মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

বাল্যবিবাহ নয় শিক্ষাই ভবিষ্যৎ: চাই সচেতন সমাজ

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি
  ০১ জুলাই ২০২৫, ১১:২৬
বাল্যবিবাহ নয় শিক্ষাই ভবিষ্যৎ: চাই সচেতন সমাজ
ছবি : যায়যায়দিন

“বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক রীতিনীতির নেতিবাচক প্রভাব দূরীকরণ” আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্যোগে কক্সবাজারের কলাতলীতে ইউনি রিসোর্টের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় একটি প্যানেল আলোচনা।

সোমবার (৩০ জুন) দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এস,কে রকিবুল আলম, হেড অব জেনারেল ফুড এসিসটেন্স গ্রোগ্রাম,ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম কক্সবাজার।

সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বপন সিং প্রজেক্ট ম্যানেজার চাইল্ড সেইফটি নেট প্রজেক্ট। উপস্থাপনায় ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশন মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার পার্থ প্রতিম বাগচী,

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশন মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার লিমা মেরী রোজারিও, ওয়ার্ল্ড ভিশন মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার লুইজা মন্ডল, ওয়ার্ল্ড ভিশন মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার নয়ন রুদ্র, ওয়ার্ল্ড ভিশন মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার মাইকেল মন্ডল, জয়শ্রী পিউরী ফিকেশন এ্যাডভোকেসি কোর্ডিনেটর, সাংবাদিক জাবেদ আবেদীন শাহীন, মওলানা মুহাম্মদ উল্লাহ পন্ডিত শ্রী পল্লব চক্রবর্তী, চাইল্ড ফোরাম ও ইয়ূত্থ ফোরামের ৭০জন সদস্যবৃন্দ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এস,কে রকিবুল আলম বলেন, বাল্যবিবাহের পেছনে দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তার ঘাটতি ও সামাজিক চাপ অন্যতম প্রধান কারণ। অনেক দরিদ্র পরিবার মনে করে, মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলে একদিকে তারা খাদ্যের বোঝা থেকে মুক্তি পাবে, অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। কিন্তু এটি একটি মারাত্মক ভুল ধারণা। গবেষণায় দেখা গেছে, অপুষ্ট শিশু ও কিশোরীদের গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ এবং মাতৃমৃত্যুর হার এই শ্রেণিতেই সবচেয়ে বেশি।

তিনি আরো বলেন,আমরা মনে করি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে পরিবারগুলো আর মেয়েকে দ্রুত বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে বাধ্য হবে না। তাই বাল্যবিবাহ রোধে আমাদের কাজ কেবল মানবিক সহায়তা নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ।

স্বপন সিং প্রজেক্ট ম্যানেজার বলেন, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ছাড়া বাল্যবিবাহ রোধ সম্ভব নয়। স্থানীয়দের সক্রিয় অংশগ্রহণই এই প্রচেষ্টাকে সফল করতে পারে। এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টি নয়,বরং বাস্তব পদক্ষেপ নিতে চাই। ঝুঁকিপূর্ণ কিশোরীদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনা, পরিবারগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো এবং কমিউনিটির সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করাই ওয়ার্ল্ড ভিশনের লক্ষ্য।

অনুষ্ঠানে অন্য বক্তরা বলেন,বাল্যবিবাহ শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো সমাজকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। তাই নেতিবাচক সামাজিক রীতিনীতি নির্মূল করতে হলে কেবল আইন নয়, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। এক্ষত্রে পরিবারের কর্তাদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ইসলাম কখনো জোরপূর্বক বা অপরিপক্ব বয়সে বিয়েকে সমর্থন করে না। ধর্মের নামে বাল্যবিবাহ বৈধ নয়। সমাজে যেভাবে ‘ইজ্জতের ভয়’ বা ‘মেয়েকে বোঝা’ মনে করে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা ধর্মীয়ভাবে সম্পূর্ণ অনুচিত ও গুনাহের কাজ।

বক্তরা আরো বলেন, যদি কোনো পরিবার কিশোরী মেয়ের বিয়ে ঠিক করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান,ও প্রশাসনকে জানাতে হবে। যাতে করে সঠিক সময়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে, নেতিবাচক সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি কমিউনিটির সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।ওয়ার্ল্ড ভিশন এ বিষয়ে আরও ব্যাপকভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে