শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

 ‘মদ ও গোলাপের শহর’ এখন ‘ধ্বংসস্তুপ’

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ মে ২০২৩, ১৪:৩৩

ফুলের বাগানের মতো সুন্দর এক শহর বাখমুত। এই তো সেদিনও এই শহরে ছিল অসংখ্য মানুষের কোলাহল। ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।

কি ছিল না এই শহরে। মানুষের বেড়ানোর জন্য ছিল উত্তম স্থান। এই শহরে সব কিছু ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। গোলাপের সৌরভ আর মদ এক সঙ্গে চলতো। কিন্তু সেই শহরটি এখন এক্কেবারে ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে।

শহরটি রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের পর দখলে নিয়েছে রাশিয়ার সৈন্যরা। অন্য দিকে ইউক্রেন বলেছে যে, বাখমুতে রাশিয়ার বিজয় ঘোষণার পরও ইউক্রেনের সেনারা সেখানে তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে।

জানা যায়, ইউক্রেনের বাখমুত শহরকে বলা হয় ‘মদ ও গোলাপের শহর’। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে শহরটি এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। শনিবার শহরটিকে পূর্ণ দখল করার দাবি করেছে। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার বাখমুত রাশিয়ার দখলে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। যুদ্ধের আগে শহরটিতে ৭২ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস ছিল।

শহরটি দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুতকা নদীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছে। দোনেৎস্ক চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলের মধ্যে একটি যার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না নিয়েও নিজেদের দেশের অন্তর্ভুক্ত করেছে রাশিয়া। বাখমুত শহরটি উপত্যকার নিচে অবস্থিত হওয়ায় আক্রমণ করা তুলনামূলক কঠিন ছিল। আর এই শহর দখলের মাধ্যমে রাশিয়ার লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে ধারনা রাজনীতিবিদদের।

উল্লেখ্য, লবন খনির জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত বাখমুত একসময় ছিল গুরুত্বপূর্ণ রেল হাব। তবে এই শিল্প শহরটি গত গ্রীষ্ম থেকে পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধে শহরের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়েছে ইতোমধ্যে। ইউক্রেনের সেনারা বাখমুতকে ‘পৃথিবীর নরক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। যদিও রাশিয়ার সৈন্যরা উৎসব পালন করছে এই শহরে।

বাখমুতের কাছেই এএফপির ভিডিও সাংবাদিক আরমান সোলডিন ৯মে রিপোর্ট করার সময় বিমান হামলায় নিহত হন। গত মার্চ মাসে স্থানীয় কর্মকর্তারা অনুমান করেছিলেন যে, বাখমুতে এখন মাত্র ৩ হাজারের মতো বেসামরিক জনসংখ্যা অবশিষ্ট রয়েছে। এখন সেখানে কোনো বেসামরিক লোক থাকলেও তাদের সংখ্যা খুবই কম বলে মনে করা হচ্ছে।

বাখমুত বিখ্যাত স্পার্কলিং ওয়াইনের জন্যও পরিচিত। এর উৎপাদন এখন ওডেসা অঞ্চলে চলে গেছে। এটিকে ১৯২৪ এবং ২০১৬ এর মধ্যে আর্টেমভস্ক বলা হতো। এটি একসময় ‘মদ এবং গোলাপের শহর’ হিসাবে পরিচিত ছিল। ‘রোজ অ্যালি’ নামে পরিচিত শহরের একটি রাস্তায় ৫ হাজার গোলাপ থাকার জন্য ইউক্রেনীয় রেকর্ড ভাঙে।

কয়েক মাস ধরে শুধু একটি রাস্তা শহরের পশ্চিম অংশে থাকা ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলোকে তাদের বাকি বাহিনীর সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। পুড়ে যাওয়া যানবাহনে ছড়িয়ে থাকা রাস্তাটিকে ‘জীবনের রাস্তা’ নাম দেওয়া হয়েছে।

২০১৪ সালে যখন কিয়েভ এবং মস্কো-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে প্রথম সংঘাত শুরু হয়েছিল, তখন রাশিয়াপন্থী যোদ্ধারা বাখমুত দখল করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই বছরের জুলাইয়ে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী তাদের পিছিয়ে দেয়।

যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ বাখমুতের কৌশলগত গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জেলেনস্কি মার্চ মাসে বলেছিলেন যে এটির দখল রাশিয়ান সেনাদের স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামতোর্স্ক শহরে আক্রমণ করার জন্য একটি ‘খোলা রাস্তা’ ছেড়ে দিতে পারে।

এএফপি সাংবাদিকরা গত মাসে যখন শহরটি পরিদর্শন করেছিলেন, তখন তারা কামান-ক্ষত বিল্ডিংগুলো দেখতে পান। সেখানে বোমা বিস্ফোরিত খেলার মাঠ, কাঁচের টুকরো এবং তাড়াহুড়ো করে সমাধিস্থ বেসামরিক লোকদের কবরের উপর অস্থায়ী ক্রস দেখতে পান।

কিছু বেসামরিক নাগরিক (বেশিরভাগ বয়স্করা) শহর ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছেন। তারা পানি বা বিদ্যুৎ ছাড়া বেশিরভাগই ভবনের বেজমেন্টে বসবাস করছেন।

হার অস্বীকার ইউক্রেনের ইউক্রেন বলেছে যে, বাখমুতে রাশিয়ার বিজয় ঘোষণার পরও ইউক্রেনের সেনারা সেখানে তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের কারণে বাখমুতের আসল দখল কার হাতে তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হান্না মালিয়ার বলেছেন, সেখানে ইউক্রেনের সেনাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। এটি বাখমুতে শত্রুর উপস্থিতিকে ব্যাপকভাবে জটিল করে তোলে।

এর আগে জাপানে জি-সেভেন গোষ্ঠীর বৈঠকে বাখমুতে ইউক্রেনের হারের বিষয়টি স্বীকার করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তবে এটি পুরোপুরি রাশিয়ার হাতে চলে গেছে কি না সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, তবে আপনাকে বুঝতে হবে- সেখানে কিছুই নেই, তারা সবকিছু ধ্বংস করেছে। কোনো ভবন নেই। এটা দুঃখজনক। এটা ট্র্যাজেডি।’

ইউক্রেনের ইস্টার্ন গ্রুপ অফ ফোর্সের মুখপাত্র সের্হি চেরেভাতি বলেছেন যে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বাখমুতের আশেপাশে অবস্থানগুলো ধরে রাখতে যুদ্ধ করছে।

তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সঠিকভাবে বলেছেন যে শহরটি আসলে মাটিতে মিশে গেছে। বিশাল কামান এবং বিমান হামলার মাধ্যমে শত্রু প্রতিদিন ধ্বংস করছে এবং আমাদের ইউনিট রিপোর্ট করেছে যে পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন।’ সূত্র: এএফপি ও এপি

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে