সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থী-উন্নয়নে কাজ করছে 'গোল্ডেন স্টুডেন্টস'

মোহাম্মদ অংকন
  ২০ মে ২০২৩, ০০:০০

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু মানুষকে পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান শেখায় না, নেতৃত্ব ও সামাজিক কাজের গুণাবলি অর্জনের পথও বাতলে দেয়। তবে সবাই যে সামাজিক কাজের খাতায় নাম লেখায়, তাও নয়। ব্যতিক্রম থাকে দু-একজন। তেমনই গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ব্যতিক্রম এক তরুণের নাম এসএম নূর ইসলাম। তার পিতার নাম আবুল খায়ের শেখ। ২২ বছরের এই তরুণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবামূলক সামাজিক সংগঠন 'গোল্ডেন স্টুডেন্টস' গড়ে তুলে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সংগঠনের অন্যরা হলেন- আকরাম হোসেন হিসাম, আলাউদ্দিন মুন্সি, মামুন হোসেন, ওয়াসি আরাফাত, শিউলী বিশ্বাস, শায়লা রেজা রিতু, মনীষা মন্ডল, শাপলা বিশ্বাস প্রমুখ। সারা দেশে সাধারণ সদস্য রয়েছে দশ হাজারেরও বেশি।

এই সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্মোন্নয়নে সহায়তাকরণ; যোগ্যতা ও দক্ষতার উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাসহ শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাময় গুণাবলি বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা ও তাদের নৈতিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখছে। পিছিয়ে পড়া ও ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া, সৃষ্টিশীল, সামাজিক মানুষ ও সুনাগরিক সৃষ্টির লক্ষ্যে স্কুল-কলেজে বিভিন্ন কর্মশালা যেমন- আইকিউ টেস্ট, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বিষয়ভিত্তিক কুইজ, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, রক্তের গ্রম্নপ নির্ণয়, বই বিতরণ, ক্যারিয়ার গাইড-লাইন সেমিনার আয়োজন, বিনামূল্যে তথ্যসেবা ও সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি। ছাত্রছাত্রীসহ সব শ্রেণির মানুষের যে কোনো প্রয়োজনে বা বিপদে সর্বাত্মক সহযোগিতা করাও সংগঠনটির কাজেরই অংশ। এছাড়া পলস্নী অঞ্চলের মানুষের ক্ষুধা নিবারণ, দারিদ্র্যদূরীকরণ ও মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। মাদকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করতেও সংগঠনটিকে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে ৪০টি পরিবারে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহসহ নগদ টাকাও প্রদান করেছে।

সংগঠনের প্রধান এসএম নূর ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল আপনারা কেন এসব কাজ করেন? তিনি সাহসিকতার সঙ্গে জানান, 'স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ বলতে সাধারণত স্বার্থহীন কাজকে বোঝায় যা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোনো আর্থিক বা সামাজিক লাভের জন্য করে না। পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মধ্যেই মানবজীবনের স্বার্থকতা নিহিত। সেই চিন্তাবোধ থেকে আমরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেই শুধু নয়- মানুষ হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এ কাজগুলো করে থাকি, ভবিষ্যতেও করব। আমাদের সমাজে কেউ যদি ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষের পাশে এগিয়ে যেতে চায়, কিছু মানুষ তা বাঁকা চোখে দেখে। আর এভাবেই মৃতু্য হয় সমাজ থেকে নেতৃত্বের, স্বেচ্ছাশ্রমের। তাই আমাদের নেতিবাচক চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।'

'গোল্ডেন স্টুডেন্টস'নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিচালনা করতে গিয়ে তারা নানান প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন যা তার কথাতেও স্পষ্ট। এ ছাড়া সংগঠনের নিজস্ব কোনো আয় বা সঞ্চয় না থাকায় মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলা করতে হয়। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় এগিয়ে যেতে পারে না মানুষের বিপদে। সমাজের প্রতিষ্ঠিতরা হাত বাড়ালে এসব সমস্যা সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন নূর ইসলাম ও তার সংগঠনের সদস্যরা।

দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান এবং যেসব শিক্ষার্থী সঠিক নির্দেশনা ও টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারে না, তাদের নিয়ে কাজ করতে চান। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও সক্ষমতা উন্নয়নে কাজ করছে সংগঠনটি, এ জাতীয় কাজে আরও গতি আনতে চান। এবং জনসেবা ও সামাজিক কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়াতে চান বলেও জানা যায়।

সাংগঠনিক দক্ষতা মানবজাতির এক বিস্ময়কর শক্তি। যে কোনো সংগঠন গড়ে তোলে ব্যক্তি; কিন্তু ব্যক্তির চেয়ে অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায় সফল সংগঠন। ব্যক্তিগতভাবে যে কাজ করা যায় না, সংগঠিত হয়ে তা সহজে করা যায়। আত্মকেন্দ্রিক মানুষ কখনো সুখী হতে পারে না। তাই ব্যক্তিগত জীবন থেকে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক স্বভাব পরিহার করে সাংগঠনিক হওয়া দরকার। আর এসব কাজে নানান সমালোচনার মুখোমুখিও হতে হয়, সেসব সমালোচনা উপেক্ষা করে কাজ করে যেতে হবে বলে মনে করেন এই তরুণ সংগঠকরা। সেবামূলক কার্যক্রম করতে গিয়ে সেরা সংগঠক হিসেবে দুইবার পুরস্কার পেয়েছেন এসএম নূর ইসলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে