সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৃতির রানীর বুকে আনন্দে মাতোয়ারা

আতহার নূর
  ০৬ মে ২০২৩, ০০:০০

সুন্দরবনের মতো অনিন্দ্য সুন্দর শব্দটার সঙ্গে সবাই পরিচিত। কর্কটক্রান্তির সামান্য দক্ষিণে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূল ধরে বিস্তৃত এই বিশ্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশিয়ে আছে বাঙালির জাতীয় আবেগ। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, রকমারি গাছপালা, বন্য পশুপাখি ও জীবজন্তু ঘেরা গা ছমছম পরিবেশে আমাদের ভ্রমণের দিনগুলো ছিল খুবই রোমাঞ্চকর।

আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী। কক্সবাজার সদর, রামু ঈদগাঁও উপজেলার বাসিন্দা। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে আমরা হয়তো বাংলাদেশের বহু দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছি। কিন্তু আমাদের বেশির ভাগই আগে কখনো সুন্দরবন দর্শনের সৌভাগ্য হয়নি। সেই আফসোস নিমিষেই ঘুচিয়ে দিলেন কক্সবাজার সদর রামু ঈদগাঁও স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং তার একমাত্র অভিভাবক চবির সাবেক কৃতী শিক্ষার্থী, জাতীয় পার্লামেন্টের সাবেক শ্রেষ্ঠ বক্তা, মাননীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমল (কক্সবাজার আসন ৩)। হঠাৎ, অ্যাসোসিয়েশনের অভিভাবক এমপি মহোদয় বলেন, আমি পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র ঘুরে বেড়িয়েছি কিন্তু কখনো সুন্দরবন যাওয়া হয়নি। চলো, আমি তোমাদের নিয়ে এবার সুন্দরবন ঘুরতে যাব। এখান থেকেই শুরু আমাদের অবারিত উচ্ছ্বাস আর আনন্দের মিছিল।

একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হিসেবে বিশ্বাস করি, ভ্রমণ সংস্কৃতি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটা ভ্রমণ আমাদের জীবনের দৈনন্দিন রুটিন থেকে বের করে নতুন পরিবেশ এবং নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলায়। প্রতি বছর একটা সময় বিরতিহীন ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, অ্যাসাইনমেন্ট, সেমিস্টার ফাইনাল এবং টিউশনের চাপে মনটা বিষণ্ন হয়ে আসে। তখন মন চায় সবকিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাই, হারিয়ে যাই প্রকৃতির সান্নিধ্যে। যেখানে শুধু পাখির কোলাহল, নেই শহরের এই যানজট আর প্রতিযোগিতায় জীবন।

তিন দিন ভ্রমণে দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চল থেকে যেসব জায়গাগুলো আমরা প্রধানত পরিদর্শন করি পদ্মা সেতু, টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ, বাগেরহাট ষাটগম্বুজ মসজিদ ও খানজাহান আলী মাজার, অতঃপর সুন্দরবনের কটকা, করমজল, দুবলার চর, নীল কমল, হাড়বাড়িয়ার ও হিরণপয়েন্টের মতো বিখ্যাত দৃষ্টিনন্দন জায়গাগুলো। বাগেরহাট হয়ে খুলনা মোংলা বন্দর থেকে জাহাজে করে প্রকৃতির রানী সুন্দরবনে প্রবেশ করি। লঞ্চের ছাদে বসে দেখলাম সূর্যাস্ত। সেই সঙ্গে জলে সিঁদুর রং মাখানো আকাশের প্রতিচ্ছবি, সব মিলিযে মোহনীয় রূপে প্রকৃতির সাজ। রাতে চারপাশে কেমন রহস্যময় সুন্দরের হাতছানি! রাতে লঞ্চের কেবিনে জমে উঠেছিল মজার আড্ডা, গান, নাচ ও কুইজ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।

অতঃপর নৌকা দিয়ে সুন্দরবনের এক একটা বিখ্যাত জায়গাগুলো ঘুরে বেড়ায়। পর্যটন কেন্দ্রের করমজলে প্রথমেই রয়েছে সুন্দরবনের মানচিত্র, যা সুন্দরবন সম্পর্কে মানচিত্র প্রাথমিক ধারণা দেয়। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সুন্দরবনের সব জায়গা পাখিদের চমৎকার আবাসস্থল, চতুর্দিকে সুন্দরী গাছের ছড়াছড়ি,

বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী তো আছেই। হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র, এ ছাড়া এখানে লবণাক্ত পানির কুমির, ডুবহাঁস, বানর, সাপ, শিয়াল, নদীর ডলফিন চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন জায়গায় কাঠের তৈরি সুন্দর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হরিণ, বানর, গুঁইসাপ ও কুমির দেখেছি। এবং এখানের সি বিচের পরিবেশ অত্যন্ত পরিছন্ন ও সুন্দর। এখানে বেলাভূমিজুড়ে আঁকা থাকে লাল কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। নিঃসন্দেহে সুন্দরবন একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়ের নাম। গোটা সফরে ফরেস্ট্রি প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক ও সহযোগিতা করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে