বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপর হামলার প্রতিবাদে চবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি 

চবি প্রতিনিধি
  ২০ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৪
ছবি-যাযাদি

সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফে ফেরার পথে বে-ক্রুজ জাহাজের স্টাফ কর্তৃক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১৯ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা অতিসত্বর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদি হয়ে মামলা করার দাবি জানান। পাশাপাশি দাবি আদায় না হলে তারা সহিংস আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা।

এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে 'পযটন কেন্দ্রে সন্ত্রাস কেন?' , 'শিক্ষকের বুকে লাথি, কিভাবে জ্বলনে শিক্ষার বাতি' , 'ছাত্র শিক্ষকের নিরাপত্তা কোথায়?', 'স্বাধীন দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা কোথায়', 'লাঞ্চনাই কি গুরুদক্ষিণা?' ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্লেকার্ড দেখা যায়।

অবস্থান কর্মসূচিতে ৫ দফা দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। দাবিসমূহ হলে- দাবিসমূহ হলো- এই ঘটনার সাথে জড়িত জাহাজের স্টাফ সন্ত্রাস বাহিনীকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল জাহাজের লাইসেন্স আজীবনের জন্য বাতিল করতে হবে। বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল জাহাজ কর্তৃপক্ষের মিথ্যা ও বানোয়াট স্টেটমেন্ট প্রত্যাহার পূর্বক লিখিত মুসলেকা দিয়া নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। জাহাজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জান-মালের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতির জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অবস্থান কর্মসূচিতে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ট্যুরে গিয়ে জাহাজ স্টাফদের হামলার শিকার হয়েছি। আমরা ওখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমরা ঝামেলা তৈরি করতে যাইনি। কিন্তু আমাদের উপর জাহাজ স্টাফ ও স্থানীয়রা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হামলা করেছে।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার ৫ দিনেও নামমাত্র একজনকে আটক করা ছাড়া অন্য কোনো অপরাধী এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে যে মামলা করার কথা ছিল সেটার ব্যাপারেও আমরা কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাই নি।

অথনীতি বিভাগের মাহফুজুল ইসলাম জিহান বলেন, আজকে আমরা রাস্তায় নামার কথা ছিল না। আমাদের থাকার কথা ছিল ক্লাসরুমে। কিন্তু প্রশাসন আমাদেরকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু মুখে মুখেই আশ্বাস দিতে পারে। কাজের কাজ কিছুই করতে পারে না। আমরা বলে দিতে চাই, মুখে মুখে আশ্বাসে শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখা যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা দৃশ্যমান ব্যবস্থা দেখতে না পাচ্ছি ততক্ষণ আমরা আন্দোলন থেকে এক চুলও নড়ব না। আজকের এই অবস্থান কর্মসূচি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের নিকট দাবি থাকবে অতিসত্বর অপরাধীদের বিরুদ্ধে যেন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

অবস্থান কর্মসূচিতে চবি প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার শিক্ষাথীদের আস্বস্ত করে বলেন, এ ধরনের কর্মকান্ডে পুরো শিক্ষকসমাজ কলঙ্কিত। এ ঘটনায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি । তোমাদের এ আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি।

দাবি আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা হস্তান্তরের জন্য অফিশিয়াল কিছু প্রসিডিওর থাকে। তাছাড়া মামলা হস্তান্তর করলে মামলা দুর্বল হয়ে যায়। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মামলা হস্তান্তর না করে মামলায় বাদী ও স্বাক্ষী দেওয়া শিক্ষার্থীদের মামলা পরিচালনার জন্য সব রকমের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ নিবে।

আসামী গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, আসামী যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা জেলে আছে। বাকি যারা আছে তারা

জামিনে বাইরে আছে। এটা একটি জুডিশিয়াল ব্যাপার এখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। জাহাজের লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে যা করণীয় তার সর্বোচ্চটা আমরা করবো। আপাতত বে-ক্রুজ জাহাজ বন্ধ আছে। আর শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টা ২৩ তারিখের মিটিংয়ে জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হবে।

প্রসঙ্গত, গেল মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সেন্টমার্টিন থেকে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতকোত্তর ব্যাচ ট্যূর শেষে বেক্রুজ-১ ইটারন্যাশনাল জাহাজে করে টেকনাফ ফিরছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, টেকনাফ থেকে ফেরার সময় পথিমধ্যে আসনে বসাকে কেন্দ্র করে ঝামেলা সৃষ্টি করে বে-ক্রুজ-১ জাহাজের স্টাফরা। প্রথমে তর্কতর্কির এক পর্যায়ে দুই শিক্ষকসহ ১০ জন শিক্ষার্থীর উপর লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমন করে জাহাজের স্টাফরা। পরে দমদমিয়া ঘাটে পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় দফায় আবারও হামলা চালানো হয়। এতে ২জন শিক্ষক ও ১জন ছাত্রীসহ প্রায় ২০ এর অধিক আহত হয়। যার মধ্যে ১০ জন গুরুতর আহত হয়।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে