মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

চট্টগ্রাম বন্দরে রেকর্ড ৩২.৯৬ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেল, আয় ৭৫,৪৩২ কোটি টাকা

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬:২০
চট্টগ্রাম বন্দরে রেকর্ড ৩২.৯৬ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেল, আয় ৭৫,৪৩২ কোটি টাকা
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ২০২৪–২৫ অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে। বছরজুড়ে বন্দরে মোট ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭টি টিইইউ (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের সমতুল্য ইউনিট) কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৭৭ টিইইউ বেশি।

আগের বছর হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউ। ফলে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার অপারেশন শুরুর পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড।

একই সঙ্গে, দেশের সবচেয়ে বড় কাস্টমস স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২০২৪–২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করেছে ৭৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এ অঙ্ক ছিল ৬৮ হাজার ৭৫৫ দশমিক ৭ কোটি টাকা। বছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৬ হাজার ৬৭৬ দশমিক ৩ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শেষ দিকে এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি ও আন্দোলনের কারণে বন্দর ও কাস্টমসে কার্যক্রম ব্যাহত না হলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ৩৩ লাখ ছাড়িয়ে যেত এবং রাজস্ব আদায় আরও বেশি হতো।

বছরজুড়ে কাস্টমস ও বন্দর কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে বিভিন্ন ঘটনা—বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, দুটি ঈদ উপলক্ষে ছুটি, পরিবহন ধর্মঘট, এনবিআর কর্মকর্তাদের একাধিক ধাপের কর্মবিরতি এবং পুরোপুরি কার্যবিরতি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ছিল: ২০২০–২১ সালে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২টিইইউ, ২০২১–২২ সালে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬টিইইউ, ২০২২–২৩ সালে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮টিইইউ এবং ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫টিইইউ।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে যে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়, তার মধ্যে মূল জেটি, কমলাপুর অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) ও পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত। এতে আমদানি-রপ্তানি উভয় কনটেইনার এবং খালি কনটেইনারও অন্তর্ভুক্ত।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বর্তমানে মোট আমদানির ২৩ শতাংশ হয় কনটেইনারে। বাকি ৭৭ শতাংশ আসে বাল্ক পণ্য, তেল ও কেমিকেল ট্যাংকারে। বন্দরে ভিড়েছে এমন জাহাজের মধ্যে ৪৫ শতাংশই কনটেইনারবাহী, ৪৫ শতাংশ বাল্ক ক্যারিয়ার এবং ১০ শতাংশ তরল পণ্যবাহী জাহাজ। দেশের মোট কনটেইনার বাণিজ্যের প্রায় ৯৯ শতাংশ পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বাকিটা পরিচালিত হয় মংলা বন্দর থেকে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, 'এই পরিমাণ কনটেইনার হ্যান্ডলিং আমাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ অর্জনে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।'

লন্ডনভিত্তিক শিপিং প্রকাশনা লয়েড'স লিস্ট অনুযায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরগুলোর মধ্যে ৬৭তম অবস্থানে রয়েছে।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, 'চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস আমাদের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি মানেই বাণিজ্য বেড়েছে, যার সরাসরি প্রতিফলন পড়ে রাজস্বে। এ ধারা ধরে রাখতে হলে কর্মসূচির মাধ্যমে বন্দর ও কাস্টমস কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। তবেই অর্থনীতি আরও এগোবে।'

এদিকে, রাজস্ব আদায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৮০ হাজার ৪০২ কোটি টাকার তুলনায় ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা পিছিয়ে থাকলেও সার্বিক আদায় ইতিবাচক ছিল। ২০২২–২৩ অর্থবছরে এ হাউস রাজস্ব আদায় করেছিল ৬২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ও ডেপুটি কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, 'বছরজুড়ে আমরা বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি—ধর্মঘট, আন্দোলন, পরিবহন বন্ধ। তবু রাজস্ব আদায়ে আমরা ইতিবাচক ধারায় ছিলাম।'

তিনি আরও জানান, রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার মাধ্যমে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। 'সব প্রতিকূলতার মাঝেও রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে পেরেছি, পাশাপাশি রাজস্ব প্রশাসনে শৃঙ্খলাও মজবুত করেছি,' বলেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে