সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্মৃতির পাতায় সেরা দিনগুলো...

মো. ইফতে খারুল ইসলাম
  ২০ মে ২০২৩, ০০:০০

ভর্তিযুদ্ধে বিজয়ী একদল শিক্ষার্থীর আগমনী ঘণ্টা বাজে ১২০০ একরের সবুজ ছায়ায় ঘেরা কৃষি শিক্ষার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয় (বাকৃবি) চত্বরে। ৬ জানুয়ারি ২০১৯, আড়ম্বরপূর্ণ ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে শুরু হয় ১২৫০ একরে আমাদের পথচলা। একসঙ্গে এতগুলো নতুন মুখের মধ্যে ভিন্নতা ছিল কেবল ভিন্ন চেহারা ও বিভোরিত স্বপ্নে। নতুন একটি পরিবারের সঙ্গে যাত্রা শুরু হয় আমাদের। যেখানে পেয়েছিলাম বাবা-মা সমতুল্য শিক্ষক, ছিল বড় ভাইয়ের মতো আগলে রাখা সিনিয়র ভাইরা, ছিল আমার প্রাণের বন্ধুরা।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নতুন সদস্যদের একাংশের জায়গা হয়েছিল বাকৃবির অন্যতম সেরা হল ফজলুল হক হলে। প্রথম কিছুদিন বাসার জন্য মন খারাপ থাকলেও নতুন বন্ধুত্ব সময়টাকে আনন্দঘন করে তুলেছিল। তাছাড়া ভর্তির প্রথম দিন থেকেই সৌন্দর্যমন্ডিত ক্যাম্পাসে যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছিলাম।

আমাদের কর্মব্যস্ততা শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে। ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয়ে যায় একে অন্যের টুথপেস্ট, জুতা নিয়ে ছোটাছুটি। ওয়াশরুমে ছোটখাটো এক যুদ্ধের পর যাদের ক্লাস আছে তারা দল বেঁধে ক্লাসের উদ্দেশে ছোটে। প্রায়ই বিরতিহীনভাবে দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্লাস, ল্যাব চলতে থাকে। দুপুরের খাওয়া শেষ করে কেউ ছোটে ক্লাসে আর বাকিরা হলের দিকে।

সারাদিন ক্লাসের পর সবার মধ্যেই ক্লান্তি- অবসাদ এসে ভর করে। সেই অবসাদকে ছুটি দিতে বিকালবেলা ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের কোলে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো ও সম্বসুরে গান গাওয়া অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। মাঝেমধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট খেলাধুলায় মেতে ওঠে সবাই।

সন্ধ্যার পর যে যার কাজ সেরে হলে ফিরে আসে। আবার কেউ যায় টিএসসিতে সাংস্কৃতিক সংগঠনে। যেখানে নাচ, গানে মেতে ওঠে একদল শিক্ষার্থী। রাতে একসঙ্গে দল বেঁধে খেতে যাওয়া সত্যিই ভালো লাগার বিষয়। ক্লাসের পড়া ও ব্যবহারিক খাতা করতেই অর্ধেক রাত শেষ। অনেকে নিশাচরের মতো রাতের শেষ পর্যন্ত জেগে থেকে মুভি দেখে। বাকিরা যে যার মতো ঘুমাতে যায়।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে রাতের আনন্দ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। মাঝেমধ্যে রাতের মুড়ি পার্টি, মশারি দিয়ে মাছ ও ঋতুভিত্তিক ফল (আম, লিচু, নারিকেল, আমড়া ইত্যাদি) চুরির ঘটনার রাতগুলো জীবনের সবচেয়ে সেরা রাত।

এভাবেই কেটে যায় লম্বা একটি সময়। তারপর আসে 'ফ্রেনজি' ফিস্টের সেরা তিনটি দিন। এই ফিস্ট মানে শুধু যে বড়োসড়ো কোনো ভোজন তা কিন্তু নয়- বরং সঙ্গে যুক্ত থাকে সীমাহীন আনন্দ আর হই-হুলেস্নাড়সহ আরও কত কী! পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে রংবেরঙের আলপনা অঙ্কনসহ মজার মজার চিত্র সংবলিত পোস্টার, ব্যানার লাগানো হয়েছিল। আনুষ্ঠানিকতা তিন দিনের হলেও তার আয়োজন চলে ১৫ দিন আগ থেকেই। কেক কাটার মাধ্যমে ফিস্টের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সবাই মিলে কেক খাওয়ার পর শুরু হয় আতশবাজি ও ফানুশ উড়ানো। ফিস্টের দ্বিতীয় দিনে আয়োজন করা হয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের। রাতে সিনিয়র-জুনিয়র মিলে গ্র্যান্ড ডিনারের আয়োজন করা হয়। তৃতীয় দিনে সাদা টি-শার্ট পরিধান করে রং মাখামাখি উৎসবে মেতে ওঠে সবাই। রাতে জমকালো কনসার্ট আয়োজনের মাধ্যমে মধুময় তিনটি দিনের সমাপ্তি ঘটে।

প্রাপ্তির খাতায় যুক্ত হয় পরিবারের বাইরে বন্ধুদের নিয়ে গড়ে ওঠা অনন্য আর এক পরিবার। যারা একে অন্যের বিপদে-আপদে সবাই মিলে এগিয়ে আসে। যাদের সঙ্গে নিজের দুঃখ কষ্টগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়। এভাবে একসঙ্গে পথচলা সত্যিই অসাধারণ।

করোনা মহামারির কারণে সবাই আজ কোণঠাসায় জীবনযাপন করছে। মনে পড়ে যায় পেছনে ফেলে আসা আনন্দময়ী দিনগুলোর কথা। এই দিনগুলো কখনো ভোলার নয়। রয়ে যাবে চিরদিন স্মৃতির পাতায়। যে স্মৃতি অমলিন হয়ে বেঁচে থাকবে যুগ যুগ ধরে। ভালো থেকো বন্ধুরা, দেখা হবে সুস্থ পৃথিবীর বুকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে