মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

টাঙ্গুয়ায় কর্মশালায় মহিলা লীগ নেত্রীর অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
  ০১ জুলাই ২০২৫, ১৩:৩২
টাঙ্গুয়ায় কর্মশালায় মহিলা লীগ নেত্রীর অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক
টাঙ্গুয়ায় কর্মশালায় যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীর অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। 

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন একটি প্রকল্পের কর্মশালায় যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীর অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার (৩০ জুন) সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় তাহিরপুর উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আইরিনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাকে মঞ্চের প্রথম সারিতে বসানোয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দপ্তর কৌশলে আওয়ামী লীগপন্থীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

সম্প্রতি কর্মশালার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। অনেকেই অভিযোগ করেন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ জেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কৌশলে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের একজন নেত্রীকে এভাবে প্রকাশ্যে সামনে নিয়ে আসায় ছাত্র-জনতার মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর: জলাভূমি বাস্তুতন্ত্রের সম্প্রদায়ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এই পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। এতে ৪৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাভূমি সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা, যার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণকে যৌথ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করা, সংকটাপন্ন জলাবন ও জলজ আবাসস্থল পুনরুদ্ধার করা এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা।

এদিকে, গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই কর্মশালায় সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল সভাপতিত্ব করেন। ’

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অঞ্জন কুমার দেব রায়। প্রকল্পের পরিচালক শাহেদা বেগম মূল বক্তব্য তুলে ধরেন। কর্মশালায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দারের সঞ্চালনায় যুব মহিলা লীগের নেত্রী আইরিনও বক্তব্য দেন।

এছাড়াও, এই কর্মশালায় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী কতিপয় সাংবাদিক ও শিক্ষক নেতাদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়৷ যা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন জুলাই সপক্ষের নেতৃবৃন্দ।

সুনামগঞ্জ জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমনদ্দোজা বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ভাইদের রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি, অথচ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের বিচারের আওতায় না এনে নতুন কৌশলে তাদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহেদা বেগম বলেন, ‘ওনার (যুব মহিলা লীগের সভাপতি আইরিনের) বিষয়ে কোনো পোস্টার বা কোনো ছবি থাকলে আমার সাথে শেয়ার করবেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশ মহিলা প্রতিনিধির অংশগ্রহণ দেখতে চায়। উনার বিষয়ে হাওরবাসীর যদি আপত্তি থাকে তাহলে এরপরের কোনো প্রোগ্রামে আর উনাকে দাওয়াত দিব না।’

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়া পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অঞ্জন কুমার দেব রায় বলেন, ‘আমি তো আসলে বিষয়টি জানি না। আমাকে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখা হয়েছে এজন্য আমি কর্মশালায় উপস্থিত ছিলাম। এর বেশি কিছু আমি জানি না। নারী নেত্রীকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহেদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে