শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এবারও বই ছাপা নিয়ে জটিলতা

পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগ জরুরি
নতুনধারা
  ০১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

আগামী শিক্ষাবছরের জন্য প্রাথমিক স্তরের সাড়ে দশ কোটি বিনামূল্যের বই ছাপা নিয়ে এবারও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে খবর এসেছে। সোমবার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সময়মতো কাগজের ছাড়পত্র না মেলায় কার্যাদেশ পাওয়ার দেড় মাসের মধ্যে একটি বইও ছাপাতে পারেনি মুদ্রণের কাজ পাওয়া ৪৩টি প্রতিষ্ঠান। এতে নির্ধারিত সময় অর্থাৎ নতুন বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষের কপালেও পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। অভিযোগ উঠেছে, কাগজ পরিদর্শনের থাকা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, পরিদর্শন টিম মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে অহেতুক হয়রানি করছে। সব ঠিক থাকার পরও তারা কাগজের ছাড়পত্র দিচ্ছে না। জাতীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এই কাজে পরিদর্শন টিমের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অত্যন্ত পরিতাপের। আর বিষয়টি সামগ্রিক বিবেচনায় অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়।

এনসিটিবির তথ্যানুযায়ী, ২০২০ শিক্ষাবর্ষের সাড়ে ১০ কোটি বই ছাপার কার্যাদেশ দেয়া হয় চলতি বছরের ২০ আগস্ট। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ২০ নভেম্বরের মধ্যে শতভাগ বই ছাপিয়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। তবে কার্যাদেশের পরবর্তী ৪৯ দিনের মধ্যে মোট বইয়ের অর্ধেক সরবরাহ করতে হবে। বাস্তবতা হলো, ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ কোটি বইয়ের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের অল্প কিছু বই ছাপা হলেও প্রাথমিক পর্যায়ের একটি বইও ছাপা হয়নি। জানা যায়, বিনামূল্যের মোট ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপার কাগজ, আর্টপেপারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদি দেখভালের জন্য সরকার বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটির দায়িত্ব কাগজ ও আর্ট কার্ডের মান যাচাই করে ছাড়পত্র দেয়া। কিন্তু শর্ষের মধ্যে ভূতের খোঁজ পেয়েছে এনসিটিবি। মাধ্যমিকে বস্নু বাইন্ডার্স এবং প্রাথমিক স্তরের জন্য কন্টিনেন্টাল ইন্সপেকশন বিডির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে কন্টিনেন্টালের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট পেপার মিল থেকে কাগজ কিনতে বাধ্য করা, ছাড়পত্রের নামে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে উৎকোচ নেয়াসহ নানা হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। উৎকোচ না দিলে নানান কারণ দেখিয়ে ছাড়পত্র আটকে দেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। প্রতিবছরই যেহেতু নিম্নমানের ছাপা, বাঁধাই, সময়মতো ছাপা না হওয়া, ভুলে ভরা ইত্যাদি বিষয় সামনে আসছে সেহেতু এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সজাগ ও সতর্ক থাকার বিকল্প থাকাও উচিত নয়।

অন্যদিকে, ২০২০ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাগজ ও আর্ট কার্ডের মান যাচাইয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে এনসিটিবি কাজ দেয়নি এমন অভিযোগও উঠেছে এ বছর। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ও প্রতিষ্ঠানটির সচিবের বিরোধিতার পর বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে তিন দফা পুনঃটেন্ডার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে এনসিটিবির একজন সদস্যকে অপসারণের ঘটনাও ঘটে। আমাদের প্রশ্ন হলো, সরকারের বিনামূল্যের বই ছাপা নিয়ে এমন অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ এবং দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি কি আদৌ রোধ করা যাবে না?

স্মর্তব্য যে, চার দশক আগেও গণশিক্ষা অভিযানের নামে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও বিতরণের মধ্যে বিদ্যমান ছিল শুভঙ্করের ফাঁকি! তখন প্রয়োজনের তুলনায় নামমাত্র বই ছাপিয়ে সরকারি অর্থের হরিলুটের ব্যবস্থা ছিল বছরের পর বছর। কিন্তু বর্তমান সরকার শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়াসহ সারা দেশের শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিন বই তুলে দেয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। অথচ একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে বসেছে। আমরা মনে করি, সরকারের এই কর্মসূচি গতিশীল ও নিরঙ্কুশ করতে হলে এনসিটিবিসহ পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, মুদ্রণ, সরবরাহ, সংশোধনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো বই পৌঁছানো নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছে তা নিরসনে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া এনসিটিবিকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক বই ছেপে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে হয়। এটি একটি দুরূহ কাজ নিঃসন্দেহে। এই বিশাল কাজটি করার জন্য এনসিটিবির নিজেরই প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং মেশিন থাকার বিষয়টিও সংশ্লিষ্টরা বিবেচনায় নিতে পারেন। এতে বিদেশি ও দেশি প্রিন্টিংও প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো সহজ হবে। এড়ানো যাবে প্রতিবছর সৃষ্ট জটিলতা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<69064 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1