শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কেএনবি বৃত্তি নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় পড়ার অভিজ্ঞতা

আরেফিন ইসলাম সৌরভ
  ১২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

আমি আরেফিন ইসলাম সৌরভ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। আমি সবসময় দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। দেশের বাইরে পড়া, লক্ষ্য তৈরি করা, স্বপ্ন দেখা এসব বিষয়ে সুন্দর সুন্দর উক্তি পড়ে সময় কাটাতাম। যাই হোক, একদিন আমার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। আমি ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়া সরকারের কেএনবি বৃত্তি লাভ করি। বৃত্তির আবেদন থেকে শুরু করে সব কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে আমাকে সাহায্য করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স অফিস।

আমি এই ২০২১ সালে ইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছি এবং এখন আমি ইন্দোনেশিয়ার ইউনিভার্সিটাস আতমা জায়া ইয়োগায়াকার্তার একজন গর্বিত প্রাক্তনী (অ্যালামনাই)। নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়া এবং সেখানে সবকিছু মানিয়ে নেওয়া আমার জন্য কঠিন ছিল। তবে আমি এই বৈদেশিক শিক্ষাজীবনে অনেক কিছু শিখেছি।

এই বৃত্তি ইন্দোনেশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের 'ফুল ফান্ডেড' বৃত্তি হিসেবে দেওয়া হয়। কেএনবি ইন্দোনেশিয়া বৃত্তির আওতায় রয়েছে সম্পূর্ণ টিউশন ফি, আবাসন ভাড়া, বই ক্রয় বাবদ ব্যয়, বিমান ভাড়া এবং গবেষণা সংক্রান্ত ব্যয়। ইন্দোনেশিয়ার ১৬টি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেএনবি স্কলারশিপ দেওয়া হয়। বৃত্তিটি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় প্রোগ্রামের জন্যই দেওয়া হয়। এই বৃত্তির অধীনে ৩৫৭টি প্রোগ্রামে পড়ার সুযোগ রয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দ্বীপরাষ্ট্র। এখানে সাত শতাধিক আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। ইংরেজি এখানে সাধারণ ভাষা নয়। ইন্দোনেশিয়ান ভাষাতেই সবাই কথা বলে। ইন্দোনেশিয়ায় পা রাখার পর আমার প্রথম কাজ ছিল নতুন একটি ভাষা শেখা। প্রথম এক বছর আমি আমার ক্লাসে এবং পড়ালেখার অনুষঙ্গ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ান ভাষা শিখি। সন্দেহ নেই, এটি ছিল আমার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। যেহেতু এখানকার সাধারণ মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন না, তাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগের স্বার্থে আমি জানপ্রাণ দিয়ে ইন্দোনেশিয়ান ভাষা শিখেছিলাম। ভাষা শেখার এই ব্যাপারটা মোটেও সহজ ছিল না। তবে আমি খুব উপভোগ করেছি।

ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে একেবারেই ভিন্ন। একজন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হিসেবে আমাকে গবেষণাভিত্তিক পরিবেশের মধ্যে পড়ালেখা করতে হয়েছে। এখানে গবেষণা খাতে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে গবেষণার সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই বহন করে। গবেষণা ফান্ড নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তা করতে হয় না। বেশ কয়েকটি খ্যাতিমান জার্নালে আমার গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি কনফারেন্স কার্যক্রমে অংশ নিয়েছি। নিঃসন্দেহে এসব কাজ আমার সিভিকে সমৃদ্ধ করেছে।

একজন সাধারণ বাংলাদেশি হিসেবে বিদেশে বসবাসের পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। ফলে ভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও জীবনযাপন সম্পর্কেও আমার ধারণা ছিল না। আমি ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের ইয়োগায়াকার্তা শহরে বাস করতাম। এটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শহর হিসেবে পরিচিত। ইয়োগায়াকার্তা 'শিক্ষার্থীদের শহর' হিসেবেও পরিচিত। এখানে পড়ালেখার উদ্দেশ্যে বিশ্বের নানা দেশ থেকে নানা ভাষার, নানা ধর্মের, নানা সংস্কৃতির শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছে। ফলে শহরটি 'কালচারাল হাব' হিসেবে পরিণত হয়েছে।

কেএনবি বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের আলাদা গুরুত্ব ও সুযোগ-সুবিধা দেয় ইন্দোনেশিয়া সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যেমন- স্টাডি টু্যর, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট কোলাবোরেশন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভ্রমণ ইত্যাদি। এসব সুযোগ আমার ভাবনা ও চিন্তার জগৎকে বিস্তৃত করেছে। আমার অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করেছে।

ভ্রমণ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা। সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ দেশটির সম্পদ। ফলে সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকরা দেশটিতে এসে ভিড় করে। ২০১৭ সালে দেশটি পর্যটনর্ যাংকিংয়ে বিশ্বের ২০তম পর্যটনশিল্পের দেশ নির্বাচিত হয়েছিল। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের দ্রম্নত বর্ধনশীল পর্যটনশিল্পের দেশের মধ্যে ৯ম এবং এশিয়ার মধ্যে ৩য়। শিক্ষার্থীরা খুব কম খরচে ইন্দোনেশিয়ার দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকাগুলো ভ্রমণ করতে পারে।

সবশেষে আমি বলতে চাই, ইন্দোনেশিয়া আমাকে শুধু একটি শিক্ষাসনদই দেয়নি, আমাকে সারাজীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েছে। নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে বাড়াতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর উচিত এমন সুযোগ গ্রহণ করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে