শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গবেষণা-ভাতা ফেরত চেয়ে ইউজিসির পত্রের নিন্দা ঢাবি শিক্ষক সমিতির

ঢাবি প্রতিনিধি
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩৮

সম্প্রতি সরকারি হিসাব সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির বরাত দিয়ে ইউজিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের সঙ্গে 'বিধি-বহির্ভূতভাবে' গবেষণা-ভাতা হিসেবে প্রদত্ত ৮৮, ৪১০০০/- টাকা চার সপ্তাহের মধ্যে ফেরত দেওয়ার জন্য একটি চিঠি প্রদান করে। এই চিঠির নিন্দা জানিয়ে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক ইস্যুকৃত একটি পত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নজরে এসেছে। পত্রটির প্রাপক মূলত বাংলাদেশের অন্য কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগীয় প্রধানগণ। কিন্তু উক্ত পত্রে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সরকারি হিসাব সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির বরাত দিয়ে উক্ত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের সঙ্গে 'বিধি-বহির্ভূতভাবে' প্রদত্ত গবেষণা-ভাতা হিসেবে প্রদত্ত ৮৮, ৪১০০০/- টাকা চার সপ্তাহের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি মনে করে, এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যমূলকভাবে 'বিধিবহির্ভূত' শব্দযুগল ব্যবহার করা হয়েছে, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের সঙ্গে ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত এবং বরাদ্দকৃত বাজেট থেকেই নির্দিষ্ট পরিমাণ গবেষণা ভাতা প্রদান করা হতো, এবং সেটা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত একটি রীতি ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে এই ভাতা প্রদান বন্ধ করা হয়েছে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ সহজভাবে মেনে নেননি।

কারণ গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত উন্নতির জন্য বাধ্যতামূলক, সকল শিক্ষককেই গবেষণা করতে হয়। তাই গবেষণা-ভাতা তাদের জন্য একটি যৌক্তিক প্রণোদনা, এটি তাদের অধিকার। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের সিনেট ও সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত বাজেট অনুসারে শিক্ষকদের প্রদত্ত টাকা ফেরৎ চাওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এ রকম একটি সুবিধাকে হঠাৎ করে 'বিধি-বহির্ভূত' হিসেবে আখ্যায়িত করা এবং ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে লেখা চিঠিতে বিবৃতিরে অপ্রাসঙ্গিকভাবে এর উল্লেখ ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য নতুন নতুন কঠোর নীতিমালা প্রণয়ণের পাশাপাশি তাদের জন্য প্রচলিত নানা রকম সুবিধা কর্তনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যা সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষের জন্ম দিচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার সম্ভাবনা তৈরি করছে।

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্ত্বশাসন প্রদান করা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেও ঘোষণা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, যদিও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর সে উদ্যোগ আর বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদা প্রদানের বিষয়টিকে সমর্থন করেছিলেন।

বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র গঠনের সুতিকাগার এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর কোনো ধরনের অযৌক্তিক শর্ত আরোপের অপচেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কোনো অবস্থাতেই মেনে নেবে না। তাই আমরা অনতিবিলম্বে উক্ত চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষক সমিতি কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে