শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

আজমিরীগঞ্জে বিষমুক্ত সব্জি চাষে তোফাজ্জল হোসেনের বিপ্লব

মো. আবু হেনা, আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
  ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৯
আজমিরীগঞ্জে বিষমুক্ত সব্জি চাষে তোফাজ্জল হোসেনের বিপ্লব

আজমিরীগঞ্জের বাসিন্ধা উপজেলার তোফাজ্জল হোসেনের পেশা কৃষি। অভাব-অনটনের সংসারে জন্ম তাঁর। প্রাইমারি গন্ডি পেড়িয়েই পিতার সাথে নেমে পড়েন জীবন সংগ্রামে। ঘুরে দাঁড়ানোর আঁশায় প্রতিবছরই চাষ করেন বোনা আমান ধান। যার আয় দিয়ে তারঁ কোন রখম হতো তা দিয়ে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করতো তার পরিবার।

তোফাজ্জল হোসেন ২০০৪ ইং সনে তিনি ৩৬ বিঘা বোনা আমন আবাদ করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় অন্য কৃষকদের সাথে তারও জমি তলিয়ে যায়। এতে তোফাজ্জল দিশেহারা হয়ে পড়েন। অবশেষে বন্যার পানি নামার সাথে সাথেই ধানের ফসল বাদ দিয়ে সব্জি চাষে মনযোগী হন।

তোফাজ্জল হোসেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাসা ইউনিয়নের পশ্চিমবাগ কদমতারা গ্রামের আব্দুর রহমান মিয়ার পুত্র।

পরে বিষমুক্ত সব্জি উৎপাদন করে তিনি দারিদ্র্যকে জয় করেছেন। তাঁর জমিতে হওয়া ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, কাঁচামরিচ, বেগুন ও মুলা লাউ যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। তোফাজ্জল হোসেনকে অনুসরন করে এলাকার ইস্টার মিয়া, আল আমিন, নাসির উদ্দিন ও মতিউর রহমানসহ অনেকেই বিষমুক্ত সব্জি চাষে সফলতা পেয়েছেন।

তোফাজ্জল হোসেন জানান, ইচ্ছে থাকা সত্বেও অর্থের অভাবের তাঁর লেখা পড়া হয়নি। কোন রকম প্রাইমারি পাস দিয়েছেন। শৈশবে কালেই বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে যোগদেন তিনি।

প্রতিদিন ভোর সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত কাজ করতেন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করে যা সামান্য আয় হতো তা দিয়ে তোফাজ্জলদের পরিবার চলতো।

সফল এই কৃষক বলেন, ২০০৪ সালের ৩৬ বিঘা বোনা আমন ধান চাষের লোকসান গোনার পর সব্জি চাষ শুরু করি। কাক ডাকা ভোরে সব্জির জমিতে কাজ শুরু করে বাড়ি ফিরি রাতে। প্রথম বছরেই সব্জির ব্যাপক উৎপাদন হয়। তারপর আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি।

আরও জানান, চলতি বছর ৮৪ শতক জমিতে ফুল কপি, ২৮ শতক জমিতে বাঁধা কপি, ৫৬ শতক জমিতে মুলা, মালচিং পদ্ধতিতে ২১ শতকে বেগুন, ৫৬ শতকে টমেটো এবং একই পরিমাণ জমিতে মরিচ চাষ করেছেন।

এসব জমির ইজারা বাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ টাকার সজি বিক্রি করেছেন। আরও ৬/৭ লাখ টাকার সব্জি বিক্রি হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ জানান, এ উপজেলা মূলত ধান প্রধান অঞ্চল। তবে এবার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে আলু, মিষ্টি আলু, বেগুন, কাঁচা মরিচ, ফুল কপি, বাঁধা কপি, টমেটোসহ নানা জাতের সব্জি চাষ হয়েছে প্রায় ১৯০ হেক্টর।

সফল কৃষক তোফাজ্জল হোসেন প্রসঙ্গে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, 'ওই সব্জি চাষীর আগ্রহ দেখে তাঁকে প্রদর্শনীর আওতায় আনা হয়েছে। তিনি মালচিং পদ্ধতিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষে লাভের মুখ দেখেছেন। তাঁকে দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও সবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন উঠছেন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে