যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ২০১৪ সালে ছাত্রলীগ কর্তৃক নির্মমভাবে খুন হওয়া পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দীর্ঘ ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও রিয়াদের পরিবার এখনও পর্যন্ত সঠিক বিচার ও ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে জানান তৎকালীন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, "আমরা রিয়াদের ন্যায়বিচার চাই। ১০ বছরেও যদি বিচার না হয়, তাহলে এই দীর্ঘসূত্রতা আমাদের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রমাণ। আমরা তার পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা এবং দ্রুত বিচার দাবি করছি।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাশেদ খান বলেন, “স্বৈরাচারী হাসিনার আমলে বাংলাদেশের কোনো খুনেরই বিচার হয়নি। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে প্রত্যেকটি ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ দ্বারা অনিরাপদ ছিল, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রাখা হতো। রিয়াদ ভাই অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন, তিনি সবসময় অন্যায় ও অবিচারের প্রতিবাদ করতেন। সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই তিনি সবার কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। সেই জনপ্রিয়তাকে হিংসা করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দশ বছর পেরিয়ে গেছে, আমরা এখনও বিচার পাইনি। আমরা দ্রুত বিচার চাই এবং তার পরিবারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা দাবি করছি। পাশাপাশি, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যত খুন হয়েছে, তাদের সবার বিচার চাই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ সেশনের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মির্জা সানি বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। রিয়াদ ভাইয়ের মতো একজন ভালো মানুষকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে হত্যা করা হয়েছে। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, অর্থাৎ তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের নেতা আনোয়ার হোসেন বিপুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা শামীম ও তার সহযোগীরা, তারাই আবার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে শহরে মিছিল করেছিল। আমরা দ্রুত এ ঘটনার বিচার চাই এবং রিয়াদের পরিবারের পাশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।”
২০১১-১২ সেশনের অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তপু রায়হান বলেন, "রিয়াদ ভাইয়ের রুমমেট ছিলাম। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না, সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন এবং শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এতদিন পরও সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার পাইনি। আমরা দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখতে চাই এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে রিয়াদ ভাইয়ের পরিবারের পাশে দেখতে চাই।”
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মারুফ হাসান সুকর্ণ বলেন, “তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বিপুল ও রওশন ইকবাল শাহী সহ যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। রিয়াদ ভাইয়ের পরিবারের জন্য সহযোগিতা চাই। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিচার কার্যক্রম শুরু না হলে কঠোর থেকে কঠোরতম আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।”
শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের (পিইএসএস) এক শিক্ষক বলেন, 'আজকে রিয়াদ ভাইয়ের পরিবারের কেউ উপস্থিত থাকলে আমরা আরও খুশি হতাম। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সাথে যোগাযোগ করবে এবং মামলার কাজ সম্পূর্ণ করবে। আমরা সুষ্ঠু ও সঠিক বিচারের প্রত্যাশা করছি।”
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা আরও জানান, রিয়াদের পরিবার বিচার এবং কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ না পেয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তারা রিয়াদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই যবিপ্রবির প্রধান ফটকের সামনে রিয়াদকে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী। কিন্তু এতদিন পরও হত্যাকারীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে, যা রিয়াদের পরিবার ও সহপাঠীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
যাযাদি/ এম