রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৯

যথারীতি এ সপ্তাহেও নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ অব্যাহত রয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের তোড়জোড় থাকলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই, উল্টো অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে আটা-ময়দা, সবজি, মাংস, ডিম ও মসলা সব পণ্য বিক্রি হয়েছে বাড়তি দামে। শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে ভোগ্যপণ্যের দামে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

বিশেষ করে বাজারে গত কয়েকদিনে চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে যা কেজিপ্রতি ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একইভাবে প্রায় ৮০ থেকে ১শ' টাকা বেড়ে গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা দরে। একই সময়ে আটা-ময়দা ও ডালের দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা ও তেলের দাম লিটারে প্রায় ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখানেই শেষ নয়, দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে প্রায় সব ধরনের শাকসবজি, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, আদা-রসুনসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যও।

নতুন বছরের শুরু থেকেই দেশে চালের বাজার উত্তপ্ত। যদিও গত মাসে রেকর্ড পরিমাণে আমন ধান উৎপাদন হয়েছে তাতে বাজারে সরবরাহেও কোনো টান নেই। তারপরও উৎপাদন এলাকা থেকে রাজধানী সব জায়গায় বেড়েছে চালের দাম। এদিন রাজধানীর বাজারে সরু (মিনিকেট) চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৪ টাকা দরে। যা সপ্তাহ দুয়েক আগে বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে সর্বোচ্চ ৬ টাকা বেড়েছে। মাঝারি (বিআর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে মোটা চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ৫ দশমিক ৩৮, মাঝারি চাল প্রায় ৩ এবং মোট চালের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।

সবথেকে অস্বাভাবিক দাম বিরাজ করছে সবজির বাজারে। এদিন পেঁপে, মুলা ও শালগম ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজি কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। শিমের কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা এবং মাঝারি আকারের একটি লাউয়ের পিস বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১শ' টাকা দরে। এছাড়াও বাড়তি দাম অব্যাহত আছে অন্যান্য সবজির দামেও।

ভোক্তারা বলছেন, ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির এমন দাম

অকল্পনীয়। এখন এতো দামে সবজি বিক্রি হওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বাজারে সাংঘাতিকভাবে সিন্ডিকেট কাজ করছে। যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে পরিস্থিতি এতটা অবনতি হয়েছে।

তবে সবজির দাম বাড়ার পেছনে অতিরিক্ত শীত ও কুয়াশাকে দায়ী করেছেন পাইকারি বিক্রেতারা। তারা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বেশি কুয়াশা পড়ছে। এতে নির্ধারিত সময়ে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে না। সে কারণে ঢাকায় তুলনামূলক পণ্য কম আসছে। এছাড়া শীতের তীব্রতায় অনেক কৃষকের সবজি নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।

ভোটের আগে গরুর মাংসের বেঁধে দেওয়া দাম ছিল ৬৫০ টাকা কেজি। ভোটের পরে তা এক দফা বেড়ে ৭০০ টাকা হয়। এখন ঢাকা শহরের অধিকাংশ বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকায়। মাংসের পাশাপাশি মাছের বাজারও বেশ চড়া। বিক্রেতারা জানান, বিভিন্ন পদের মাছের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এদিন মাছ বাজারে মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় কাতল ৪শ' টাকা, বড় পাঙ্গাশ ২শ' টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩২০ টাকা, তেলাপিয়া আড়াইশ' টাকা ও শিং মাছ ৬শ' টাকা, শোল মাছ ৮শ' টাকা, পাবদা ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা, টেংরা মাছের কেজি আকারভেদে ৬শ' থেকে ৭শ' টাকা, মলা মাছ ৫শ' টাকা, বাইলা ১ হাজার টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪শ' টাকা, মাঝারি আকারে বোয়াল ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা, গুঁড়ামাছ ৩শ' টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ' টাকা, গলদা ৭শ' এবং বাগদা ৮শ' থেকে ৯শ' টাকা ও রূপচাঁদা ৯শ' টাকা দরে।

এদিকে, বাড়তি রয়েছে ডিমের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে আরও ৫ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা দরে। এছাড়াও চড়া দাম অব্যাহত রয়েছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগিতেও। খুচরা বাজারে এদিন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা। যা গত মাসে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে ছিল। সোনালি মুরগির দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়।

অন্যদিকে মুদি বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাংকর ডাল বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। প্রতি কেজি ভালো মানের মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে।

এর আগে বিভিন্ন সময় ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো বা কমানোর কাজ ঘোষণা দিয়ে করলেও এবার চুপিসারেই দাম বাড়িয়েছে। এ সপ্তাহে বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা করা হয়েছে যা ভোটের আগে বিক্রি হয়েছে ১৬৯ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪৫ টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম ১০ টাকা এবং চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেট আটার দাম এখন ৬৫ টাকা। ময়দার দাম বেড়ে হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা।

চিনির দামেও একই ধরনের অস্থিরতা। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ১৪৮ টাকা মূল্য থাকলেও বিক্রেতারা সেটা খুলে বিক্রি করছেন ১৫০-১৬০ টাকায়। বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা। একই সঙ্গে রসুনের দাম ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং আদার দাম ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে