রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ব্রি'র বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী উদ্ভাবন

দেশীয় উপযোগী প্রথম কম্বাইন হারভেস্টার

ইঞ্জিনিয়ার সাজ্জাদ হোসেন
  ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) প্রথম দেশীয় উপযোগী কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে। এই কৃষিযন্ত্রটি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের কৃষকরা একই সঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি করতে পারবেন। প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তারা তাদের সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় করতে পারবেন। এই হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটলে খড়ের কোন ক্ষতি হবে না, খড় আস্ত থাকবে।

শতভাগ কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের মধ্যে সরবরাহের লক্ষ্যে বর্তমানে কৃষিযন্ত্রটি চায়না, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। এই ধরনের একটি যন্ত্র বিদেশ থেকে আমদানি করতে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। সেখানে ব্রি হেড ফিড কম্বাইন হারভেস্টারটি ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকায় প্রস্তুত করা সম্ভব। ফলে এর উৎপাদন খরচ আমদানিকৃত কম্বাইন হারভেস্টারের তুলনায় অনেক কম হবে।

দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরিকৃত বিধায় যন্ত্রটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ প্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা হবে না। স্থানীয়ভাবে এই যন্ত্রটি ব্যাপকভাবে তৈরি করা সম্ভব হলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় 'ব্রি হোল ফিড কম্বাইন হারভেস্টার' নামে আরেকটি হার্ভেস্টার উদ্ভাবন করা হয়েছে- যার সাহায্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে বিনামূল্যে ধান কাটার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

হেড ফিড হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটলে খড়ের কোনো ক্ষতি হবে না, খড় আস্ত থাকবে। দেশের কৃষকরা যারা পশুপালন করেন তাদের কাছে পশুর খাদ্য হিসেবে খড়ের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যেসব অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পশুপালন করা হয় সেখানে শুকনো খড়ের রয়েছে বিশেষ চাহিদা। তাছাড়া কৃষকরা জ্বালানি, কাঁচা ঘরের ছই দেয়া, বীজ জাগ দেয়াসহ নানা কাজে খড় ব্যবহার করেন। তাই ধানের খড় সংরক্ষণ করাও অত্যন্ত জরুরি- যা এই যন্ত্রের একটি বাড়তি সুবিধা বলে বিবেচিত হবে।

বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার প্রাপ্ত স্বনামধন্য কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় এই অত্যাধুনিক যন্ত্রটি তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক শিল্প সক্ষমতার ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

স্থানীয় কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে আলীম ইন্ডাস্ট্রিজের কারিগরি সহযোগিতায় দেশে এই প্রথম আন্তর্জাতিকমানের দেশীয় উপযোগী ব্রি হেড ফিড কম্বাইন হারভেস্টারটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এই যন্ত্রটি উদ্ভাবন গ্রম্নপের প্রধান গবেষক ছিলেন ওই প্রকল্পের ট্রকল্প পরিচালক ও ব্রি'র খামার যন্ত্রপাতি ও ফলনোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর এ কে এম সাইফুল ইসলাম, সহযোগী গবেষক ছিলেন একই বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান পিন্টু ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরাফাত উলস্নহ খান।

'যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদের লক্ষ্যে খামার যন্ত্রপাতি গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধিকরণ' প্রকল্পের অর্থায়নে উন্নয়নকৃত ব্রি হেড-ফিড কম্বাইন হারভেস্টারের প্রথম প্রটোটাইপের মাঠ পরীক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সিলেটের খাদিমনগরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কৃষি খামারে সোমবার এই মাঠ পরীক্ষণ সম্পন্ন হয়। মাঠ পরীক্ষণ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন- কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া এবং অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. মাহবুবুল হক পাটোয়োরী এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মহাপরিচালক ডক্টর মো. শাহজাহান কবীর।

এ বিষয়ে উদ্ভাবক ডক্টর এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ কর্তনোত্তর অপচয় ১২ থেকে ১৫ ভাগ- যা যান্ত্রিকীকরণের আওতায় আনলে ৫ থেকে ২২ ভাগ ফলন বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অনেক এগিয়ে গিয়েছে, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ খুচরা যন্ত্র তৈরি হচ্ছে- যা বেশ উন্নত মানের। কৃষি ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে এই বিশাল কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ কৃষি ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে