শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কণ্ঠস্বরে ভাঙুক শিকল কণ্ঠস্বরে আসুক বিপস্নব

মো. ফাহাদ হোসেন
  ০৫ জুন ২০২১, ০০:০০

বিতর্ক একটি শিল্প। বিতর্কের মাধ্যমে একজন বিতার্কিক যে কোনো বিষয়ে গভীরভাবে আত্মস্থ এবং বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনা করতে শেখে। মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে বিতর্কের ধারা ও মানুষের যুক্তিবোধ। একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিতর্কের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ডিবেটিং সোসাইটি মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজন করে মুজিববর্ষ জাতীয় বিতর্ক উৎসব ২০২১ 'রক্তাক্ত বিপস্নব'। আন্তঃক্লাব এশিয়ান সাংসদীয় পদ্ধতিতে ২০ মে থেকে ২২ মে অনলাইন পস্ন্যাটফর্মে আয়োজিত হয় জাতীয় মানের এ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। দীর্ঘ এক দশক পর এটাই ছিল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির আয়োজিত প্রথম জাতীয় মানের কোনো বিতর্ক প্রতিযোগিতা।

'শিকল ভাঙার কণ্ঠস্বরের অনুনাদ'-এ শিরোনামকে সামনে রেখে আয়োজিত এজাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিপস্নব ও বিপস্নবের নায়কদের চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে আয়োজক নোবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটি। মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে লাখো কোটি মানুষের রক্ত ও শ্রমের বিনিময়ে যুগে যুগে বিভিন্ন বিপস্নবের মাধ্যমে অর্জন করা অধিকারের ইতিহাস এবং নেতৃত্বদানকারী সেই মহান বিপস্নবীদের পরিচয়কে তুলে ধরা হয় প্রতিযোগিতার মূল থিমের মাধ্যমে। এতে স্থান পায় তিতুমীর, দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর, লেলিন, মহাত্মা গান্ধী, লক্ষ্ণী বাঈ, আব্রাহাম লিংকন, ওমর মুখতার, প্রীতিলতা, ইয়াসির আরাফাতের মতো আরও অনেক ঐতিহাসিক বিপস্নবীর চরিত্র।

অনলাইন পস্ন্যাটফর্মে আয়োজিত এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সরকারি ও বেসরকারি ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২টি বিতার্কিক দল। সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতায় ২৪ জন মূল বিচারকের সমন্বয়ে ৬০ জন বিচারক প্যানেল অংশগ্রহণ করে। তিনব্যাপী এ তর্কযুদ্ধের ২০ ও ২১ মে প্রাথমিক রাউন্ড, ২১ মে রাতে কোয়ার্টার ফাইনাল, ২২ মে সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল ও সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ফাইনাল ও সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার উল আলম।

'রক্তাক্ত বিপস্নব' বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ফাইনালে বিতর্কের বিষয় ছিল 'এই সংসদ বিশ্বাস করে, বাংলা সাহিত্য তার আটপৌরে সংস্কৃতির নিগড় থেকে বের হতে না পারাটাই তাকে বিশ্বসাহিত্যে মলিন করে রেখেছে।' এ প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির বিতার্কিক দল এবং প্রস্তাবের বিপক্ষে দলের ভূমিকায় যুক্তি উপস্থাপনা করে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি বিতার্কিক দল। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির বিতার্কিক দল ও রানার্সআপ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক দল। ডিবেটার অফ দ্যা টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক তালহা জুবায়ের এবং ডিবেটার অফ দ্যা ফাইনাল নির্বাচিত হন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক সৌমেন সরকার।

পুরো বিতর্ক প্রতিযোগিতার মিডিয়া সহযোগীর ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেছিল সময় টেলিভিশন, দৈনিক আমার সংবাদ, বার্তাবাজার, দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।

আয়োজন সম্পর্কে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি সভাপতি সৈয়দ মুমতাহিম মান্নান সিয়াম বলেন, '২০২০ সালের শুরুর দিকে যখন কোভিড লকডাউনের কারণে একাডেমিক পড়াশোনা, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা যখন একেবারেই বিপর্যস্ত, সেই সময়টাতেই অনলাইনে বিতর্কের চর্চা জন্য হয়ে এসেছিল আশীর্বাদ। তারই ধারাবাহিকতায় এবার অনলাইনে আমরা নিজেরাই জাতীয় বিতর্ক উৎসব আয়োজন করছি। বিপস্নবের মতো একটি ভিন্নধর্মী থিম নিয়ে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টটির ডিজাইন ও বিচারক পর্ষদ বাংলা বিতর্ক জগতে এক অভাবনীয় সাড়া ফেলে। যার ফলে প্রায় ৫০টির মতো ক্লাব রেজিস্ট্রেশন করে। সেখান থেকেই ৩২ দলকে নিয়ে আমাদের এই আয়োজন। জাতীয় পর্যায়ের বর্তমান ও সাবেক বিতার্কিক, বিচারকরা তাদের ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও আমাদের সময় দিয়ে টুর্নামেন্টটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছেন। একই সঙ্গে পরামর্শ ও আর্থিক দিক দিয়ে সহযোগিতা করায় আমি ক্লাবের বর্তমান ও সাবেক সদস্যদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

তিনি আরও বলেন, 'অংশগ্রহণকারী বিতার্কিক, বিচারক ও শ্রোতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আশা করি খুব শিগগিরই আমরা নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসেই দেশসেরা বিতার্কিক ও বিচারকদের অংশগ্রহণে অসাধারণ আরও কিছু আয়োজন উপহার দিতে পারব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে