রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

যবিপ্রবিতে ২৫ মার্চ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ 

যবিপ্রবি প্রতিনিধি
  ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৯:২৩

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাক্কালে ২৫ মার্চ ভয়াল কালো রাতে সমগ্র দেশে পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যযজ্ঞ, লুণ্ঠন ও নির্যাতন চালানোর ঘটনা স্মরণে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ‘স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন এবং সেই অনুযায়ী তরুণদেরকে বর্তমান বাংলাদেশকে বিনির্মাণের আহ্বান জানান।

আজ সোমবার দুপুরে যবিপ্রবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের গ্যালারিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যা ও ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ‘স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা’ অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, একজন বিজ্ঞানী যেমন একটি দল গঠন, একটি হাইপোথিসিস নির্ধারণসহ নানান স্তরে গবেষণা কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে নিজেকে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে আবির্ভূত করেন। ঠিক তেমনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠনের মাধ্যমে যুব সমাজকে সংগঠিত করেন, এরপরে যতগুলো আন্দোলন হয়েছে- ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি উত্থাপন, ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান। এরপরে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে তিনি মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এভাবে বঙ্গবন্ধু নিজেকে রাজনীতির একজন সফল বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

নারী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে সশস্ত্র বিগ্রেড গড়ে তোলা হয়। ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের নেতৃত্বস্থানীয় ছাত্রীদের নেতৃত্বে বিগ্রেড পরিচালিত হতে থাকে। বিগ্রেড পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন ছাত্রী নেত্রী কাজী রোকেয়া সুলতানা রাকা। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমি থাকতাম রোকেয়া হলে। ওই দিন আমার ভীষণ জ¦র। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ হঠাৎ যখন শুনলাম ইয়াহিয়া খান গণ-পরিষদের অধিবেশন বন্ধ ঘোষণা করেছেন। তখন শুনেই আমি ডাইনিংয়ের কাছে গিয়ে চিৎকার করে বললাম অধিবেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমি যখন হলের গেটে চলে আসলাম, তখন আমার পেছনে দুইশ ছাত্রী। আমরা মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।’ এছাড়া তিনি দীর্ঘ বক্তৃতায় ২৫ মার্চ ভয়াল কালো রাতে ঢাকা শহরের উপর নির্মম নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নুহ-উল-আলম লেনিন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ হঠাৎ করেই যখন শুনলাম ইয়াহিয়া খান গণ-পরিষদের অধিবেশন বন্ধ ঘোষণা করেছেন, তখন ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ স্লোগানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা শহর মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়।’ ২৫ মার্চ দুপুরের দিকে যখন জানা যায়, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলা করতে পারে তখন রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। কিন্তু সকল কিছু উপেক্ষা করে মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনী ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা ঘটায়। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ পর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রবিউল আলমও তাঁর সম্মুখ সমরের বীরত্ব গাঁথা তুলে ধরেন।

আলোচনা সভায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথার গল্পগুলো অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে ডিজিটালি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। তাহলে এটি এক সময় অনেক অমূল্য সম্পদ হবে।

ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. অভিনু কিবরিয়া ইসলামের সভাপতিত্বে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব প্রমুখ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে যবিপ্রবির বিভিন্ন অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান ও দপ্তর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যবিপ্রবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম সামিউল আলম। বাদ জোহর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের রূহের মাগফিরাত কামনায় কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া-মোনাজাত করা হয়।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে