মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

নবীগঞ্জে চলন্তবাসে গার্মেন্টন্স কর্মী ধর্ষণের শিকার, পুলিশ সুপারের পরিদর্শন

নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৬ জুন ২০২৫, ২১:৩৮
নবীগঞ্জে চলন্তবাসে গার্মেন্টন্স কর্মী ধর্ষণের শিকার, পুলিশ সুপারের পরিদর্শন
ছবি: যায়যায়দিন

নবীগঞ্জে পৌর এলাকার সালামতপুর নামক স্থানে রবিবার দিবাগত রাতে চাঞ্চল্যকর জনৈক এক গার্মেন্টন্স কর্মী স্বামী পরিত্যক্তা গৃহবধু ধর্ষনের ঘটনায় সরজমিন পরিদর্শন করেছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ.এন.এম সাজেদুর রহমান।

এ ঘটনায় ধর্ষক বাস চালক ছাব্বির মিয়া (২৫), হেলপার লিটন মিয়া (২৬)কে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০,৯(৩) ধারায় ধর্ষিতা বাদী হয়ে মামলা নং-০৯/২৫ইং দায়ের হয়েছে। ধৃত ছাব্বিরকে সোমবার দুপুরে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। ধর্ষিতা গার্মেন্টন্স কর্মী গৃহবধু (স্বামী পরিত্যক্তা)কে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর ধর্ষক লিটন মিয়া পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

1

মামলা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সারাং বাজার কামালখানি এলাকার গণি মিয়ার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে আইভি আক্তার লিজা (২১) মা-বাবার সাথে স্বপরিবারে ঢাকা ২৬১/এইচ পুর্ব নাখালপাড়া, তেজগাওঁ এলাকায় বসবাস করে আসছেন। সেখানে একটি গার্মেন্টেন্সে কাজ করেন। এর আগে পরিবারের লোকজন তাকে বিয়ে দেয়।

বিবাহের কয়েক বছর পরই স্বামী অন্যত্র বিয়ে করায় তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এর পর থেকেই সে ঢাকায় গার্মেন্টন্সে চাকুরী নেয়। রবিবার (১৫ জুন) বেলা ২ টায় ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিলাস পরিবহনের একটি বাসে উঠে দাদা’র বাড়ি বানিয়াচং যাওয়ার উদ্দেশ্যে ওই গার্মেন্টন্স কর্মী । বাড়ি ফেরার পথে সিলেটগামী বাস থেকে শায়েস্তাগঞ্জ নামার কথা থাকলেও ঘুমিয়ে পড়ায় সে নামতে পারেনি।

একপর্যায়ে বাসটি মহা সড়কের শেরপুর অতিক্রম করে। এসময় সে বাসের হেল্পারকে গন্তব্য জানালে তাকে মহাসড়কের অচেনা একটি স্থানে নামিয়ে দেয়া হয়। লোকজন তাকে নবীগঞ্জগামী মা এন্টারপ্রাইজ গাড়ি নং (সিলেট জ ১১০-০৩-৬৬)তে উঠিয়ে দেয়। ওই বাসের সকল যাত্রী মহা সড়কের আউশকান্দি নেমে যায়। রাত পৌনে ১০টায় নবীগঞ্জগামী বাসটি ভাঙ্গারপুল নামক স্থানে আসলে অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে প্রথমে বাসের হেল্পার লিটন মিয়া তাকে পিছন দিকে গিয়ে হাত-পা চেপে ধরে জোর পুর্বক ধর্ষন করে। পরে হেলপার বাস চালায়। এ সময় বাসের চালক ছাব্বির মিয়াও তাকে জোর পুর্বক ধর্ষন করে।

বাধাঁ দিলে প্রাণে হত্যার ভয় দেখায়। রাত সাড়ে ১০টায় নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কের সালামতপুর পেট্রোল পাম্প এলাকায় ওই লোকাল বাসে মহিলার চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন বাসটিকে আটক করেন। ঘটনাস্থল দিয়ে যাবার সময় সেনাবাহিনীর টহলদল লোকজনের চিৎকার শুনে গাড়ি থামায়। এ সময় ওই গার্মেন্টন্স কর্মী গাড়ীর হেল্পার ও চালকের বিরোদ্ধে তাকে জোর পুর্বক ধর্ষনের ঘটনার বর্ণনা দেন। এঘটনায় গাড়ি চালক ছাব্বিরকে তাৎক্ষণিক আটক করে পুলিশে দেয়া হয়।

মহিলা পুলিশের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে ওই মহিলা নিজেকে গার্মেন্টন্স কর্মীসহ বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় সে বিবাহিত । স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় এবং স্বামী ২য় বিয়ে করায় তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এক পর্যায়ে জীবন জীবিকার তাগিদে ঢাকায় একটি গার্মেন্টন্সে কাজ করে। সেখানে তার মা-বাবা’র সাথে বসবাস করে আসছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি সরজমিন পরিদর্শন করেছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ.এন.এম সাজেদুর রহমান। এ সময় তিনি সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ভিকটিম’কে কেউ বলছেন গার্মেন্টন্স কর্মী, কেউ বলছেন বাসায় কাজ করেন। সে যাই করুন সে ধর্ষিত হয়েছে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্ত মুলক বিচার হবে।

পলাতক আসামীকে দ্রæত আইনের আওতায় আনার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মোঃ দুলাল মিয়া বলেছেন, ভিকটিম বিবাহিত এবং স্বামী পরিত্যক্তা। সে ঢাকায় একটি গার্মেন্টন্সে কাজ করতো। বাড়ি ফেরার পথে বাসে এই ন্যাক্কার জনক ঘটনার শিকার হন। পলাতক হেলাপার লিটন মিয়াকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে