চলতি মৌসুমে আর ১৫/২০ দিনের মধ্যে আবাদি আমন ঘরে তোলার দিন গুনছে কৃষকেরা। কিন্তু ধানে পাকধরা শুরু হবার সাথে সাথে বাদামী গাছ ফরিং অর্থাৎ কারেন্ট পোকার আক্রমণে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় অনেক কৃষক আধাপাকা ধান কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ বলছে বাদামী গাছ ফরিং বা কারেন্ট পোকা দমনে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বোয়লিয়া, আদাবাড়িয়া, মথুরাপুর, পিয়ারপুর ও রিফাইতপুর ইউনিয়নের বেশীর ভাগ আবাদি ধান ক্ষেতে বাদামী গাছ ফরিং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা গেছে।
ছোট আকারের এই বাদামী গাছ ফরিং বা কারেন্ট পোকা ধান গাছের গোড়ার রস চুষে খায়, যার ফলে ধান গাছ শুকিয়ে যায় এবং ধানের ফলন হয়না। এ পোকার আক্রমণে দ্রুত ধান গাছ মরে যায় বলে স্থানীয় কৃষকের কাছে বাদামী গাছ ফড়িং কারেন্ট পোকা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
উপজেলার কৃষি অফিস কর্তৃক দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এবার উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১৯ হজার ৮৭০ হেক্টর, চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে। যা চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। এছাড়া আমন চাষিদের মাঝে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ২৫০ জন চাষিকে । এবার ফলন হিসাবে চালের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ হাজার ৫৯২ টন ।
কিন্তু কারেন্ট পোকার আক্রমণে সেই লক্ষমাত্রা অর্জনে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। কেননা, আমন আবাদ অনেকটা বৃষ্টি নির্ভর হলেও এবছর অনাবৃষ্টির ফলে পুরো মৌসুমে পানির জন্য প্রায় শতভাগ সেচযন্ত্র ব্যবহার, সার, কীটনাশক, জ্বালনীর উচ্চমুল্যের কারণে, আবাদি খরচ দ্বিগুণেরও বেশী হওয়ায় একদিকে যেমন লোকশানে পড়ার শ্কংা। তারপর কারেন্ট পোকার প্রভাবে ধানের ফলন না হওয়ায় দুঃন্তিায় ভুগছেন কৃষক। উপজেলার বোয়ালিয়া গোয়ালগ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান কানু জানান, তার আবাদি ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দেয়ায় দ্রুত আধাপাকা ধান কেটে নিয়েছেন। কারেন্ট পোকার কারণে তার লক্ষ্যমাত্রার সিকিভাগ ধান পেয়েছেন তিনি।
গোয়ালগ্রাম খান পাড়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন খান জানান, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। কারেন্ট পোকার আক্রমণ শুরু হওয়ায় অর্ধেক জমির ধান ইতিমধ্যে আধাপাকা অবস্থায় কেটে নিয়েছেন।
উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ এলাকার কৃষক আসারুল ইসলাম জানান, এবার তার ১ বিঘা আমন চাষে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এখন পোকার আক্রমণে ফলন না হলে পুরোটাই লোকশান হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম জানান, এ এলাকায় বাদামী গাছ ফরিং বা কারেন্ট পোকার উপদ্রব লক্ষ্য করা গেছে। পোকা দমনে চাষীদের সার্বক্ষনিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এবং চাষীদের সচেতন করার জন্য লিফলেট বিতরণ সহ ক্যাম্পেইন করা হচ্ছে। এবং আক্রান্ত ক্ষেতে প্লেনাম ও পাইরাজিন জাতীয় কীটনাশক ব্যবহারের নির্দেনা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া পুরাতন জাতের ব্রি-ধান ৩৩ ও ব্রি-ধান ৩৯ আবাদ না করার জন্য চাষীদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কেননা, এই ধানগুলোকে কারেন্ট পোকায় বেশী ক্ষতি করতে পারে।
যাযাদি/ এস