। তারপর খেলাধুলা করতাম। মাগরিবের নামাজ আদায় করে আবারও সবক পড়া শুরু করতাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে