রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আম হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন চাষাবাদকৃত ফল

কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ
  ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আম হচ্ছে একটি খুবই সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও দৃষ্টিনন্দন জনপ্রিয় ফল। পৃথিবীজুড়েই এর চাষাবাদ হয়। সব অঞ্চলেই বিভিন্ন ধরনের আমের চাষাবাদ দেখা যায়- যা বিভিন্ন শ্রেণির ভোক্তাদের চাহিদা পূরণে ফ্রেশ ফল হিসেবে অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে আম। বর্তমানে মানুষের আর্থিক সঙ্গতি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মানুষ মৌলিক খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি অধিক পুষ্টিকর ও অন্যান্য গুণাগুণসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণের দিকে ঝুঁকছে। এর কারণে দেশীয় জাতের পাশাপাশি কৃষি বিজ্ঞানীরা পরিবেশের সহিত খাপখাওয়ানো সম্পন্ন ও মানুষের বিভিন্ন চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আমের ১৪টি জাত

উদ্ভাবন করেছে।

আম হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন চাষাবাদকৃত একটি ফল। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী আমের উৎপত্তিস্থল ও বিস্তার নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। বিখ্যাত বিজ্ঞানী ব্যভিলভ (১৯২৬)-এর মতে আমের উৎপত্তিস্থল প্রাচীন ইন্দো-বার্মা অঞ্চল। এই অঞ্চলে প্রান্তরগত হলো প্রাচীন হিমালয়ের পাদদেশ বিস্তৃত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলসমূহ। যার মধ্যে রয়েছে প্রাচীন ভারতের পূর্বাংশ, বার্মা ও আন্দামান দীপপুঞ্জ- যা বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত। আরও পূর্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৪,০০০ বছর হতে এই সব অঞ্চলের অন্তর্গত আসামের পাহাড়ি অঞ্চল ও আশপাশের এলাকায় আমের বন্যপ্রজাতি জন্মাতেও দেখা যায়।

আমের মূল উৎপত্তিস্থল ইন্দো-বার্মা অঞ্চলের অন্তর্গত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান। সে আলোকে বাংলাদেশকেও আমের উৎপত্তিস্থল বিবেচনা করা যায়। মুখার্জির মতো অনুযায়ী টেক্সোনোমি ও মলিকুলার তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতকে আমের বিবর্তনের মূল স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূবর্ অংশ মিয়ানমার, প্রাচীন বার্মা ও ভারতের পূর্বাঞ্চলের সহিত সংযুক্ত হওয়ায় এই অঞ্চলে আমের একটি বন্যপ্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ২০১৭ এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫২টি বিভিন্ন জাতের আমের মধ্যে প্রধানত ৩১টি সমাকৃত জাতের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তথ্য মতে প্রায় ৮টি বহুল সমাদৃত ভৌগোলিক নির্দেশক আমের জাত রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ফজলি, ল্যাংরা, গোপালভোগ, খিরসাপাত, আশ্বিনা, লক্ষণভোগ, সূর্যপুরী ও হাঁড়িভাঙা। এ সব জাতে বিভিন্ন জিনগত বৈশিষ্ট্যের মধ্য হতে স্বাদ, গন্ধ ও অন্যান্য মানগত বৈশিষ্ট্য ওই নির্দিষ্ট এলাকার আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর নিবিড়ভাবে নিভর্রশীল এবং এই জাতগুলোর ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণে এদের উলিস্নখিত বৈশিষ্ট্যগুলোও পরবর্তিত হয়ে যায়।

ইতোমধ্যে জামদানি, ফজলি আম, রংপুরে লাইমকে অন্য দেশ কর্তৃক ওই দেশের সম্পদ হিসেবে স্বত্বাধিকার বা প্যাটেন্ট নেওয়া হয়েছে। এই ধরনের বায়োপাইরেসি রোধকল্পে বাংলাদেশ সরকার দেরিতে হলেও আমাদের দেশীয় বিভিন্ন ফসলসহ অন্যান্য সম্পদের প্যাটেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় খিরসাপাত আমকে ডিপার্টমেন্ট অব প্যাটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড টেডমার্ক (ডিপিডিটি) কর্তৃক ভৌগোলিক নির্দেশক জাত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে যা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ওই ফসলের ওই জাতের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।

আমের জাতগুলো বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় সারাদেশে এর চাষাবাদ হচ্ছে ও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। পূর্বে এক সময় আমের উৎপাদন বৃহত্তর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হলেও এখন দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলেও আমের ব্যাপক চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে বারি আম-৩ এর চাষাবাদ সারাদেশ জুড়ে একটি বিপস্নব তৈরি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে আমের রপ্তানি আরও প্রসারিত হবে।

কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশের আমকে আমরা ব্যাপকভাবে বিশ্ব বাজারে নিয়ে যেতে চাই। সেজন্য, রপ্তানি বাধাসমূহ চিহ্নিত করে তা নিরসনে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে, নিরাপদ আমের নিশ্চয়তা দিতে তিনটি ভ্যাকুয়াম হিট ট্রিটমেন্ট পস্ন্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। উৎপাদন থেকে শিপমেন্ট পর্যন্ত আম নিরাপদ রাখতে উত্তম কৃষি চর্চা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে