বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে হামলাকারীদের ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণ, নিশ্চুপ যবিপ্রবি প্রশাসন

যবিপ্রবি প্রতিনিধি
  ১৯ জুন ২০২৫, ১৮:৩৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে হামলাকারীদের ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণ, নিশ্চুপ যবিপ্রবি প্রশাসন
ছবি: যায়যায়দিন

জুলাই বিপ্লবের দশ মাস পেরিয়ে গেলেও বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও হত্যার হুমকিদাতা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচার করতে পারেনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) প্রশাসন। আওয়ামী শিক্ষক-কর্মকর্তা ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন ও ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণকে জুলাইয়ের স্পিরিটের সাথে যবিপ্রবি প্রশাসনের বিশ্বাসঘাতকতা বলে অবহিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, জুলাই বিপ্লবে অংশ নেওয়ায় গতবছর ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে শিক্ষার্থীদেরকে মারধর ও নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেয় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ঐদিন সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শিহাব (পিইএসএস বিভাগ), সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম হৃদয় (এফবি বিভাগ), রাকিব হাসান (এফবি বিভাগ) ও ফাহিম মোর্শেদসহ (ফার্মেসি) আরো কয়েকজন নেতাকর্মী শিক্ষার্থীদেরকে এক দফা মারধর করে হল থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকরামুল কবির দ্বীপ (এফএমবি বিভাগ) ও এদের নেতৃত্বে শহীদ মসীয়ূর রহমান হলে ঐদিন গভীর রাতে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদেরকে দ্বিতীয় দফায় মারধর করে বের করে দেয়। শিক্ষার্থীকে মারধরকারী ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হাসান ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণ ও ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও যবিপ্রবি প্রশাসন কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ছাত্রলীগ নেত্রী ও জিইবিটি বিভাগের শিক্ষার্থী আসমা সাদিয়া সূচি ১৫ জুলাই যবিপ্রবির আবাসিক হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের পরিকল্পনায় নির্যাতনকারী দ্বীপ, শিহাব ও হৃদয়কে সর্বাত্মক সহযোগীতা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও জুলাইয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের দমাতে দিকনির্দেশনা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সূচির বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিউল আজিম বলেন, জুলাই আন্দোলনে জড়িত এবং নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তৎকালীন ভিসির মদদে ছাত্রলীগ কর্তৃক হামলার শিকার হয় এবং হল ছাড়তে বাধ্য হয়। যার নেতৃত্বে ছিল ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শিহাব, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম হৃদয়, ফিন্যান্স ব্যাংকিংয়ের রাকিব ও ফার্মেসী বিভাগের ফাহিম মোর্শেদ।

আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে নতুন ভিসি স্যার নিয়োগ পেলে প্রক্টর স্যার বরাবর অভিযোগ করি। তারা বিভিন্ন সময় নানা অজুহাত দিয়েছেন।

আজ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ তারা নেননি। এছাড়া নতুন ভিসি স্যার আসার পর আন্দোলনকারী এবং তৎকালীন আহতদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের অবস্থাও জানতে চাননি।

এছাড়াও জুলাই আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যবিপ্রবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের সমর্থন দেওয়ায় টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব বিন মোত্তালিবকে ক্যাম্পাস থেকে তার বিভাগের শিক্ষার্থীরা বয়কট ঘোষণা করলেও এক অদৃশ্য বলয়ে সরাসরি ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে ৩ আগস্ট কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যবিপ্রবির প্রধানফটক ও দেয়ালে জুলাই গ্রাফিতি অংকন করলে ঐদিন মধ্যরাতে তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শিহাব, এস এম ইকরামুল কবীর দ্বীপ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম হৃদয়ের নেতৃত্বে ইসমে আজম শুভ (এফএমবি বিভাগ), অন্তর দে শুভ, বেলাল হোসেনসহ (এফবি বিভাগ) আরো কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী জুলাই গ্রাফিতি মুছে দেয় ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিবির আখ্যা দিয়ে সরাসরি জবাই করার হুমকি প্রদান করে। এ ঘটনারও বিচার করেনি বর্তমান প্রশাসন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা।

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধ বিচরণ ও বিচারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু বিচারের লক্ষ্যে আওয়ামী আমলে নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিষয়ে প্রশাসনকে ডকুমেন্টস প্রদান করে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু করতে সহযোগিতার জন্যে শিক্ষার্থীদেরকে অনুরোধ করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে