রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্ন

আবু সাইদ কামাল
  ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
স্বপ্ন

মহাখালীর একটি নির্মাণাধীন বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটের মেসে থাকে মাসুম। বিদেশে যাওয়ার জন্য হোটেল অ্যান্ড টু্যরিজমে দু'বছর মেয়াদের একটি কোর্স করছে। মফস্বল শহরের ছেলে মাসুম। মেসে প্রায় ১০টি ছেলে থাকে। সবাই রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত। ওরা সবাই এসেছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। মেস থেকে মাসুমের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হাঁটার দূরত্বে। মেস আর ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের বৃত্তেই কাটে মাসুমের দিন। হঠাৎ সেদিন তার মফস্বল শহরের এক প্রতিবেশী ছেলে এসে বলে, মাসুম ভাই! আপনার কি সময় হবে? -কেন? -আমার এক খালাম্মার বাসায় ক্লাস ফাইভের একটা মেয়েকে এক বেলা তার পড়া দেখাতে পারবেন? সপ্তাহে তিন-চারদিন দেখালেই চলবে। -ঠিক আছে, আমি একটু ভেবে দেখি! প্রতিবেশী ছোটভাই নাফিজের অনুরোধে তার দুসম্পর্কের খালার বাসায় পড়াতে রাজি হয় মাসুম। বিকালের অবসরে নিপাদের বাসায় পড়াতে যায়। নিপা তার ছাত্রী। মেস থেকে নিপাদের বাসা বেশি দূরে নয়। হাঁটার দূরত্বে। ওদের বাসায় যাতায়তের কারণে একটা পারিবারিক পরিবেশে সময় কাটানোর সুযোগ হয়। নিপার মাকে আন্টি বলে ডাকে। একটি এনজিওতে চাকরি করেন নিপার মা। নিপার বড়বোন পপি। প্রথম দিনই পপির সঙ্গে মাসুমকে পরিচয় করিয়ে দেয় নাফিজ। অনেক সময় অফিস থেকে ফিরতে আন্টির বেশ দেরি হয়। তখন সুযোগ বুঝে পপি কখনো নিপার পড়ার ঘরে ঢোকে। নানা অজুহাতে মাসুমের সঙ্গে কথা বলে। পপি ছাত্রী হিসেবে খারাপ ছিল না। গত বছর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারেনি। তাই এবারও সে ইন্টার পরীক্ষা দেবে। ফুলের মতো লাস্যময়ী পপি। আকর্ষণীয় তরুণী। প্রজাপতির রঙিন পাখার মতো পপিও তার বাহারি পাপড়ি মেলে ধরে। কখনো কোনো একটা ছুতোয় নিপার পাঠ শেষ হওয়ার আগেই বাসার ভেতরে পাঠিয়ে দেয় পপি। সেই সুযোগে মাসুমের সঙ্গে চুটিয়ে গল্প করে। নিবিড় সুযোগে পাশে বসে মাসুমের ঘনিষ্ঠ হতে চায়। মাসুম তার চুলের মদিরা ঘ্রাণে আমোদিত হয়। কখনো ওড়নার আলতো ছোঁয়া লাগে মাসুমের গায়ে। তখন মাসুমের বুকে অদ্ভুত পুলক জাগে। চিরহরিৎ পাহাড়ের ঝর্নাজলে সহসা যেন নেমে আসে ক্রৌঞ্চ-মিথুন। ধ্যানমগ্ন হয় নিভৃত ঝর্না-পাহাড় প্রকৃতিতে। হঠাৎ বিবেক নামের খেক শিয়ালের হানায় পাখিযুগল আকাশে ডানা মেলে উড়ে যায়। পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি নিয়ে পপির আহ্বানে মাসুম খুব সতর্কভাবে সাড়া দেয়। এভাবে প্রায়শই নিপার পাঠ শেষে পপির সঙ্গে গল্পপর্ব চলে মাসুমের। পপির মা কখনো অফিস থেকে ফিরে দেখতে পায় মাসুমের সঙ্গে পপি গল্পরত। মা তাতে রক্ষণশীলতার ভূমিকা না নিয়ে বরং প্রশ্রয় দেয়। এতে মাসুম যতটা না সাহসী হয়, তারচে' বেশি ভাবনায় পড়ে। পপির বিমুগ্ধ আহ্বানে যদিও মাসুম আলোড়িত হয়, কখনো তার সম্মোহনী আচরণে জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো রহস্যের আঁচ পায়। তখন মাসুম মনে মনে ভাবে, মফঃস্বলের ছেলে আমি, না বুঝে-না শুনে আবার কোনো ফাঁদে...। এমন ভাবনা থেকেই পপির আগ্রহে সতর্ক আচরণ মাসুমের। পাছে পপির আগ্রহে ভাটা পড়ে এ জন্য শীতল আচরণেও যায় না। আবার একেবারে খোলামেলাভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগও দেয় না। ওদের সঙ্গে পারিবারিক আলোচনায় মাসুম জানতে পারে, মাস কয়েক আগে পপির চাকুরে বাবা সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে প্রাণ হারায়। তারপর থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারটি পড়ে নানা সংকটে। এ তথ্যটি জানার পর থেকে মাসুম আর নিপাকে পড়ানোর বিনিময়ে ওদের কাছ থেকে টিওশন ফি নেয় না। পপির তিন মামা। ওরা সবাই সামরিক-বেসামরিক অফিসার। মাসুম নিপাকে পড়ানোর সময়ও তার মামারা তাদের বাসায় এক সন্ধ্যায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। এই বাড়ি ছাড়াও শহরে ওদের আরও জায়গা আছে বলে মাসুমের সঙ্গে আলোচনায় বলেছে পপি। পরিবারে পপি, নিপা ও তাদের মা এবং কাজের বুয়া ছাড়া আর কোনো সদস্য নেই। পাশে পপির চাচারা আছে। তবে তাদের সঙ্গে পপির আম্মার সম্পর্ক ভালো না। পরিবারটির সামাজিক অবস্থান, পপির রূপ-মাধুর্য, তার অব্যক্ত আমন্ত্রণ সব মিলিয়ে মাসুমের কাছে স্বপ্নের মতো ঠেকে। তাই অবচেতন মনে সে কখনো পপিকে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর হয়। ততদিনে তার তিনটি সিমিস্টার সম্পন্ন হয়। প্রতি সিমিস্টারেই পরীক্ষার ফলাফলে মাসুম শীর্ষস্থান অধিকার করে। তার এমন ফলাফলের কথা শুনে পপি খুশি হয়। সে মাসুমকে জানায় যে, তার এমন সাফল্যের বিষয়ে পপি তার মামাদের সঙ্গে আলাপ করে। শুধু তাই না, তার অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গেও নাকি মাসুমের বিষয়ে গর্বের সঙ্গে আলোচনা করে। মাসুমকে নিয়ে আলোচনা করতে পপি স্বচ্ছন্দবোধ করে। এভাবে তিনটি সিমিস্টার সম্পন্ন করে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে। বাকি আর একটি সিমিস্টার সম্পন্ন করতে হবে পেন পেসিফিক সোনারগাঁও হোটেল ও হোটেল শেরাটনে ইন্টার্নিশিপ করে। ইন্টার্নিশিপের শেষের দিকে হোটেল কর্মচারীদের আচরণে ক্লান্ত এবং অতিষ্ঠ হয় মাসুম। ভারাক্রান্ত মনে ছুটির দিন বিকালে চলে যায় পপিদের বাসায়। পপি তার মন খারাপের বিষয় জানতে চাইলে মাসুম বলে, হোটেল কর্মচারীদের অসম্মানজনক আচরণের কারণে বোধ হয় কোর্সটা বুঝি শেষ করতে পারব না। পপি তাকে প্রবোধ দিয়ে বলে, ঢেউয়ে ঢেউয়ে উত্তাল নদী পার হয়ে শেষে কিনারে নৌকা ডুবিয়ে দেবেন কি? ধৈর্য ধরে থাকুন, আর ক'টি দিনই তো বাকি! পপির কথা শেষ হতে না হতেই তার মা কক্ষে ঢুকে। মাসুমকে বলে, তুমি আজ সন্ধ্যায় একবার আমাদের বাসায় আসতে পারবে কি? -জি আন্টি আসতে পারব। -হঁ্যা এসো। তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে। এই বলে পপির মা ভেতরে চলে যায়। পপি মায়ের অলক্ষ্যে মুখ মোচড় দিয়ে তার বিরক্তি প্রকাশ করে। মাসুম তখন বুঝতে পারে, মা-মেয়ের মাঝে কেমন যেন একটা অব্যক্ত দ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল। কেন যেন পপি তার মাকে সহ্য করতে পারে না। আন্টিকে দেওয়া কথামতো মাসুম ফের সন্ধ্যায় পপিদের বাসায় আসে। পপি ও নিপা তখন পড়ার টেবিলে। মায়ের সঙ্গে কথা বলতে আসায় পপি কিছুটা শীতল আচরণ করে মাসুমের সঙ্গে। পপির মায়ের কক্ষে দীর্ঘক্ষণ কথা চলে মাসুমের সঙ্গে। সময়ের পরিমাপে প্রায় দেড় ঘণ্টা। আন্টি তার বড় মেয়ে পপি সম্পর্কে মাসুমকে এমন কিছু তথ্য জানায়- যা শুনে মাসুম শুধু হতবাকই নয়, হয় স্তম্ভিতও। আন্টির কথা শুনে মাসুম মনে মনে বলে, ইন্টর্নিশিপ করতে গিয়ে সে আর কতটুকু ধৈর্য ধরেছে, তারচে' শতগুণ ধৈর্যের শেকলে নিজেকে বেঁধে রেখেছেন আন্টি। মাসুম সম্মোহিতের মতো আন্টির পরিবারের মর্মান্তিক কাহিনী শুনে যায়। শেষে আন্টি সমর্পিত কণ্ঠে বলে, বাবা মাসুম! পপি যেহেতেু তোমার সঙ্গ পেতে পছন্দ করে, তাই তুমি ওই অন্ধকার জগৎ থেকে তাকে আলোর পথে এনে দাও বাবা! জবাবে মাসুম বলে, জি আচ্ছা! আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব আন্টি। এই বলে মাসুম বিদায় নেয়। মেসের উদ্দেশে হাঁটছে আর মাসুম ভাবছে। রাজ্যের ভাবনা তার মাথার চারপাশে ঘিরে ধরে। একপর্যায়ে মনে মনে বলে, পপি কেন এমন একটা ভুল করল! কীভাবে যাচাই-বাছাই না করে একটা সন্ত্রাসীর সঙ্গে সম্পর্ক করতে গেল! ওই সম্পর্ক তার মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন কেউ মেনে নিতে পারছিল না। ওই সন্ত্রাসীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য যে রাতে বাবা তাকে শাসন করল, পরের রাতেই ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয় তার বাবা। তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের মাঝে একটি রহস্যঘেরা ঘটনা এটি। যে ঘটনাটি পরিবারটিকে একেবারে ছন্নছাড়া এবং স্তম্ভিত করে দিয়েছে। আন্টির মনে সন্দেহ- ওই ভয়ংকর সন্ত্রাসীই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু সরাসরি তার কথা বলতেও পারে না। যদিও অন্য একটি মামলায় ভয়ংকর সন্ত্রাসীটি এখন জেলে। মাসুম রাতের পথে হাঁটে আর মনে মনে ভাবে, পপিকে নিয়ে কখনো অবচেতনভাবে স্বপ্ন দেখতাম, সচেতন মনে তাকে নিয়ে ভাবতামও। এখনো কি তেমন স্বপ্ন দেখব? না দেখলেও তো আন্টির কথা রাখতে গিয়ে পপিকে স্বপ্ন দেখিয়েই যেতে হবে। তবে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার পর এ কোর্সটি তো সে করছে একটি লক্ষ্য নিয়ে। তার শিক্ষকরা বলেছে, পরীক্ষার ফলাফল যেহেতু ভালো, স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় সহজেই যেতে পারবে। তাই যতদিন দেশে কিংবা ঢাকায় আছে, ততদিন তো সময় পাবে। এ সময়ে পপির প্রলম্বিত রাতের অশুভ অন্ধকার যতক্ষণ না শেষ হবে, ততক্ষণ তো তাকে স্বপ্ন দেখিয়েই যেতে হবে। সময় ও সুযোগ থাকলে পপির জীবনে রাঙা প্রভাত দেখা না দেয়া পর্যন্ত তাকে সঙ্গ দিয়েই যাবে। দুই. কিছুদিনের মাঝেই মসুমের প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ হয়। এবার সে আইইএলটিএস কোর্সে ভর্তি হয়। মাঝে মাঝে যায় নিপাকে পড়াতে। দেখা হয় পপির সঙ্গে। একদিন হঠাৎ এক সুযোগে পপি গোপনে একটি চিঠি দেয় মাসুমের হাতে। চিঠিতে সরাসরি প্রেম নিবেদন করেনি। করেছে বন্ধুত্বের নিবেদন। মাসুম তো নিজে ততদিনে তাকে বন্ধুত্বের অধিক মর্যাদায় ঠাঁই দিত মনে। বিষয়টা তার মনে খটকা লাগে। তাছাড়া ছেলেমেয়েদের মাঝে শুধুমাত্র বন্ধুত্বে বিশ্বাসী নয় মাসুম। সে ভেবে নিয়েছে, বখাটে ওই সন্ত্রাসী ছেলেটির সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক অটুট রেখে পপি বুঝি তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছে। সেই বিবেচনায় মাসুম আর চিঠির কোনো জবাব দেয়নি। এদিকে আইইএলটিএস কোর্সের জন্য পড়াশোনার কাজে বেশ ব্যস্ত হয়ে যায় সে। সেজন্য পপিদের বাসায় যেতে পারেনি কিছুদিন। এ কোর্সের সবক'টি পরীক্ষা দিয়ে মেস ছেড়ে মাসুম মফঃস্বল শহরের বাড়ি চলে যায়। উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ কাজে মাঝে মাঝে ঢাকায় যেতে হয়। মেস ছেড়ে আসার মাস দুই পরে সে ঢাকায় যায়। ও সময় সে পপিদের বাসায় গেল। তখন বাসায় কেবল পপির মা। মাসুমের দেখা পেয়ে পপির মা কাঁদতে কাঁদতে বলে, পপি শেষ পর্যন্ত সেই বখাটে ছেলেটার হাত ধরেই চলে গেছে। এ ঘটনায় আমাদের মান-সম্মান আর রইল না। আমাদের উঁচুমাথা একেবারে ভূলুণ্ঠিত হয়ে গেছে। মাসুম যতটা পারে প্রবোধ দিয়ে আসে আন্টিকে। তবে ভেতরে ভেতরে তার মনেও দহন শুরু হয়। তাই বিদায় নিয়ে তড়িঘড়ি ঢাকা ছাড়ার জন্য তৎপর হয়। রওয়ানা হয় মফঃস্বল শহরের বাড়ির উদ্দেশ্যে। মহাখালী বাসস্টেন্ডে এসে চাপে বাসে। জানালা পথে দূর দিগন্তে তাকিয়ে নিজের সঙ্গে হিসাবনিকাশ করে। মনে মনে বলে, পপি শেষ পর্যন্ত এমন একটা কাজ করতে পারল! পরিবারে অশান্তির মূল কারণ ছিল সে। মাকে ততটা জ্বালিয়েছে, সন্তানের জন্য নিঃশব্দে যতটা জ্বলতে পারে মা। তাছাড়া আত্মীয়স্বজন সবার মুখে চুন-কালি মেখে সে কিনা সেই ছেলেটার হাত ধরে চলে গেল- যার জন্য বাবাকে পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে? উচ্ছন্নে যাওয়া একটি মেয়ে পরিবারের জন্য আর কতটা সর্বনাশ করতে পারে! মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন তো তার মঙ্গল চিন্তাই করত। সবশেষে মাসুম ভাবে, পপি তো আমাকেও স্বপ্ন দেখিয়েছে। আমাকে নিয়ে সেও কি স্বপ্ন দেখেনি? মাসুম বিশ্বাস করতে পারছে না যে, সেটা ছিল তার নিরেট ছলনা। কিংবা সময় কাটানোর সঙ্গী। স্বপ্ন-ভাঙা মন নিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে মাসুম। প্রাণপণ চেষ্টা চালায় বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে। সেই প্রয়াসে মাস তিনের মাঝেই একটি স্কলারশিপ পেয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় ইংল্যান্ডে চলে যায়।

এক বছর পর অনকেটা কৌত‚হলবশে লন্ডন থকেে ঢাকায় ফোন করে পপরি মা’র কাছ।ে কাকতালীয়ভাবে ফোন ধরে পপ।ি অবাক হয় মাসুম। মনে মনে বল,ে যে ময়েকেে ত্যাজ্য করার কথা, সে কনিা এখন তাদরে বাসায়! অবাক কণ্ঠইে মাসুম বল,ে তুমি এ বাসায় কী কর?ে

-আর বলবনে না। এনজওি’ এর একটা র্কমসূচতিে মা চলে গছেনে পাকস্তিান।ে সখোনে যাওয়ার আগে আমাকে বাসায় রখেে যান। আজ প্রায় দড়েমাস উনি সখোন।ে আজ র্পযন্ত মা’র সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করতে পারছি না।

-তাই নাক?ি তাহলে আমি দখেি কী করতে পার।ি

মাসুম জানে আর্ন্তজাতকি একটা স্বনামধন্য এনজওিতে চাকরি করনে তনি।ি সইে সূত্র ধরে পরদনিই পপরি সঙ্গে তার মায়রে আলাপ করয়িে দয়ে। এভাবে ক’দনি পর পরই মায়রে সঙ্গে কথা বলার দরকার হলে পপি মাসুমকে জানায়। মাসুম তখন লÐন থকেে মা-ময়েরে ফোনে সংযোগ ঘটয়িে দয়ে। অতঃপর ওরা কথা বল।ে এভাবে ফোনে মাঝে মধ্যে পপরি সঙ্গে কথা চলে মাসুমরে। ততদনিে সে ইন্টারমডিয়িটে পরীক্ষা পাস করছে।ে

মা পাকস্তিান থকেে ফরিলে পপি আবার স্বামীর বাসায় চলে যায়। পপি ফোনে মাসুমকে জানায়, স্বামীর সঙ্গে সর্ম্পকটা ভালো যাচ্ছে না। লোকটরি উগ্র মজোজ। ফরে উচ্চশক্ষিার জন্য কোনো শক্ষিা প্রতষ্ঠিানে র্ভতি হইÑ এটা তার পছন্দ না। এসব নয়িে কথা কাটকাটতিে কখনো আমার গায়ে হাত তুল।ে

-তাই নাক?ি

-তাই আমি চাই নজিরে পায়ে দাঁড়াত।ে কন্তিু এমন শক্ষিাগত যোগ্যতায় তো ভালো চাকরি পাব না।

এভাবে পপি মাসুমরে সঙ্গে পরার্মশ কর।ে মাসুম বল,ে র্পযটন করপোরশেনে আট মাসরে একটি র্কোস আছ।ে সটোতে র্ভতি হতে পার।

পপি তাতে আগ্রহী হয়। মাসুমই তখন লন্ডন থকেে ফোনে যাবতীয় খােঁজখবর নয়ে। পপি সইে র্কোসে র্ভতরি জন্য আবদেন কর।ে অধ্যক্ষরে কাছে মাসুমরে সুপারশিে পপি শষে র্পযন্ত পপি সখোনে র্ভতি হয়। কন্তিু তার স্বামী তা পছন্দ করে না। এমন কি প্রশক্ষিণ র্কোসে অংশ নওেয়ার জন্য যাতায়ত খরচও দয়ে না। ওদকিে মা’র কাছওে তো টাকা চাইতে পারে না। তাই অনকে সময় বাধ্য হয়ে পায়ে হঁেটে ক্লাস করতে যায় পপ।ি

লন্ডনে যাওয়ার বছর দুই পরে মাসুম এক মাসরে জন্য বাড়ি আস।ে তখন পপরি সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পপি তার সঙ্গে দখো করতে চায়। তার প্রশক্ষিণ র্কোস শষেরে পথ।ে মাসুম সদেনি মফঃস্বল শহর থকেে ঢাকা যায়। পপি তার প্রতষ্ঠিান থকেে বাসায় ফরোর পথে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে মাসুমরে সঙ্গে দখো কর।ে ওরা একটা কপি হাউজে আড্ডা দয়ে কছিুক্ষণ। তারপর যায় রস্টেুরন্টে।ে খাওয়া-দাওয়া আর গল্পে গল্পে কাটে র্দীঘক্ষণ। তারপর একটা সএিনজতিে উঠে ওরা। মাসুম নামবে হোটলে রডেসিন।ে আর পপি যাবে ক্যান্টনমন্টে।ে

সএিনজতিে নবিড়ি আলাপনে মাসুম বল,ে তুমি একটা চঠিি দয়িছেলি।ে তাতে বন্ধুত্বরে নবিদেন ছলি। আমি কন্তিু তোমার কাছ থকেে তখন তার অধকি কছিু আশা করছলিাম। কারণ, ততদনিে তোমাকে রানি হসিবেে মনে ঠাঁই দতিে প্রস্তুত আম।ি ছলেমেয়েরে বন্ধুত্বে আমি বশ্বিাসী ছলিাম না।

জবাব দতিে গয়িে পপি একবোরে ভঙেে পড়।ে বল,ে একী র্সবনাশ আপনি করলনে? আমি তো চঠিি দয়িছেলিাম আপনার মনোভাব জানার জন্য। ময়েরো কি সব কথা সরাসরি বলতে পার!ে তখন যদি আপনি সাড়া দতিনে তাহলে তো আমার জীবনটা এমন নরকে নক্ষিপ্তি হয় না। আমওি তো মনে প্রাণে আপনাকে চয়েছেলিাম। কন্তিু আপনি যখন চঠিরি কোনো জবাব দনেন,ি তখন আমার স্বপ্নও ভঙেে যায়। ওদকিে আমার পরবিারওে সবার সঙ্গে চলছলি দ্ব›দ্ব। আমাকে নয়িে সংসারে চরম অশান্ত।ি তা থকেে সবাইকে মুক্তি দওেয়ার জন্যই নজিরে পায়ে কুড়াল মারলাম আম।ি এ জন্যই এমন একটা আত্মঘাতী সদ্ধিান্ত নয়িে বাখাটে ওই সন্ত্রাসী ছলেরে হাত ধরে চলে যাই। তার ঘর করতে গয়িে বুঝলাম, আমি কী ভুল করছে।ি এখন আমি জাহান্নামে জ্বলছ।ি

এই বলে অর্ন্তভদেী কষ্টে পপি সএিনজতিে বসইে কান্না জুড়ে দয়ে। পপরি বসোমাল কান্না দখেে মাসুম বব্রিতকর অবস্থায় পড়।ে মনে মনে ভাব,ে কঠনি কষ্টরে মাঝে না পড়লে কনেো নারী এভাবে অসহায় কান্নায় ভঙেে পড়তে পারে না। মাসুম অনন্যোপায় হয়ে পপকিে প্রবোধ দওেয়ার চষ্টো কর।ে ততক্ষণে হোটলে রডেসিনরে কাছে সএিনজি থাম।ে এখানে তার বন্ধু কল্লোল তার অপক্ষোয় আছ।ে মাসুম নমেে যায় ওখান।ে ভাড়া চুকয়িে সএিনজতিে পপকিে পাঠয়িে তার স্বামীর বাসায়।

পপরি সর্মপতি কান্নায় মাসুমরে মনটায় ততক্ষণে বশে আদ্র হয়ে উঠছে।ে হোটলে রডেসিনে অপক্ষেমাণ বন্ধু কল্লোল ততক্ষণে এগয়িে আস।ে সনোবাহনিীর ক্যাপ্টনে কল্লোল তাকে নয়িে ঢুকে হোটলে রডেসিন।ে দুই বছর পর দখো। র্দীঘক্ষণ আড্ডা দয়িে মাসুম বদিায় নয়ে। রডেসিনরে উল্টাপাশ থকেে মফঃস্বল শহররে উদ্দশেে বাসে চপে।ে তনি ঘণ্টার বাস ভ্রমণরে প্রায় সারাক্ষণই পপরি ভাবনায় বভিোর থাক।ে খারাপ লাগে ময়েটেরি পরণিতরি কথা ভবে।ে বাস ভ্রমণরে পুরো সময়ে নজিরে সঙ্গে অনকে বোঝপড়া কর।ে একর্পযায়ে পপরি বষিয়ে মনস্তাত্ত¡িক বশ্লিষেণে গয়িে মনে মনে বল,ে জীবন-অভজ্ঞিতার মধ্য দয়িইে তো সত্যকে জানা যায়। একথা সত্য য,ে পপি তার মা-বাবার মনে অনকে কষ্ট দয়িছে।ে তার জন্যই অকালে জীবন দতিে হয়ছেে বাবাক।ে কাজইে প্রকৃতি তার প্রতশিোধ হয়তো বা নবে।ে পপি কি সইে পরণিতরি দকিইে এগোচ্ছ!ে

পপরি একজন শুভানুধ্যায়ী হসিবেে মাসুমরে যদওি তা কাম্য না। তবুও তো তার করার কছিু নইে। নয়িতি তাকে কই নয়িে যায়, তা সময়ই বলে দবে।ে

দখেতে দখেতইে এক মাস চলে যায়। আবার লন্ডনে উড়ে যায় মাসুম। লন্ডনরে উচ্চ শক্ষিার পাঠ চুকয়িছেে স।ে এবার একটি ফাইভস্টার হোটলেে এক বছররে জন্য ইর্ন্টানশিপি করতে যাবে আমরেকিায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে