ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল প্রতিষ্ঠিত হয় প্রখ্যাত মুসলিম জনহিতৈষী, ধার্মিক, উদার ও জ্ঞানী ব্যক্তি মুহম্মদ মুহসীনের নামে। হলটিতে ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু হওয়া মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাব বরাবরের মতো এবারও আয়োজন করেছে ‘৩য় হাজী মুহম্মদ মুহসীন স্মারক আন্তঃ ক্লাব বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২৩’।
গত ০২ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ও ০৫ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) হাজী মুহম্মদ মুহসীনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে "যুদ্ধ নয়, মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশায়" এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এই প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হল এবং অন্যান্য ১২ টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৩২টি টিম অংশগ্রহণ করে। এশিয়ান সংসদীয় পদ্ধতিতে ও প্রথম পর্যায়ে ট্যাব পদ্ধতি অনুসরণ করে বিতর্কটিতে ফাইনালে উঠে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ক্লাব।
মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়া চূড়ান্ত বিতর্কে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটিকে (সরকারি দল) ৭-০ ব্যালটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ক্লাব (বিরোধী দল)। এসময় শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন বিরোধী দলের উপনেতা নাইমুর রহমান। এতে স্পিকার হিসেবে ছিলেন মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সাবেক বিতার্কিক ড. মো শামীম রেজা।
এরপর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এসময় বিতর্কে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি ইতিপূর্বে মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত কুইজ ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ছয় জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ফুয়াদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এবং প্রধান আলোচক হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সহপাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে বিতর্কের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বিতর্কের মাধ্যমেই মানবিক মানুষ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। কারণ, বিতর্কের মাধ্যমে যুক্তির চর্চা হয় এবং বিভিন্ন মতামতের গ্রহণযোগ্যতা এখানে থাকে। যার ফলে, বিতর্ক করে যে সকল বিজ্ঞ মানুষ তৈরি হয় তারা মানবিক পৃথিবী তৈরিতে ভূমিকা পালন করতে পারে। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য এই ধরনের বিতর্কের মাধ্যমে যুক্তিশীল ও স্মার্ট জনবল তৈরি করতে হবে।
মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ফুয়াদ হোসেন বলেন, হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মানবিকতা সর্বজনবিদীত। মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাব বিশ্বাস করে, বর্তমান বিশ্বে ম্যাটারিয়ালিস্টিক চিন্তা-ভাবনার এই ক্ষণে মানুষের মধ্যে মানবিকতার যে চর্চা সেটি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এরকম বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিতার্কিক এবং অন্যান্যদের মধ্যে আমরা যদি মানবিকতার চর্চাকে সমন্বিত করতে পারি, সেটি আদতে ব্যক্তিজীবনে, সমাজজীবনে এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসবে। এই ধারণায় বিশ্বাস করেই মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাব এই আয়োজন করে থাকে। আমরা বিশ্বাস করি, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই ধরনের প্রতিযোগিতা বিতার্কিক, সমাজ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে নতুন চিন্তার খোরাক দিবে। একইসাথে, আগামীর সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবার মানবিক গুণাবলিতে প্রসিদ্ধ হবে।
এছাড়া, অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান, মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাবের মডারেটর আইনুল ইসলাম, শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান মাসুম বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন।
দুইদিন ব্যাপী এই বিতর্ক প্রতিযোগিতাটির মূল বিচারক পর্ষদে ছিলেন, অনিন্দ্য রহমান, জিহাদ আল মেহেদি, নিপু ইসলাম তন্নী ও আবু তাহের।
উল্লেখ্য, ২১শতকের বিশ্বে ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসন, উন্নত বিশ্বের জাতীয় নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিতে পারমানবিক প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি, বানিজ্য যুদ্ধ এবং এ্যাগ্রেসিভ ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি অস্থিতিশীল করে তুলছে এই পৃথিবীকে। বিশ্বনাগরিক হওয়ার হাতছানির সাথে ম্যাটারিয়ালিস্টিক জীবনভাবনার সংযোগ জন্ম দিচ্ছে আত্নকেন্দ্রীক যাপিত জীবনের। হারিয়ে যাচ্ছে হাজী মুহসীনদের রেখে যাওয়া মানবিকতা। এজন্য যুদ্ধ নয়, মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশা নিয়েই আয়োজিত হয় এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা।
যাযাদি/ এস