শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ দিবসে লেখক-পাঠকে সরগরম মেলা প্রাঙ্গণ

যাযাদি ডেস্ক
  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৫০
আপডেট  : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৩৩
শহীদ দিবসে লেখক-পাঠকে সরগরম মেলা প্রাঙ্গণ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসে একুশে বইমেলায় ছিল জনস্রোত। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অনেকেই এসেছেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে একটু দূরের এ মেলায়। সময় যত বেড়েছে মেলাপ্রাঙ্গণে ভিড়ও বাড়তে দেখা গেছে।

আজ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এদিন বইমেলা শুরু হয় সকাল ৮টায়। ২১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে মানুষের ঢল নামে বইমেলায়। সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করেন কবি শামীম আজাদ। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৪। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অমর একুশে বক্তৃতা করবেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

এই দিনটির জন্যই যেন অপেক্ষায় ছিলেন লেখক-পাঠক ও প্রকাশকরা। সকাল ৮টায় খুলে যাবে মেলার দুয়ার খোলার সঙ্গে সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গনে মানুষের ঢল নামে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শহীদ মিনারে ছুটে আসে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর প্রভাব পড়ে বইমেলায়ও। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অনেকেই বইমেলায় প্রবেশ করেন। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় বইমেলা প্রাঙ্গণ।

এদিকে মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিদিনের মতো মেলা শুরু হয় বিকাল ৩টায় এবং চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এদিনও ছিল পাঠক-লেখক ও প্রকাশকদের সমাগম। বেচা-বিক্রিও হয়েছে বেশ।

বিভিন্ন স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, আজ (মঙ্গলবার) মোটামুটি বেচাবিক্রি হয়েছে। তবে আগামীকাল (বুধবার) আরও ভালো হবে। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে একটু বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়। কারণ এদিন বিক্রি একটু বেশি হয়, ভিড়ও বেশি হয়।

এদিকে বাংলা একাডেমি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর ২০তম দিন মঙ্গলবার নতুন বই এসেছে ৯৯টি। এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : জামাল নজরুল ইসলাম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানবক্তা আসিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুব্রত বড়ুয়া এবং আরশাদ মোমেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

অনুষ্ঠানে প্রাবন্ধিক বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গাণিতিক, পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিশ্ববরেণ্য কসমোলজিস্ট। আন্তর্জাতিক মহলে তিনি জে. এন. ইসলাম হিসেবে পরিচিত। পঞ্চাশ বছরের বৈজ্ঞানিক জীবনে তিনি ধ্রুপদী সব বিজ্ঞান-ধারার ওপর কাজ করে গেছেন। এর মধ্যে আছে কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব, আপেক্ষিকতার সূত্র, নক্ষত্রের গঠন ও মহাবিশ্ব তত্ত্ব। তবে তার গবেষণার প্রধান বিষয় ছিল আপেক্ষিকতাবাদ ও মহাবিশ্বতত্ত্ব। তার লিখিত দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স গ্রন্থটি ফরাসি, ইতালীয়, জার্মান, পর্তুগিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পৃথিবীর বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বইটি পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হয়।

আলোচকরা বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের বিজ্ঞানচিন্তা ও গবেষণার পরিসর ছিল অনেক বিস্তৃত। তিনি আন্তর্জাতিক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলে বিশিষ্ট অবস্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি কেবল বড় বিজ্ঞানীই ছিলেন না, একজন সংস্কৃতিবান ও দেশপ্রেমিক মানুষও ছিলেন। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে যোগদান করেন। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা তাকে কখনো সমাজ ও মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম বড় বিজ্ঞানী হয়েও ছিলেন নিরহংকারী, অত্যন্ত আন্তরিক, সদাশয় ও সরল মনের অধিকারী একজন মানুষ। তিনি বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে জামাল নজরুল ইসলামের বিজ্ঞানচেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

লেখক বলছি, অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আতাহার খান, কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল, গবেষক চৌধুরী শহীদ কাদের এবং লেখক ও পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল।

এদিকে রিকশাচিত্র প্রদর্শন বই ও সংলাপ মঞ্চের আয়োজনে বিকাল ৫টায় ড. হাসান কবীর রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের কৃষি বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রহিমা আখতার কল্পনা, বিপ্লব মুস্তাফিজ, প্রত্যয় জসীম, ফারুক আহমেদ, মনিরুজ্জামান মিন্টু, মনিরুজ্জামান রোহান এবং কাজী আনিসুল হক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ইকবাল খোরশেদ, দেওয়ান সাইদুল হাসান, অনন্যা রেজওয়ানা, মীর মাসরুর জামান রনি, সংগীতা চৌধুরী, জিনিয়া ফেরদৌস রুনা এবং চন্দ্রিমা দেয়া। এ ছাড়া মনিরুল ইসলামের পরিচালনায় দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে ‘স্বরব্যঞ্জন বাচনিক উৎকর্ষ ও চর্চা কেন্দ্র’।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে