রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

কার্তিক মাসের কৃষি

কৃষি ও সম্ভাবনা ডেস্ক
  ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

বাংলা পুঞ্জিকায় কৃষির জন্য কার্তিক মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে অনেক ফসল মাঠে বপন ও প্রস্তুতি নেয়ার উপযুক্ত সময়। এ ছাড়া প্রাণী ও মাছেও নতুন করে কিছু কাজ করতে হয়। কার্তিক মাস। হেমন্ত ঋতুর আগমন। বাংলাদেশের প্রাণ ও প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর সময়। বাংলার মাঠ প্রান্তরে সোনালি নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে ছড়িয়ে পড়ে। মাঠ ভরে উঠে সোনা রঙা ধানে। মাঠে বীর কৃষকরাও ব্যস্ত থাকেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে।

এ মাসে অনেকের আমন ধান পেকে যাবে তাই রোদেলা দিন দেখে ধান কাটতে হবে। আগামী মৌসুমের জন্য বীজ রাখতে চাইলে প্রথমেই সুস্থ সবল ভালো ফলন দেখে ফসল নির্বাচন করতে হবে। এরপর কেটে, মাড়াই-ঝাড়াই করার পর রোদে ভালো মতো শুকাতে হবে। শুকানো গরম ধান আবার ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে। বীজ রাখার পাত্রকে মাটি বা মেঝের ওপর না রেখে পাটাতনের ওপর রাখতে হবে।

কার্তিক মাসের দ্বিতীয় পক্ষ থেকে গম বীজবপনের প্রস্তুতি নিতে হয়। দোআঁশ মাটিতে গম ভালো হয়। অধিক ফলনের জন্য গমের আধুনিক জাত যেমন- আনন্দ, বরকত, কাঞ্চন, সৌরভ, গৌরব, শতাব্দী, সুফী, বিজয়, বারি গম-২৭, বারি গম-২৮ বপন করতে হবে। বীজ বপনের আগে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। সেচযুক্ত চাষের জন্য বিঘাপ্রতি ১৬ কেজি এবং সেচবিহীন চাষের জন্য বিঘাপ্রতি ১৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে।

এখন আখের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ভালোভাবে জমি তৈরি করে আখের চারা রোপণ করা উচিত। আখ রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৯০ সেমি. থেকে ১২০ সেমি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৬০ সেমি. রাখতে হবে। এভাবে চারা রোপণ করলে বিঘাপ্রতি ২২০০-২৫০০ চারার প্রয়োজন করা হয়।

ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে এবং জমি তৈরি করে বীজবপন করতে হবে। ভুট্টার উন্নত জাতগুলো হলো বারি ভুট্টা-৬, বারি ভুট্টা-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৮, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১ এসব।

কার্তিক মাস সরিষা চাষেরও উপযুক্ত সময়। সরিষার প্রচলিত জাতগুলোর মধ্যে টরি-৭, রাই-৫, কল্যাণীয়া, সোনালি, সম্পদ, বারি সরিষা-৬, বারি সরিষা-৭, বারি সরিষা-৮ উলেস্নখযোগ্য। জাতভেদে সামান্য তারতম্য হলেও বিঘাপ্রতি গড়ে ১ থেকে ১.৫ কেজি সরিষার বীজবপনের প্রয়োজন হয়। বিঘাপ্রতি ৩৩-৩৭ কেজি ইউরিয়া, ২২-২৪ কেজি টিএসপি, ১১-১৩ কেজি এমওপি, ২০-২৪ কেজি জিপসাম ও ১ কেজি দস্তা সারের প্রয়োজন হয়। সরিষা ছাড়াও অন্যান্য তেল ফসল যেমন- তিল, তিসি, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী এ সময় চাষ করা যায়।

আলুর জন্য জমি তৈরি ও বীজ বপনের উপযুক্ত সময় এ মাসই। হালকা প্রকৃতির মাটি অর্থাৎ বেলে দোআঁশ মাটি আলু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ভালো ফলনের জন্য বীজ আলু হিসেবে যে জাতগুলো উপযুক্ত তাহলো ডায়মন্ড, মুল্টা, কার্ডিনাল, প্যাট্রেনিজ, হীরা, মরিণ, অরিগো, আইলশা, ক্লিওপেট্রা, গ্রানোলা, বিনেলা, কুফরীসুন্দরী এসব। প্রতি বিঘা জমি আবাদ করতে ২০০-২৭০০ কেজি বীজ আলুর দরকার হয়। এক বিঘা জমিতে আলু আবাদ করতে ৪৫ কেজি ইউরিয়া, ৩০ কেজি টিএসপি, ৩৩ কেজি এমওপি, ২০ কেজি জিপসাম এবং ২ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন হয়। তবে এ সারের পরিমাণ জমির অবস্থাভেদে কম-বেশি হতে পারে। তাছাড়া বিঘাপ্রতি ১.৫ টন জৈবসার ব্যবহার করলে ফলন অনেক বেশি পাওয়া যায়। আলু উৎপাদনে আগাছা পরিষ্কার, সেচ, সারের উপরিপ্রয়োগ, মাটি আলগাকরণ বা কেলিতে মাটি তুলে দেয়া, বালাইদমন, মালচিং করা আবশ্যকীয় কাজ। সময়মতো সব কাজ করতে পারলে খরচ কমে আসে, ফলন বেশি হয়। নদীর ধারে পলি মাটিযুক্ত জমি এবং বেলে দোআঁশ প্রকৃতির মাটিতে মিষ্টি আলু ভালো ফলন দেয়। তৃপ্তি, কমলা সুন্দরী, দৌলতপুরী আধুনিক মিষ্টি আলুর জাত।

ডালকে বলা হয় গরিবের আমিষ। আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে ডাল ফসল চাষে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মুসুর, মুগ, মাষকলাই, খেসারি, ফেলন, সয়াবিন, ছোলাসহ অন্যান্য ডাল এ সময় চাষ করতে পারেন। এজন্য উপযুক্ত জাত নির্বাচন, সময়মতো বীজবপন, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, পরিচর্যা, সেচ, বালাই ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করতে হবে।

শীতকালীন শাকসবজি চাষের উপযুক্ত সময় এখন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বীজতলায় উন্নতজাতের দেশি-বিদেশি ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, বাটিশাক, টমাটো, বেগুন এসবের চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলায় বীজবপন করতে হবে। আর গত মাসে চারা উৎপাদন করে থাকলে এখন মূল জমিতে চারা রোপণ করতে পারেন। রোপণের পর আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ, সেচ নিকাশসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে। তাছাড়া লালশাক, মুলাশাক, গাজর, মটরশুঁটির বীজ এ সময় বপন করতে পারেন। স্বল্প সময়ে ফলন পেতে লালশাক, মুলাশাক, পালংশাক, লেটুস, ধনিয়া এসবের বীজবপন করুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে