শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচণ্ড গরমে ফেরী করে বিক্রি হচ্ছে আনারস : চাহিদা বেড়েছে- যাচ্ছে বিদেশে

জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল, টাঙ্গাইল
  ১৫ জুলাই ২০২২, ১৭:৩৯

টাঙ্গাইল জেলায় কয়েকদিন ধরে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচণ্ড গরম পড়েছে গরমের কারণে সাধারণ মানুষ হাঁসফাঁস করছে প্রচণ্ড গরমে রসালো ফল আনারসের চাহিদা বেড়ে গেছে চাহিদা বাড়ায় আসারসের রজধানী খ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুরে ভির করছেন পাইকাররা তারা মধুপুর থেকে আনারস এনে বিভিন্ন স্থানে ফেরী করে বিক্রি করছেন

মধুপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে প্রকাশ, বছর মধুপুর উপজেলায় ১৬ হাজার ৫৫ একর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে- যা গত বছরের তুলনায় এক হাজার ৭২৯ একর বেশি মধুপুর উপজেলা ছাড়াও গড় এলাকার ঘাটাইল, সখীপুর, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া মুক্তাগাছা এবং জামালপুর সদর উপজেলার আরও সাত হাজার একর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে আনারসের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে আদা, হলুদ, কলা, কচু পেপের মধ্যে যে কোন তিনটি ফসল চাষ করা যায় এসব আনারস মধুপুরের জলছত্র গারো বাজারের পাইকারি হাটে বিক্রি করা হয় জুন মাসের শেষ দিকে আনারস উঠতে শুরু করে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে

সরেজমিনে আনারস চাষিরা জানায়, সাধারণত জলডুগী বা হানি কুইন ক্যালেন্ডার জাতের আনারসই মধুপুর গড়াঞ্চলে বেশি চাষ হয়ে থাকে এছাড়া স্থানীয় জাতেরআষাঢ়ীনামের আনারসও চাষ হয়ে থাকে আনারস সাধারণত ১৮ মাসী ফল- যে কোন আনারসই চারা বপণের ১৮ মাসের মধ্যে পরিপক্ক হয় নানা রকম কেমিকেল ব্যবহার করে বর্তমানে ১৮ মাসের আনারস - মাসেই পরিপক্ক করা হয়- যা আদৌ ঠিক নয় এতে রসালো ফল আনারসের প্রকৃত স্বাদ থাকেনা, ওষুধি হিসেবেও তেমন কাজে লাগেনা মধুপুর গড়াঞ্চলের রসালো আনারস কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানীর পক্ষে মাঠ পর্যায় থেকে কেনা হয়ে থাকে সেগুলো বছাই করে বিদেশে রপ্তানী করা হয়ে থাকে

মধুপুর উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের আনারস চাষি ইসমাইল হোসেন ৩০ শতাংশ জমিতে আনারসের চাষ করেছেন এতে ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে ইতোমধ্যে তিনি আনারস বিক্রি শুরু করেছেন বছর মৌসুমের শুরুতেই প্রচণ্ড গরমে আনারসের চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাচ্ছেন তার ৩০ শতাংশ জমির আনারস এক লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে জানান তিনি ছাড়া একই জমিতে হলুদ, আদা কচুর চাষ করেছেন সেখান থেকেও ভাল মুনাফা পেয়েছেন

ইসমাইল হোসেন জানান, ঈদ প্রচণ্ড গরমে আনারসের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে প্রতিটি মাঝারি সাইজের আনারস ৪৫-৫০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় অঞ্চলে আনারসের ভাল ফলন দাম ভাল পাওয়ায় খুশি চাষিরা এসব আনারস দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বহুজাতিক কোম্পানীর হাত ধরে বিদেশেও চলে যাচ্ছে

জলছত্র হাটে দেখা যায়, পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার বাগান থেকে চাষি খুচরা ব্যবসায়ীরা সাইকেল ভ্যানযোগে আনারস নিয়ে পাইকারি হাটে আসছেন ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ট্রাকে উঠিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছেন

আনারস চাষি ওমর ফারুক, আবুল কালাম, মোবারক সহ অনেকেই জানান, সাধারণত এক বিঘা জমিতে তিন হাজার আনারসের চারা লাগানো হয় প্রতিটির পেছনে ১৫ টাকা করে খরচ হলেও প্রতিটি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করা যাচ্ছে তারা জঙ্গলে থাকেন তাই উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তেমন কোন সহযোগিতা করা হয়না শুধুমাত্র পরামর্শ প্রচার করেই দায়িত্ব পালন করেন কর্মকর্তারা

অপর চাষি খোকন মিয়া জানান, আগে অতি বৃষ্টি, ভাইরাস মাটি দূষিত হওয়ার কারণে আনারস পঁচে নষ্ট হলেও এবার তেমনটি হয়নি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে

ময়মনসিংহের শিমতলী এলাকার পাইকারি ক্রেতা আতিকুর রহমান রফিকুল ইসলাম, গাজীপুরের রতন মিয়া সারোয়ার হোসেন জানান, বেশ কয়েক দিন যাবত প্রচণ্ড গরম পড়েছে এতে আনারসের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে তাই দামও অনেক বেশি এক মাস আগেও যে আনারস ২৫-৩০ টাকায় কেনা যেত তা এখন ৪৫-৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে চাহিদা কমলে দাম কমে

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, প্রচণ্ড গরম ঈদকে কেন্দ্র করে আনারসের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে ভাল দাম পেয়ে চাষিরা অত্যন্ত আনন্দিত আনারস চাষে উদ্বুদ্ধকরণ ছাড়াও তারা নানা রকমের পরামর্শ দিয়ে থাকেন জমিতে রোগ-বালাই দেখা দিলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে