ঈদুল আজহার পর রাজধানীর বাজারে এখনো ক্রেতা উপস্থিতি কম। আবার কোরবানি মাংসও রয়েছে বেশির ভাগ ঘরে। এ কারণে বাজারে কমেছে মুরগির দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। ঈদের আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। সেই হিসাবে ঈদের ছুটির আগে–পরে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের লম্বা ছুটি শেষে এখনো অনেক মানুষ ঢাকায় ফেরেননি। আবার যারা ফিরেছেন, তাদের অনেকের বাসাতেই কোরবানির মাংস রয়েছে। ফলে মুরগির মাংসের চাহিদা এখন কম। এ কারণে বিক্রেতারা সীমিত লাভেই মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন।
আজ সোমবার (১৬ জুন) সকালে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগে বাজারে অনেকটা স্থিতিশীল ছিল মুরগির দাম। তবে ঈদের বন্ধের সময় হঠাৎ করে মুরগির দাম বেড়ে যায়। সেই দাম এখন অনেকটাই কমে গেছে। গত চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, এই বাজারের মুরগির দোকানগুলোতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। একসঙ্গে কয়েক কেজি কিনলে প্রতি কেজি ১৫০ টাকাতেও বিক্রি করছেন এই বাজারের বিক্রেতারা।
অন্যদিকে, কারওয়ান বাজারের মুরগির দোকানে কোনো ধরনের দামাদামি ছাড়াই ১৫০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। অথচ চার দিন আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
ব্রয়লারের পাশাপাশি সোনালি মুরগির দামও কমেছে। বাজারে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। হাইব্রিড ধরনের সোনালি মুরগির দাম আরও কিছুটা কম; কেজি ২৪০-২৫০ টাকা। চার-পাঁচ দিন আগে প্রতি কেজি সোনালি মুরগির ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
কারওয়ান বাজারে মুরগি কিনতে আসা সবুজ বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ১৮০-২০০ টাকার মধ্যে ব্রয়লার মুরগি কিনছি। এখন হঠাৎ করে অনেক কম দামে (১৫০ টাকা) মুরগি কেনার সুযোগ পেয়েছি।’
মুরগি বিক্রেতা আরশাদ মিয়াজি বলেন, ‘আমি গতকাল ও আজ প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪০-১৪৫ টাকায় কিনে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। সাধারণ সময়ে এই মুরগিই ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতাম।’ আরশাদ মিয়াজি আরও জানান, সাধারণ সময়ে তাঁর দোকানে ১৫০ থেকে ২০০টি মুরগি বিক্রি হয়। এখন বিক্রি কমে ৬০-৭০টিতে নেমেছে। এ কারণে গ্রাহক পেলেই মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন তিনি।
মুরগির পাশাপাশি ডিমের দামও সামান্য কমেছে। বাজারে প্রতি ডজন ডিম এখন ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে এই দাম ডজনপ্রতি ৫ টাকা বেশি ছিল।
দাম কমার তালিকায় আরও রয়েছে গরু, খাসির মাংস ও ইলিশ মাছ। কোরবানির পর দোকান থেকে গরুর মাংস কেনার চাহিদা একেবারেই কমে গেছে। এ কারণে বাজারে গরুর মাংস বিক্রির বেশির ভাগ দোকানই বন্ধ দেখা গেছে।
যেসব দোকান খোলা রয়েছে, তারা মূলত বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য অর্ডার করা মাংস সরবরাহের কাজ করছে। খাসির মাংস বিক্রিতেও অনেকটা একই চিত্র দেখা গেছে।
গ্রাহক কম থাকায় গরু ও খাসির মাংসের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কম রাখছেন বিক্রেতারা। তাতে প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।
বাজারে ইলিশ মাছের দামও ঈদের আগের তুলনায় কেজিতে ২০০-৪০০ টাকা কম দেখা গেছে। ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৬০০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, ইলিশের ক্রেতারা এখনো বাজারমুখী হননি। ফলে গ্রাহক কম, সে তুলনায় সরবরাহ বেশি।