সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

দাকোপে কারেন্ট পোকার আক্রমনে হাজারো কৃষক দিশেহারা

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
  ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:০৪

চলতি আমন মৌসুমে খুলনার দাকোপে অধিকাংশ আমন ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমন ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে প্রতি রাতে ইঁদুরও ধান গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। পোকা দমনে কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের কিটনাশন স্প্রে এবং ইঁদুর দমনে বিষ বা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে আমন চাষে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় গত বছরের মত এবারও মোট ১৯ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উপসি ১৬ হাজার ১৫৫ হেক্টর, স্থানীয় জাত ২ হাজার ৯২৫ হেক্টর ও হাইব্রিড ১৫০ হেক্টর।

বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় সব এলাকায় ব্যাপক ভাবে কারেন্ট পোকাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ইঁদুরের উৎপাতও ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনের বেলায় ইঁদুরগুলো গাছে বা মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকে। আর রাতে ইঁদুরে ধান গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। ফলে ধান গাছ শুকিয়ে লাল হয়ে মারা যাচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ার কারনে ধান ক্ষেতে পোকার উপদ্রব বেড়েছে বলে কৃষকরা মনে করেন। পোকার আক্রমন থেকে ধানক্ষেত রক্ষায় একদিকে কৃষকরা বারবার বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ¯েপ্র করছেন অন্যদিকে ইঁদুর দমনে বিষ বা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেও ইঁদুরের উৎপাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। ফলে আমন চাষে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আর আমন উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রাও অর্জিত না হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

উপজেলার খলিসা এলাকার কৃষক বিমল বিশ^াস বলেন, এবছর তিনি ৯ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আমনের চাষ করেছেন। কিন্তু প্রায় ২ বিঘার মত জমির ধান গাছ ইঁদুরে কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। ধান গাছে ফলন আসার মুহুর্তে কারেন্ট পোকার আক্রমন ও ইঁদুরের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ¯েপ্র করে কারেন্ট পোকা থেকে ফসল রক্ষার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন কারেন্ট পোকার থেকেও বেশি ক্ষতি করছে ইঁদুরে। ইঁদুর দমনে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিষ ব্যবহার করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে লোকসানের আশংকায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন।

সাবেক ইউপি সদস্য চুনকুড়ি এলাকার কৃষক জীবননান্দ মন্ডল, মুকুল সরদার, সাহেবের আবাদের সির্দ্ধার্থ চৌকিদার, বাজুয়ার গৌরপদ হালদার জানান, অনাবৃষ্টি অতিবৃষ্টি এবং ক্ষরার কারনে আমন ফসলে কারেন্ট, মাজরা, লেদা পোকার আক্রমনসহ বিআর ২৩ ধান গাছ লাল হয়ে যাওয়া রোগ দেখা দিয়েছে। বিগত বছর গুলোতে এক বার কিটনাশক স্প্রে করলেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হতো। আর এবছর তিন থেকে চারবার কিটনাশক স্প্রে করেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না যে ফসল ঘরে উঠবে। এবছর এমনিতেই দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে ব্যাপক খরচ হয়েছে তারপর আবার পোকার আক্রমন ও ইঁদুরের উৎপাত থেকে ফসল রক্ষায় হিমসিম খেতে হচ্ছে। এতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এছাড়া বানিশান্তা, কামারখোলা, গুনারী, কামনিবাসিয়া ও বটবুনিয়া এলাকার আরো একাধিক কৃষক একই অভিমত ব্যক্ত করেন।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদকে বলেন, এবছর ইঁদুরে ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর জমির ধান গাছ কেটে নষ্ট করে ফেলেছে। আর কারেন্ট পোকাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমনও বেড়েছে। এসব পোকা ও ইঁদুর দমনে বিভিন্ন বাজারে ও প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে কৃষকদের জন্য আমরা ভ্রাম্যমান কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র চালু করেছি। এছাড়া প্রত্যেক পোল্ডারে মাইকিং করা হয়েছে। মাঠ দিবস করেও কৃষকদের পরামর্শ ও সচেতন করার চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে